করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে করণীয়
মু’তাসিম বিল্লাহ মাসুম
🕐 ১২:১৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৮, ২০২১
করোন মহামারী সমগ্র বিশ্বের জন্য আতঙ্কের নাম। বিশ্বের সকল দেশ এবং অঞ্চলে এ ভাইরাসের বিস্তার। এমনকি বাদ যায়নি মানবশূন্য মহাদেশ নামে পরিচিত অ্যান্টার্টিকাও। করোনাভাইরাস শনাক্তের এক বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের কত শত নাটকীয়তা যে দেখেছে বিশ্ব তা নির্ধারণ করা দায়।
কখনো ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে, কখনো অঞ্চলভেদে লক্ষণের তারতম্য দেখা দিয়েছে, কখনো আবার বিভিন্ন রূপে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশ ও করোনা সংক্রমিত এলাকাভুক্ত এবং সংক্রমণ ও মৃত্যুতে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে। মার্চের পর গত বছরের প্রায় সমস্ত সময় চলে এই ভাইরাসের তা-ব। অতঃপর সরকারি মহল এবং অন্যান্য বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে মানুষকে কঠোরভাবে করোনা শিষ্টাচার মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্বস্তির বিষয় হলো, এ কঠোরতা বিফলে যায়নি। অন্তত সরকারি নিয়মের ভয়ে বা প্রশাসনের কড়াকড়িতে মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার, স্যানিটাইজার, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদি ব্যবহার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেকাংশে নিম্নগামী হয়। যেখানে ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে দৈনিক সংক্রমণের হার ছিল প্রায় চার হাজারের বেশি, সেখানে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সে সংক্রমণের হার শতকের অংকে নেমে আসে। এভাবে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাসে শেষ হলো ২০২০ সাল।
২০২১ সালের শুরুটাও ছিল কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকার মতো। কিন্তু সে স্বস্তির সুবাতাস দীর্ঘায়ু লাভ করল না। মাত্র তিন বা চারটা মাস যখন সংক্রমণ কিছুটা কমে গেল তখন সকলের বেখেয়ালিপনা হলো আবার পূর্বের ন্যায়। যার মাশুল দিতে হচ্ছে আজ আবার সংক্রমণ আর মৃত্যুর ঊর্ধ্বমুখীতার মাধ্যমে। এই সুর ধরেই বলতে চাইÑ বাংলাদেশে আবার করোনার ভয়ঙ্কর রূপে সম্মুখীন, আজ দ্বিতীয় ওয়েভে। তবে বাংলাদেশে যে করোনা সংক্রমণের হার পূর্বের তুলনায় বর্ধিত, সে খবর রাখে না অধিকাংশ বাঙালি। অথচ গত সাত দিনের সংক্রমণের গড় প্রায় ৫ হাজারের বেশি।
এমন পরিস্থিতিতেও নেই মাস্ক পরার প্রবণতা বা অন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যথেষ্ট আগ্রহ। গণপরিবহনগুলোতে সকলের অবাধ যাতায়াত চলছে। কিন্তু আমাদের এটাও জানা থাকা জরুরি, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর মতো সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেলে দেশের পথ-ঘাটে হয়তো বিক্ষিপ্তভাবে মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যাবে। তাই আগে থেকেই সকলের সচেতনতা জরুরি। করোনাভাইরাসের এ নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ ক্ষতির আশঙ্কা সম্পর্কে সচেতন করতে সরকারি মহলের কার্যকরী ভূমিকা দরকার।
পাশাপাশি সকলের জন্য মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারি মহলের পাশাপাশি বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। তারাও তাদের বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতার পাশাপাশি ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতে পারে। এছাড়াও ব্যক্তিকেন্দ্রিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে। এভাবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।
মু’তাসিম বিল্লাহ মাসুম
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা