ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খেলাধুলাও প্রয়োজন

আনোয়ারা নীনা
🕐 ৯:৩০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮

A sound mind in a sound body অর্থ- ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন’। শিক্ষণীয় বিষয় বস্তু আয়ত্ত করা এবং অনুধাবন করার জন্য আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উপযুক্ত পরিবেশ অর্থাৎ দেহ, মন এবং আত্মিক বিকাশের জন্য পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।

শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। একজন ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশই পরিপূর্ণ শিক্ষা। পুঁথিগত বিদ্যা কোনোদিনই ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ মানুষ করতে পারে না।
গ্রিক সভ্যতায় শিক্ষা ছিল শিশুর পূর্ণ বিকাশের অনুকূলে। তাদের শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়, ‘It was grammatical for the mind and soul gymnastic for the body and oratory for rationalistic’ অর্থাৎ মনের জন্য সৃজনধর্মী শিক্ষা আর দেহের জন্য ব্যায়াম এবং যুক্তিবাদী হওয়ার জন্য বাগ্মিতা অপরিহার্য। আমাদের দেহের অস্থি, মাংসপেশি ও অন্য অঙ্গের সুষম বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন পরিমিত ব্যায়াম।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এবং চারুকারুকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বাগত জানাই। কিন্তু পাঠ্যবইটি মাধ্যমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। তারপর আর কোনো পাত্তা নেই। তবে কি খেলাধুলা, ব্যায়াম, মননশীল বিকাশ, শারীরিক বিকাশ শুধু মাধ্যমিক পর্যায়েই প্রয়োজন? তারপর আর প্রয়োজন নেই, এটা বলা তো সমীচীন নয়। আর তাই বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েও পেল না, যা খুবই দুঃখজনক।
বলাবাহুল্য, শহরের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করার সুযোগ পায় না। পড়ালেখার চাপে কোণঠাসা হয়ে আছে তারা। যেভাবেই হোক এ প্লাস তো পেতেই হবে, খেলাধুলার সনদ তো কোথাও চাওয়া হয় না। খেলাধুলা জানে কি না তাও তো জানা হয় না। কাজেই সব অভিভাবকের প্রত্যাশা একটা এ প্লাস। যে সময়টা তাদের খেলাধুলার সে সময়টা কাটাতে হয় কোচিংয়ে বা প্রাইভেট টিউটরের সামনে বসে। এমনকি বাসায় মায়েরা রান্না করার সময়টাও পাচ্ছে না। সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার সবই করতে হচ্ছে কোনো ফাস্টফুডের দোকানে বা রেস্টুরেন্টে।
স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা বইটি সব বইয়ের নিচে। পরীক্ষায় লিখতে হয় না, কোনো কোচিংয়েও বইটি পড়ানো হয় না। ধারাবাহিক মূল্যায়নে নম্বর প্রদান, সে তো আমরা শিক্ষকরাই বুঝি না। কারণ এর কোনো নির্দেশনা নেই বললেই চলে। শিক্ষকরা তো নম্বর কিনে আনবে না সুতরাং দিতে কৃপণতা করার কি আছে? কিন্তু শিক্ষাবান্ধব এই সরকার কেন বইটি পাঠ্য করলেন তা আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক কেউ-ই একবারও ভেবে দেখিনি।
গ্রামীণ পরিবেশে মেয়ে একটু বড় হয়েছে তো ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। ছেলেরা কিছুটা সময় পেলেই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। অনেকেই ভাবেন, থাকুক ঘরেই, কারণ বাইরে গেলে খারাপ হয়ে যাবে। তা ছাড়া সবারই তো কোনো না কোনো আত্মীয়স্বজন শহরে থাকে, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তা না হলে তো সেকেলে হয়ে যাবে।
প্রাইমারিতে সবারই কিছুটা সময় হলেও খেলাধুলায় কেটেছে। অবশ্য কারও যদি দু-চারটা সনদ খেলাধুলায় থেকেও থাকে তো কোথায় আছে জানা নেই। কারণ, চাকরিক্ষেত্রে তো এসবের কোনো দরকার নেই। রেজাল্ট কি সেটাই বড় বিষয়। কিন্তু এ প্লাস পেতে হলে যে শিক্ষার্থীর দেহ-মন সুস্থ থাকা দরকার সেটা শিক্ষকরা ভাবলেও অভিভাবকরা প্রয়োজন মনে করেন না। যে শিক্ষক এসব নিয়ে ভাবেন, কথা বলেন তিনি ভালো শিক্ষক না।
সরকার যে কোনো মাধ্যমেই হোক, বছরে দুইবার খেলাধুলার ব্যবস্থা করেছেন। একটা হলো গ্রীষ্মকালীন অন্যটা শীতকালীন। এতে রয়েছে ফুটবল, ভলিবল, কাবাডি, সাঁতার, হ্যান্ডবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন। ছেলে এবং মেয়ে প্রত্যেকের জন্য একই খেলা প্রযোজ্য। কিন্তু আমরা খেলোয়াড় পাব কোথায়? শহরের যারা তারা তো ফাস্টফুড খেয়ে খেলাধুলা করার অবস্থায় নেই। তাদের তো খেলার প্রশ্নই আসে না। আর যারা গ্রামে তারা ফুটবল খেলবে, তাও আবার মেয়েরা! অভিভাবকের মাথায় বাজ। বল খেললে এই মেয়েকে তো বিয়েই দিতে পারব না। তাই এই খেলাগুলোতে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেকাংশে কম। যেটুকু অংশগ্রহণ তা শিক্ষকদের অনেক পরিশ্রমের পর সম্ভব হয়েছে। এ কারণে খেলতে গিয়ে যদি ওই মেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে শিক্ষকের রফাদফা করে শেষ। তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও সরকারের জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক প্রধানদের কাছে কিছু সুপারিশ পেশ করছি-
১. যেসব শিক্ষার্থী খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকসহ আর্থিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা।
২. চিকিৎসার জন্য বিশেষ ফান্ডের ব্যবস্থাকরণ।
৩. শুধু পুরস্কারের জন্য ট্রফি বা ক্রেস্ট না দিয়ে উৎসাহ দেওয়ার জন্য অন্য পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৪. খেলাধুলায় প্রাপ্ত সনদ পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন করা।
৫. স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া।
৬. উপজেলা পর্যায় থেকে যারা জেলা পর্যায়ে খেলতে যাবে তাদের আর্থিক সুবিধা দেওয়া।
৭. অভিভাবকদের আগ্রহী করার জন্য সরকারিভাবে মোটিভেশন প্রদান করা।
৮. ইকঝচ-এর মতো আরও প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা।
৯. খেলাধুলায় রেফারির সিদ্ধান্ত না দিয়ে কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়া।
১০. অভিজ্ঞ শিক্ষক বা ব্যক্তি দিয়ে খেলা পরিচালনা করা। এখানে অভিজ্ঞ বলতে শুধু খেলাধুলায় পারদর্শী বুঝানো হয়নি। সৃজনশীল এবং সুস্থ মন-মানসিকতার কথা বুঝানো হয়েছে। দেখা যায়, অনেক সময় অনেকে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কোনো এলাকার পক্ষপাতিত্ব করেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের দূরে রাখা। কারণ, এতে শিক্ষার্থীর মন ভেঙে যায়।

আনোয়ারা নীনা : প্রধান শিক্ষক
হালিমুন্নেছা চৌধুরানী মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
ভালুকা, ময়মনসিংহ।

 
Electronic Paper