ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মানবতার আলোকশিখা শেখ হাসিনা

ইলা মুৎসুদ্দী
🕐 ১২:৪০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১

মানবতার আলোকশিখা শেখ হাসিনা

কনরাড হিলটন বলেছেন, সফল মানুষরা কাজ করে যায়। তারা ভুল করে, ভুল শোধরায় কিন্তু কখনো হাল ছাড়ে না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এরকম মানবিক ব্যক্তিত্ব। একজন মানুষ নিজম্ব চিন্তা-চেতনা, প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে আজ তিনি সকলের প্রিয় আপনজন, নিকটাত্মীয়, পরম মমতাময়ী একজন। যিনি এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বে খুবই মর্যাদাবান একজন মানুষ। বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ হয়ত ক্ষুদ্র একটি দেশ হিসেবে পরিগণিত কিন্তু বৃহৎ হৃদয়ের মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে তিনি বিশ্বে একটি পরিচিত মুখ। একটা সময় ছিল যখন বাইরের দেশে বাংলাদেশ নামটা খুবই অবজ্ঞার সঙ্গে উচ্চারিত হত। এখন বাংলাদেশ মানেই শত সংগ্রাম প্রতিকূলতা পায়ে দলে উন্নয়নের অগ্রয়াত্রায় এগিয়ে যাওয়ার আরেক নাম। এরকম একজন দেশনেতার আবির্ভাব না হলে হয়ত আমরা এরকম সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পেতাম কিনা সন্দেহ। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান। বঙ্গবন্ধুর মুখ দিয়ে উচ্চারিত এক একটি শব্দ যেন পথের দিশারী ছিল। দেশের আপামর জনসাধারণ তন্ময় হয়ে শুনত বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কথা। যার কারণে বঙ্গবন্ধুর একটি আওয়াজে বাংলার ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে উঠেছিল।

প্রধানমন্ত্রী কীভাবে মহৎ হৃদয়ের অধিকারী? এককথায় যদি বলি যখন লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে এসেছিল, তখন কিন্তু একবারের জন্যও তিনি তাদের চলে যেতে বলেননি, আসতেও বাধা দেননি। বরং তাদের আবাসন থেকে শুরু করে সকল মৌলিক চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হয়েছেন। চেষ্টা করেছেন, কীভাবে তাদের ভালো রাখা যায়। তাদের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে আবাসন তৈরি করেছেন। কত বড় মহৎ হৃদয়ের অধিকারী হলে এরকম কাজ করতে পারেন। যেখানে অন্যান্য দেশ (যারা সব দিক দিয়ে সমৃদ্ধশালী) রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে সচেষ্ট, সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এটা অনেক বড় দৃষ্টান্ত। নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন নিরাপদে থাকার জন্য। পাশাপাশি তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েও যা অনেকেই করতে পারে না, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছেন মানবতা আর মানবিকতা থাকলে স্বল্প কিছু দিয়েও অনেক কিছু করা সম্ভব। এরকম মানসিক জোর তার আছে বলেই সবদিক দিয়ে জয়ী হয়ে চলেছেন নিরন্তর। মুজিববর্ষ উপলক্ষে হিজড়া জনগোষ্ঠী যারা সমাজে নিতান্তই অবহেলার শিকার তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২০ জন হিজড়াকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ধোপাকান্দি গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। একইভাবে দিনাজপুর ও জামালপুরেও হিজড়াদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে ভূমিহীন দরিদ্র মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে পাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে। আরও এক লাখ পরিবারকে একইভাবে ঘর দিয়ে পুনর্বাসন করা হবে। তিনি ক্ষমতায় আসার পর বয়স্করা (যারা খুবই বৃদ্ধ, অসহায়) তারা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। বিধবারাও ভাতা পাচ্ছেন। তার উপর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। অনেক বয়স্ক লোক এবং বিধবা আছেন, যারা এই ভাতা পেয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। আনন্দে তাদের চোখে জল এসে যায়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার ভূমিকা অগ্রগণ্য। একারণেই প্রতিবছর জানুয়ারী মাসের ১ তারিখে বাংলাদেশের ষ্কুল শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে নতুন বইয়ের সেট। যে বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে বছরের প্রথম দিনটির জন্য। গ্রাম পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়াতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হয়। উপবৃত্তির টাকা যাতে যথাযথভাবে অভিভাবকের নিকট যথাসময়ে পৌঁছায় তার জন্য বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়। পঞ্চম, অষ্টম, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মেধা অনুসারে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এই বৃত্তির টাকাও যাতে শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে পায় সেজন্য সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা প্রদান করে থাকে। প্রধানমন্ত্রী যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বিশ্ব দরবারে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে। শুধু দৃঢ় মনোবল আর দুরন্ত সাহস নিয়ে তিনি পদ্মা সেতুর কাজ আরম্ভ করেছিলেন নিজেদের অর্থায়নে। বিশ্ব ব্যাংক যখন মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল তখন একমাত্র জননেত্রীর অদম্য সাহসই বাস্তবায়ন করলো পদ্মা সেতু। এত এত কাজের মধ্যে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব বুঝতে পারছি না।

দেশের প্রতিটা সেক্টরে প্রধানমন্ত্রীর নজরদারি আছে। এই বছর মহামারী কোভিডের কারণে যখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না, লকডাউনের কারণে মানুষের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে নিম্নশ্রেণির মানুষরা যখন মানবেতর জীবন যাপন করছিল, যেরকম দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছিল সেই মহামারীর কবল থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং গ্রামাঞ্চলে যেভাবে ত্রাণ বিতরণ করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ঈদের পূর্বে বিকাশের মাধ্যমে নি¤œ মধ্যবিত্ত ও অসহায় মানুষদের ত্রাণ হিসেবে নগদ টাকা প্রদানের বিরল দৃষ্টান্তও সূচিত হয়েছে। অসম্ভব মেধাশক্তিসম্পন্ন মানুষের পক্ষেই সবদিকে নজর দিয়ে সুচারুরূপে কাজ করা সম্ভব হয়। এই মহামারীর মধ্যে আবার আঘাত হানল আম্ফান। সেই আম্ফান মোকাবিলায়ও তিনি দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রাখলেন। পূর্ব প্রস্তুতির কারণে অনেক ক্ষতি থেকে রেহাই পেল বাংলাদেশ। অবশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানা বাংলাদেশে সবসময়ই হয়ে থাকে। শুধু তিনি একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, তিনি একজন লেখক, সংস্কৃতিমনা মানুষও বটে। এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অনেক সঙ্গীত শিল্পী, অভিনয় শিল্পীর সাহায্যার্থে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।

যে কোন উন্নয়ন কাজে তার অবদান অপরিসীম। কামনা করি, আমাদের প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন এবং বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড যতদিন এই পৃথিবীর বুকে থাকবে ততদিন মানবকল্যাণে তার অবদান স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত থাকুক। আরও একটি কথা না বললেই নয়, পৃথিবীর মানচিত্রের বুকে বাংলাদেশ হয়ত ছোট্ট একটি স্থান দখল করেছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এক একটি বৃহৎ মানবিক কাজের জন্য বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ সবসময়ই উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আলোকোজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

ইলা মুৎসুদ্দী : কলাম লেখক ও প্রাবন্ধিক

 
Electronic Paper