ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আমাদের জাতীয় পতাকা দিবস

কাজী সুলতানুল আরেফিন
🕐 ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০২, ২০২১

আমাদের জাতীয় পতাকা দিবস

২ মার্চ আমাদের জাতীয় পতাকা দিবস। একটি নতুন দেশ জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের পরিচয় হিসেবে একটি জাতীয় পতাকারও জন্ম হয়। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন হওয়ার আগেই আমরা জাতীয় পতাকা পেয়েছিলাম। জাতীয় পতাকা লাল সবুজের সংমিশ্রণে আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। সবুজে ঘেরা এই প্রকৃতির লীলাভূমি লাল রক্তে রঞ্জিত করে আমাদের পতাকা মুক্ত বাতাসে নিজের পাখা মেলে উড়েছিল। এই পতাকা একটি জাতির কাছে সম্মানের দিক থেকে সবচেয়ে উঁচু স্থান দখল করে থাকে। আমরা বাঙালি জাতি এই লাল সবুজের পতাকা নিয়ে গর্ব করি। তাই তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের প্রাণের প্রিয় এই লাল সবুজের পতাকা পতপত করে উড়তে দেখলে আমাদের হৃদয়ে শিহরণ জেগে ওঠে।

বাংলার জাতীয় পতাকার ডিজাইনার কামরুল হাসান। নামটি প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু কামরুল হাসান সম্পর্কে পর্যাপ্ত ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা নেই। তবে মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার ডিজাইনার ছিলেন শিবনারায়ণ দাস। আমাদের পতাকার অনুপাত ১০:৬ বা ৫:৩। ইতিহাস থেকে জানা কিছু স্বল্প তথ্য তুলে ধরলাম। ১৯৭১ সালে ২ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। একটি স্বাধীন দেশের পরিচয় বহন করে একটি পতাকা। সে হিসেবে এই বাংলার মুক্তিকামী মানুষ একটি স্বাধীন পতাকার স্বপ্ন দেখতেন। দুঃসাহসী কাজটি করেন বাংলার বীর আ স ম আব্দুর রব। তিনি সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার এক ছাত্র সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেদিন শত শত ছাত্রের রক্ত টগবগিয়ে উঠেছিল। স্বাধীনতার এক উত্তাল শিহরণ বয়ে গিয়েছিল সকলের প্রাণে। তাই এই ২ মার্চকেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিবস ধরা হয়। তবে ৩ মার্চ ১৯৭১ জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সর্বপ্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে শাজাহান সিরাজ। স্থান ছিল ঢাকা পল্টন ময়দান। আবার বঙ্গবন্ধু নিজেও ২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে ধানমন্ডিতে নিজের বাস ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

বিদেশি মিশনে সর্বপ্রথম ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে ভারতের কলকাতায় আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দেশে সাধারণত স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বিপ্লব ও সংহতি দিবস এবং সরকার কর্তৃক ঘোষণাকৃত যেকোনো দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। আর এই জাতীয় পতাকা বাসভবন থেকে শুরু করে যেকোনো পরিবহনে ব্যবহার করতে পারেন শুধু প্রধানমন্ত্রী আর রাষ্ট্রপতি। তবে শুধু বাসভবনে পতাকা উত্তোলন করতে পারেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীগণ, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন কেউ। এ ছাড়াও বিদেশে বাংলাদেশী কূটনীতিক এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানগণ নিজ বাস ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারেন। বাংলাদেশে ১০টি পদ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ গাড়ি বা জলযানে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদ মর্যাদাসম্পন্ন কেউ। এ ছাড়াও বিদেশে বাংলাদেশি কূটনীতিক গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারেন।

আসুন, জেনে নিই জাতীয় পতাকার সঠিক মাপ এবং ব্যবহারের নিয়ম।

১. পতাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের আয়ত ক্ষেত্রের মাঝখানে একটা ভরাট রক্তিম বৃত্ত নিয়ে এটা তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। পতাকার মাঝখানের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যরে ৫ ভাগের একভাগ।
২. পতাকা টানানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে এটি এমন জায়গায় টানানো না হয় যাতে এর মান অক্ষুণœ হয়।
৩. পতাকা দিয়ে মোটরযান, রেলগাড়ি অথবা নৌযানের খোল, সম্মুখভাগ অথবা পেছনের অংশ কোনো অবস্থাতেই ঢেকে দেওয়া যাবে না
৪. যেসব ক্ষেত্রে কেবল দুটি পতাকা অথবা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ভবনের ডানদিকে উত্তোলন করা হবে। ৫. বাংলাদেশের পতাকার উপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
৬. যে ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ একত্রে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ প্রথমে উত্তোলন করতে হবে এবং নামানোর সময় সবশেষে নামাতে হবে। ৭. যে ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অর্ধনমিত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে এবং অতঃপর নামিয়ে অর্ধনমিত অবস্থায় আনা হবে। ওই দিবসে পতাকা নামানোর সময় পুনরায় উপরিভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে, অতঃপর নামাতে হবে। ৮. পতাকা কোনো ব্যক্তি বা জড় বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না। ৯. পতাকা কখনই তার নিচের কোনো বস্তু যেমন- পানি বা কোনো পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করবে না। ১০. পতাকা কখনই আনুভূমিকভাবে বা সমতলে বহন করা যাবে না, সর্বদাই ঊর্ধ্বে এবং মুক্তভাবে থাকবে। ১১. পতাকাকে কখনও পদদলিত করা যাবে না। ১২. কোনো কিছু গ্রহণ, ধারণ, বহন বা বিলি করার জন্য ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাবে না। ১৩. ‘পতাকা’ দ্রুত উত্তোলন করতে হবে এবং সম্মানের সঙ্গে নামাতে হবে।
১৪. পতাকার অবস্থা যদি এমন হয় যে, তা আর ব্যবহার করা যাবে না, নষ্ট হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে, বিশেষ করে সমাধিস্থ করে নিষ্পত্তি করতে হবে।
কিছু কিছু বিশেষ দিনে আমাদের দেশে জাতীয় পতাকা পুরোপুরি উত্তোলন করতে হয়।
নিম্নবর্ণিত দিবস এবং উপলক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারি ও বেসরকারি ভবনসমূহে এবং বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনস্যুলার পোস্টসমূহে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হয়- ক. মহানবীর জন্ম দিবস (ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী), খ. স্বাধীনতা দিবস, গ. বিজয় দিবস, ঘ. সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোনো দিবস। কিছু কিছু বিশেষ দিনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখার বিধান রয়েছে। ক. শহীদ দিবস (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস), খ. জাতীয় শোক দিবস, গ. সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোনো দিবস। আসুন, জাতীয় পতাকাকে মন থেকে ভালোবাসি এবং সম্মান করি। প্রতিটি নাগরিক এই জাতীয় পতাকা হৃদয়ে এঁকে রাখি। এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জেনে রাখি। পতাকার সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরি এবং সম্মানের উঁচু স্থানে রাখি।

কাজী সুলতানুল আরেফিন : সাহিত্যিক, ফেনী
[email protected]

 
Electronic Paper