ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সম্পর্ক এমনই!

রায়হান উল্লাহ
🕐 ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮

সময় গাঁথা সম্পর্কে, বিশ্ব সভ্যতা ছুঁয়ে। মানুষ ছুটে চলে সামাজিক হয়ে। পারস্পরিক সম্পর্কের বিনির্মাণে। সম্পর্ক হাসে-কাঁদে। সম্পর্ক রক্ষা হয়। কখনো সখনো কষ্ট হয়। এভাবেই জলের গতিরেখা ধরে এগোয় প্রাণ। সভ্যতা ও সম্পর্কের সুর ধরে। বিশ^ময় জ্ঞান সম্পর্ক ধরে বেহাগ তুলে। তার মাঝে আছে সুখ-হাসি। মাঝে সাজে সম্পর্কের সুর কাঁদে।

একান্ত শিশুবেলায় হামাগুড়ি খাওয়াই একটি শিশুর বাস্তবিক সুখ। মাটির সম্পর্ক ধরে এগিয়ে চলা। পড়শির উঠোনে পড়ে যাওয়া। ক্রমশ মাটির টানে উঠতে গিয়ে পড়ে ফের ওঠা। মাটিময় সময় ছুটে চলে। বিগত ক্ষণ ফিকে হয়। বাকিটা সময় চলে, সময়ের সম্পর্কে। শিশুটি খুঁজে ফেরে শৈশব; আজীবন। কখনো তা আর ফিরে আসে না। সম্পর্ক ফিকে হয়। কষ্টের সানাইয়ের সুরে।
মায়ের গর্ভ হয়ে মৃত্যুযাপন পর্যন্ত প্রতিটি প্রাণী সম্পর্ক ধরে এগোয়। পারস্পরিক সহায়তার সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলে। সময়ের গতিতে নিজেকে রেখে ভাবনাদের খেলা দেখায়। প্রায়শই দেখা যায়, সুখের হাতরা থাকে না। সুখ নিতে আসে না। সে ঠিকই সুখ দিয়ে বেড়ায়, নানা জনে। সম্পর্ক রক্ষা হয় না।
প্রাণী সময়ে সময়ে প্রেমে পড়ে। কোনো সূত্র না মেনেই। সূত্রের নিয়ন্তার খোঁজে। এ খোঁজাখুঁজির বেলায় মা তার দৃষ্টির আড়ালে গেলে কান্না পেত। এখন মা দূর সীমারেখায়। সম্পর্ক গুমড়ে কাঁদে। যে খেলার সাথী তার দুরন্ত দিনগুলোকে রঙিন করত সে কোথায়? জানে না সে। সুখেরা অন্য আকাশে। সম্পর্ক কাঁদে। শৈশবের মক্তব হয়ে বহুতল অফিসে সম্পর্কেরা বুনন হয়। সময়ের গতিময়তা সম্পর্ক হয়ে গুমরে মরে।
প্রাণ দেখে সে জীবনের নানা মোড় পেরুচ্ছে। এর মাঝে সম্পর্কের ঘোড়া লাগামহীন ছুটছে। ক্রমশ কেউ কেউ হারিয়ে যাচ্ছে। কখনো সে আর ওইভাবে ফিরে আসছে না। সময়ের তরঙ্গে সব ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সম্পর্ক ক্রমশ নতুন হয়ে ধরা দিচ্ছে। পুরনো তাল-লয় কিছুই মানছে না। আপনজনরা কোথায় কোথায় পাঠ নিচ্ছে জীবনের; বাস্তবতার। এর মাঝেই অনেক সম্পর্কেরা থেমে যায়। অজানার ঘরে বসত করে। আর কখনো তারা ফিরে আসে না। মুখের রেখায় সবকিছু ত্রিকোণমিতি হয়ে ধরা দেয়।
