কিংবদন্তি কমরেড অমল সেন
আব্দুর রউফ
🕐 ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২১
কমরেড অমল সেন শুধু একটি নাম নয়, বরং একটি বিপ্লবী ইতিহাস। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কমিউনিস্ট নেতাদের নিয়ে তেমন চর্চা করা হয় না। মিডিয়া যেভাবে বুর্জোয়া নেতাদের তুলে ধরে, সেভাবে কমিউনিস্ট নেতাদের সেই সৌভাগ্য হয় না। অথচ অধিকাংশ পরিবর্তনকারী আন্দোলনের তাদের ভূমিকা অসামান্য। কমরেড অমল সেন তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে ১৯১৩ সালের ১৯ জুলাই বর্তমান নড়াইলের আফরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্য-ব্রাহ্মণ জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পরও একজন ব্যতিক্রম মানুষ ছিলেন।
শৈশবকাল থেকেই গরিব, মেহনতি, কৃষক ও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তিত ছিলেন। কৈশোরকাল থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন শোষণহীন সমাজের। তাই ব্রিটিশ আমলে কৈশোর বয়সে যুক্ত হয়েছিলেন অগ্নিযুগের বাংলার বিখ্যাত বিদ্রোহী সংগঠনচর্চায়। যে চর্চায় তার উত্তরণ ঘটিয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টিতে। আর এখানেই তিনি বেছে নেন কৃষকদের। সেই সঙ্গে সমাজের একেবারে নিম্নবর্গ কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ।
এই নিম্নবর্গ কৃষকদের নিয়েই তিনি গড়ে তুলেছিলেন অভূতপূর্ব কৃষক সংগ্রাম, ইতিহাসে যা তেভাগা কৃষক আন্দোলন নামে খ্যাত। নড়াইলের তেভাগা আন্দোলন স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। এই আন্দোলনের তার অংশের কৃষক সংগ্রামীরা তৎকালীন জমিদার, মহাজন এবং ব্রিটিশ রাজাদের হাত থেকে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিল। সেই বিজয় ব্রিটিশ আমলের বিরুদ্ধে পাল্টা রাষ্ট্র গঠনের ভীত পর্যন্ত গড়ে দিয়েছিল। তেভাগা আন্দোলনের সময় ভারত ভাগ হয়ে হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম নেয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পরে এই অঞ্চলের কমিউনিস্ট নেতাদের জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তি যা করতে পারেনি, তথাকথিত স্বাধীনতা লাভের পর, পাকিস্তান আমলে, বিপ্লবী সংগ্রামীদের জীবনে নেমে আসে সেই নির্যাতন। পাকিস্তান আমলে অমল সেনকে ১৯ বছরই জেলে কাটাতে হয়েছে। জেলখানাতে থাকাকালীন তিনি, সেই জেলখানাকে কমিউনিস্ট ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত করেছিলেন।
আব্দুর রউফ : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]