আত্মহত্যা ও অনুরাগ
দেলোয়ার হোসেন
🕐 ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২১
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ যখন সুইসাইড করার চিন্তা করে তা বুঝতে পারি অথবা কেউ সুইসাইড করবে এমন খবর কারও কাছে শুনি তখন ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার কথা হয়। তার অবস্থান জানার চেষ্টা করি আর আশপাশে কে আছে এটা বুঝে উঠে কষ্টকর হলেও প্রাইমারি লোকেশন বের করার চেষ্টা করি।
এরপর তাকে বোঝাতে অক্ষম হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত মনোবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ফজিলাতুন্নেসা শাপলা ম্যামের কাছে ট্রান্স করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে ছাত্রউপদেষ্টা থাকলেও সবার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ওভাবে এই বিষয়টা নিয়ে ডিল করতে চায় না। কিন্তু শাপলা ম্যাম ব্যাপারটা যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দেখেন। নিরপেক্ষ স্থান থেকে ভেবে দেখার সময় এসেছেÑ কেন ঘটছে আত্মহত্যা। মোটা দাগে একে সামাজিক অবক্ষয় বলে চালিয়ে দেওয়া হলেও এই একটিই কি আত্মহত্যার কারণ? কারণগুলোতে একটু চোখ দিলে দেখা যাবে যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে এদের নিশ্চয়ই কোনো একটা কিছু ঠিকঠাক নেই। কিন্তু কী সেটা? কী সেই কারণ? বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণগুলোর মধ্যে পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত জটিলতা, রেজাল্ট, শিক্ষকদের দুর্ব্যবহার, বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা, মানসিক চাপ, তীব্র বিষণœতা থেকে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
তারা সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে অথবা তীব্র ঘ্রাণের হাসনাহেনা ফুলের পাপড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করে গিনেস এ নাম লেখাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যখন কেউ সুইসাইড এটেম্প নেয় তখন ওই মানুষটাকে দুনিয়ার সব থেকে অসহায় মানুষ মনে হয়। সে তার সব দুঃখবোধের জন্য নিজেকে দায়ী করে। ভাবে তার জীবনটা যেন ফুলদানিতে ভিজিয়ে রাখা বাসি ফুলের মতো। আর তাই জীবনটাই ফেলে দিতে চেষ্টা করে।
এত সুন্দর জীবটাকে যখন কেউ এভাবে ফেলে দিতে চেষ্টা করে তখন তার দুঃখের লেভেলটা বুঝতে হবে। যারা কাজটা করতে চেষ্টা করে ওরা তখন পরিবার, বন্ধুবান্ধব আর কাছের মানুষের আচরণ ও তাদের অবস্থান এবং অস্তিত্ব ভুলে যায়। পুরোপুরি ভুলে না গেলেও ভুলে যাওয়ার একপ্রকার অভিপ্রায় নিয়ে এরা সময় কাটায়।
সুইসাইডের এমন কেস খুব বেশি না হলেও মাসে দুই থেকে তিনটা আসে আমার হাতে। এর মধ্যে কেউই কাউন্সিলিং পাওয়ার পর আর আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেনি। চায়ের কাপে ঠোঁট রেখে সুন্দর জীবনের স্বাদ নিতে শিখেছে। জীবন সুন্দর, আর এই সুন্দরের নান্দনিকতাটা ওদের বোঝাতে হবে আমাদের। জীবনের একটা অংশ হচ্ছে মন ও মানসিক অবস্থা। এই মন-এর দর্শনটা ফুটিয়ে তোলা প্রয়োজন সব শিক্ষার্থীদের মাঝে।
দেলোয়ার হোসেন
শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়