প্রাণ দেখে সময়ের চক্রে সে নিজেই প্রতিনিয়ত নতুন হয়ে ধরা দিচ্ছে। প্রতিমুহূর্তের আমি হয়ে। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে সে। সম্পর্কের সুর ধরে সে খুঁজে ফিরে সব। নিজেকে, নিজের সুখের উপকরণকে। ক্রমশ অনুষঙ্গ হয় ভিন্ন কিছু। কৈশোরের খেলার সরঞ্জাম তাকে কাঁদায়। মক্তবের কোরআন তাকে ডাকে। নামাজ শেখানো হুজুর তাকে হাতছানি দেন। গ্রামীণ ফজরের আজান সময়ের কান্না হয়ে তার হৃদয়ে বেহাগের সুর তোলে। স্কুল বেলার বাংলা বন্দনা তার সময়ের ভাবনা হয়। স্কুল ড্রেস সুর তুলে কাঁদে। একান্ত প্রিয়তমা সুর তুলে সময়ের কান্না হয়ে ডাকে-কোনো কিছুই আগের মতো নেই, ভাল্লাগে না। প্রথম ছুটির দিনে তার টোলপড়া গালে এমন কথারা খেলে না। তার খবর নেওয়া হয় না; নাগরিক-জাগতিক সম্পর্কের বেলায়। তবুও বড় বেশি কাঁদায় সম্পর্ক। হারানো সময়-শৈশব। গোল্লাছুট-মার্বেল সময়ের স্রোতধারায় রয়ে যায়। স্মৃতিময় সংসারে কী যেন নেই।
ব্যক্তি, গোত্র, দল, সভ্যতা ও সময় পেরিয়ে সম্পর্ক সীমাহীন। সব সম্পর্ক নতুন নতুন ঢেউ খেলে বয়ে যায় মেঘনা-তিতাসে। কৈশোরের খেলনাওয়ালা আর না এলেও; আসেন নাগরিক মুড়িওয়ালা। রবীন্দ্রনাথ খেয়ার তরী না ভাসালেও ভাসান ইন্দ্রনাথ। দুখু মিয়ার বিদ্রোহ কিংবা কৈফিয়ত নতুন কোনো কবির হৃদয়ে ছুঁয়ে যায়। জোসনার বানে ভেসে যায় সময়। কিন্তু তা দেখেন না হুমায়ূন। পূর্ণিমার চাঁদ কেমন দেখা হয় না সুকান্তের। অথচ প্রজন্ম ধরে প্রজন্ম আসে। সময় নানা বাঁকে হাসে-কাঁদে, সম্পর্কের সীমাহীনতায়।
এভাবেই সম্পর্কেরা বিশ্বময়। খোঁজাখুঁজির হল্লায়, সময়ের কান্না হয়ে। সম্পর্কেরা ফিকে হয়। অসীম ক্ষমতার অধিকারী কেউ আচমকাভাবে-সম্পর্কেরা মানুষেরা কোথায়? আজ এই সুখ যেন ভীষণ অসম্ভবেও তাদের ছুঁয়ে যায়। বিশ্বময় আলোড়ন তোলা খুদে এক সত্তাভাবে-তার সত্তাদের যদি দেখানো যেত এমন দিন। ভাবনারা সুখী হয়-তারা দেখছে ভেবে। তবুও চলে সম্পর্কের খোঁজ। সুখেরা তাদের ঘরে যায়। ফিকে হয়েই চিত্রকলার রূপ নেয়। তবুও চিত্রকলা। শিল্পীর সম্পর্ক, শিল্পের সম্পর্ক। সম্পর্ক ও শিল্প যেন যমজ বন্ধু, যমজ ভাই। তারা আগুনে ঘুমায়, আগুনে খায়।
সময় তার চিরন্তন পাঠে বলে-ছুটছে সে। তাই সবকিছুই মুহূর্তে অতীত। কীসের ভাবাভাবি, শব্দের সন্ত্রাস। সময়ের সম্পর্ক সময়েই এগুচ্ছে। পাঠ থেকে যাচ্ছে। সভ্যতার খোঁজ পড়ছে। গাঁথা রয়ে যাচ্ছে। অক্ষরের সম্পর্ক। পাঠে একটু ফিকেই হয়। এভাবেই সময়ের সম্পর্ক।
পরম ভাবনার আপেক্ষিকতায় সম্পর্ক দৃষ্টির সীমানায় দিগন্ত হয়। রাতের আকাশ হয়ে ঝোলে বারান্দায়। ভাবনার কার্নিশে তুমি এসে মিলিয়ে যাও। ফিকে ক্ষণ বলে তবুও কিছু ছিল, তুমি ছিলে, আমি ছিলাম। এমনিভাবে সবাই ছিল। একদিন আমরা সবাই ছিলাম। ভালোবাসার যৌথ খামার ছিল। সম্পর্কের সুখ ছিল। ভাবনাদের উদ্ধতা ছিল। তবুও কিন্তু সম্পর্ক ছিল। সবাই সবার তরে ছিল। মানুষ হয়ে সভ্যতা ধরে সময় ছুঁয়ে জীবনের; সবার জন্য ভাবনা ছিল। সম্পর্ক এমনই।

রায়হান উল্লাহ : কবি ও সাংবাদিক।
[email protected]

 
Electronic Paper