শিক্ষাগুরু সমীপে
সানজিদা ইয়াসমিন লিজা
🕐 ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
শিক্ষা হচ্ছে মানুষের আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন। আর যিনি এই পরিবর্তনের কা-ারি তিনিই শিক্ষক। শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর আর শিক্ষকের কারখানা বিদ্যালয়। পিতামাতা সন্তানকে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখান ঠিকই কিন্তু সন্তানকে পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে উঠতে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তিনি শিক্ষক। শিক্ষকতা মহান পেশা। সেই মহান পেশায় আত্মত্যাগের মহান প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষকরাই নিজেকে শিক্ষার্থীদের কাছে অকাতরে বিলিয়ে দেন। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়েও চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের শিখা জ¦ালাতে। একজন শিক্ষক ছাত্রদের কাছে আদর্শস্বরূপ তাই শিক্ষকরা যা করেন শিক্ষার্থীরা সেটা অনুকরণ করে।
শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের প্রদীপ ও আশার আলো ছড়িয়ে তাদের সুপ্ত প্রতীভাকে বিকশিত করে মনোজগতকে পূর্ণ করেন। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ককে জগ ও মগের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এখানে শিক্ষককে জগ ও শিক্ষার্থীকে মগের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। জগ ভর্তি পানি থেকে যেভাবে ধীরে ধীরে মগে পানি ঢেলে আমরা যেমন পানি পান করতে পারি ঠিক তেমনি শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের দ্বারা আমরা ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হই। তারা শিক্ষাদানের পরিধি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না। পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তবিক চিন্তা চেতনা আমাদের মধ্যে জাগ্রত করেন। তাদের উপদেশ ও কাজ আমাদের পাথেয় হিসেবে কথায় ও কাজে বাস্তবমুখী হতে সাহায্য করে।
যেহেতু শিক্ষা জাতির মেরুদ- এবং আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ সেহেতু শিক্ষকই জাতি গঠনের নির্মাতা। কুমার যেমন মাটিকে বিভিন্ন আকৃতিতে প্রলেপ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করে তেমনি শিক্ষকরা আমাদের একেকটা বিষয়ে পারদর্শী হতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আজ যে আমরা এই জায়গা পর্যন্ত আসতে পেরেছি সেটাও শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলাফল। একটি শিক্ষিত ও রুচিশীল জাতি গঠনে শিক্ষকরা নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মহান পেশায় যারা জড়িত তাদের সম্মানী ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য পেশা থেকে কম। যা হতাশার।
একটা কথা প্রচলিত আছে, অভাব যখন দরজা দিয়ে ঢোকে, ভালোবাসা বা আন্তরিকতা জানালা দিয়ে পালায়। সুতরাং শিক্ষকরা যাতে জীবিকার তাড়নায় কর্মক্ষেত্রে সামান্যতম অবহেলা করতে না পারেন সেজন্য সরকারের উচিত তাদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া। যাতে তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু জীবিকার দিকে না ঝুঁকে আগামী দিনের কা-ারিদের ঘিরে আবর্তিত হয়।
আজ ১৯ জানুয়ারি, জাতীয় শিক্ষক দিবস। ২০০৩ সালের এই দিনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে তৎকালীন সরকার দিবসটি চালু করে। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই শিক্ষকদের যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা প্রত্যেকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে পেরেছি এবং তাদের আদর্শ অনুসরণ করে অনেকটা পথ এখনো যাওয়া বাকি।
করোনাভাইরাসের কারণে আমরা সবাই যার যার বাসায় আছি। এই ক্রান্তিলগ্নেও অত্যন্ত কষ্ট করে শিক্ষকরা সাহসী যোদ্ধার মতো আমাদের পাশে আছেন। অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। যাতে আমরা সেশনজটে না পড়ি। তাদের জন্য দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। ভবিষ্যতে তাদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপ দেশে একেকটা সোনার সন্তান তৈরি করে দিক। যারা দেশের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
সানজিদা ইয়াসমিন লিজা : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ (২য় বর্ষ), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]