ধানচাষি কৃষকের সংকট
খলীলুল্লাহ মুহাম্মাদ বায়েজীদ
🕐 ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২১
একদিকে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ঘোষণা, অন্যদিকে গত দশ বছরে প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন চালের আমদানি। একদিকে সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্যসহ ধানের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে ধানের বিক্রয়মূল্য কমতে থাকা। একদিকে ধানচাষি কৃষকদের বছরের পর বছর ধরে লোকসান দেওয়া, অন্যদিকে বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপের লোভনীয় মূল্যে জমি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ধানচাষি কৃষকরা বিশেষ করে যাদের নিজস্ব জমি রয়েছে তারা ধান চাষের প্রতি দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে। এ বাস্তবতায় ভূমিহীন কৃষি মজুরদের তুলনায় জমির মালিক মাঝারি ও বড় কৃষকদের সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংকট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে ধান ক্রয়ের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হলেও তা আসলে প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। ২০১৯-২০ সালে সরকার সারা দেশে মোট ৪ লক্ষ মেট্রিক টন অর্থাৎ ১ কোটি ৭ লক্ষ মণ বোরো ধান ক্রয় করেছিল, যা সারা দেশের মোট উৎপাদিত বোরো ধানের ১.৩০ শতাংশ মাত্র।
সারা দেশে ১ কোটি ৬৯ লক্ষ নিবন্ধিত কৃষকের মাঝে ভাগ করলে প্রতিটি কৃষক পরিবারের ভাগে পড়ে মাত্র ২৪ কেজি পরিমাণে। এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দুজন শিক্ষক ড. আবুল হোসেন ও আহসান হাবীবের গবেষণায়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় মাঠ গবেষণার মাধ্যমে গবেষকদ্বয় বাংলাদেশের কৃষক সমাজের বিশেষ করে ধানচাষি কৃষকদের সংকটের এই নতুন মাত্রাসমূহ তুলে নিয়ে এসেছেন।
তাদের গবেষণাকর্মের ভিত্তিতে লিখিত ‘ধানচাষি কৃষক: সংকটের নতুন ধারা’ বইটি গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রকাশনা সংস্থা টাঙ্গন প্রকাশ করেছে। বইতে গবেষকদ্বয় লেখেন- ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ও ন্যায্য বিক্রয়মূল্য না পাওয়ায় কৃষক ধান উৎপাদন ও তাদের মালিকানাধীন জমি নিয়ে সংকটে রয়েছে। এ সুযোগে বড় বড় কোম্পানি জমি কিনে নিচ্ছে।
এক্ষেত্রে তারা একসঙ্গে বড় অংশের জমি কেনাকে প্রাধান্য দেয়। জমিতে বিভিন্ন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বাণিজ্যিক উৎপাদনেও অনেকে বিনিয়োগ করছে। এর মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন কৃষকের হাত থেকে পুঁজিপতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অদূর ভবিষ্যতে কৃষি জমির পরিমাণ কমতে থাকবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশাল সংখ্যক কৃষিমজুর, কৃষক ও কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মানুষ কর্মহীন ও বেকার জনশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। বইটি সময়ের চাহিদা মিটিয়েছে। বহুল প্রচার কামনা করি।
খলীলুল্লাহ মুহাম্মাদ বায়েজীদ: প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি