শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি কেন
আয়েশা সিদ্দিকা
🕐 ৩:০৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
বাবা-মায়ের স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তান দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়বে, ভালো চাকরি করবে, বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হলো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম, যা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। হাজারো স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তাদের চোখে-মুখে থাকে বারুদের মতো তীব্র রূপ। আর সেই রূপই তাদের নিয়ে যায় স্বপ্নের ক্যানভাসে। কিন্তু সেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় যখন স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি করে তখন ভেঙে যায় হাজারো স্বপ্ন, ভেঙে যায় হাজারো বাবা-মায়ের আকাক্সক্ষা, বৃথা হয়ে যায় হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবারের সারা জীবনের শ্রম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে চলে সেই স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। ২৫ মাসেও অনুষ্ঠিত হয়নি এই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা। একটা স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউট তার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে পারছে না, এই ব্যর্থতা কার?
সেশনজট কোনো শিক্ষার্থীরই কাম্য নয়। একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখা শেষ হতে যদি ৭-৮ বছর লেগে যায়, তাহলে সেই শিক্ষার্থী কীভাবে দেশের, সমাজের, পরিবারের ও নিজের স্বপ্ন পূরণ করবে? এই প্রশ্ন চবির আইইআর বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীরই। চবির এই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা মেলে সেই করুণ আকুতির। তিনি লেখেন, আমার সেশন ২০১৭-১৮। ভর্তি পরীক্ষায় বি ও ডি উভয় ইউনিটেই উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। কিন্তু পছন্দের সাবজেক্ট ছিল শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। বেশ! ভর্তি হয়ে গেলাম। তারপর ক্লাস, ইনকোর্স সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। হুট করে (সম্ভবত জুন অথবা জুলাই মাসে) শুনি ইনস্টিটিউট থেকে পরিচালকসহ আঠারজন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে! দুই-তিন মাস ক্লাস বন্ধ থাকল। তারপর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে শিক্ষকরা এসে ক্লাস নিতে থাকলেন। প্রায় শেষ হওয়া কোর্স আবার নতুন করে শুরু হলো। নতুন গেস্ট টিচারদের অভিযোগের অন্ত ছিল না। যেমন, তোমাদের ডিপার্টমেন্টে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই, তোমাদের ডিপার্টমেন্ট অনেক দূরে, ল্যাব নেই। অগত্যা, কোর্স শেষ করা এবং তাড়াতাড়ি প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার তাগিদে বিভিন্ন গেস্ট টিচারদের ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ক্লাস করতে থাকলাম। অনেক সময় দেখা যেত আমরা ইনস্টিটিউট থেকে ক্লাস করে অন্য ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ক্লাস করতাম আবার ইনস্টিটিউটে এসে আরেকটা ক্লাস করতাম। সব কিছুই করেছি, শুধু তাড়াতাড়ি ফাইনাল পরীক্ষা দেব বলে। দেখতে দেখতে ডিসেম্বরের মধ্যেই কোর্স শেষ হয়ে গেল। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ডিপার্টমেন্টের স্যারদের অনুরোধ করতে থাকলাম। কিন্তু তখন পর্যন্ত ইনস্টিটিউটের নব্য ডিরেক্টরকে দেখা কিংবা তার সঙ্গে কথা বলার মতো সুযোগ হয়নি...। ইনস্টিটিউটের ১ম বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করার অনৈতিক সিদ্ধান্তের দায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতরের ঘাড়ে চাপিয়ে ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর প্রফেসর বশির আহমদ বলেছেন, এটা সুরহা করার জন্য তাদের জানিয়েছেন।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে দফতর এ ব্যাপারে অবগতই নন! বরং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর বলেছে, এটা তাদের জানালে তারা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে পারত। অর্থাৎ উদোর পিণ্ডিবুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে যে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নষ্টের নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়।
আয়েশা সিদ্দিকা : রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]