মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও গলাকাটা দাম
এস আর শানু খান
🕐 ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২১
আমাদের দেশে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা শতকরা একশ’ ভাগ মানুষেরই রয়েছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর রিপ্রেজেন্টেটিভদের উৎপীড়নের কথা নাইবা বললাম। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে মুমূর্ষু রোগীর আহাজারি আর ওদিকে ওষুধ কোম্পানির লোকগুলো ডাক্তারের ভিতরে গিয়ে চা-কফির মজমা মেলান। ইমার্জেন্সি রোগীর ওষুধ আনতে বাইরে গেলেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি তোলার ঐতিহ্য আরও ভয়াবহ। আজ আমি ওদিকে যাব না।
আজ লিখব আমাদের ফার্মেসিগুলোর দিনে ডাকাতির গল্প। আমরা একটা ব্লেড কিংবা সুঁচ কিনতে গেলেও দরদাম করি। এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরি। অথচ একটা ব্লেডের দাম সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা আর সুঁচের দাম বড় জোর দুই টাকা। অথচ আমরা আমাদের মৌলিক পাঁচ অধিকারের একটা চিকিৎসা, এ ক্ষেত্রেই আমরা নানাভাবে ঠকছি। দেশের একটা দোকানেই ক্রয় করতে গিয়ে দামাদামি করার কোনো অবকাশ নেই। সেটা হলো ওষুধের দোকান। একদিকে ডাক্তার কমিশনের ওপর কমিশন খেয়ে রচনা লেখার মতো দুই পাতা ওষুধ লিখে দেন। আর সেগুলো নিয়ে বোবা কাকের মত গিয়ে ধর্না দিতে হয় ওষুধের দোকানগুলোতে। আর সেই সুযোগে ভদ্রবেশি ডাকাতগুলো পুকুর ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। যেটা আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষেরই চিন্তাভাবনার বাইরে এটা।
আমার বন্ধুর বাবা অসুস্থ হয়েছিল একবার। যশোরের বড় ডাক্তার দেখানো হয়েছিল তাকে। প্রথমবার ডাক্তার দেখিয়ে যশোর থেকেই আমরা ওষুধ কিনেছিলাম পাঁচ দিনের। এরপর এলাকায় এসে পাঁচ দিন পর আবার পাঁচ দিনের ওষুধ কিনতে গিয়ে অবাক হলাম আমি আর আমার বন্ধু। গ্রামের বাজারের পরিচিত দোকানের এমন ডাকাতি মেনে নিতে খুব কষ্ট হলো। এ হাজার টাকার ওষুধের দাম আমাদের বাজারের ফার্মেসিতে নিচ্ছে ১৪৮০ টাকা। এটা কি দিনে-দুপুরে ডাকাতি নয়! গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের এভাবে দিনের পর দিন ঠকিয়ে যাচ্ছে এই ফার্মেসিগুলো।
আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া প্রবাদটা যেন এই ফার্মেসি মালিকদের জন্যই উদ্ভব হয়েছিল। আমাদের মোড়ের একটা ওষুধের দোকানের গল্প আরও ভয়ানক। ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে নিজেও দোকান করে নিছেন। ভদ্র লোকটার স্লোগানই এমন যে, যেকোনো ওষুধের দাম উনি ২ টাকা বেশি নেন। যুক্তি এখান থেকে বাজারের ওষুধ কিনতে গেলে ৫ টাকা তো ভাড়াই লাগত।
সেখানে হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে তাহলে ২ টাকা বেশি দিতে আপত্তি কোথায়! ফার্মেসিগুলোর বেশিরভাগই অপরিকল্পিত। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের গোডাউন। ওদিকে মানুষের ওষুধের দোকানেই বিক্রি হচ্ছে পশুপাখির হরেক রকমের ওষুধ। যেগুলো ফার্মেসিওয়ালাদের সামান্য বেখেয়ালির জন্য বিশাল ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিতে পারে সুস্থ সবল অনেককেই। আসুন আমরা সচেতন হই। সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই, ওষুধ সেক্টরের এই অবাধ ডাকাতি রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
এস আর শানু খান : শিক্ষার্থী, বিবিএ (চতুর্থ বর্ষ), ব্যবস্থাপনা বিভাগ
সরকারি এম এম কলেজ, যশোর