ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রেলের টিকিট কালোবাজারি

মাহমুদ আহমদ
🕐 ৯:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮

ঈদ মানেই আনন্দ। এই আনন্দ তখনই পূর্ণতা লাভ করে যখন পরিবারের সবাই একত্রে মিলিত হয়ে উদযাপন করার সুযোগ মেলে। এবারও ঈদ আনন্দ সবাই একত্রে উদযাপনের লক্ষ্যে ঈদের আগেই স্ত্রী-সন্তানসহ নিজ বাড়ি পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রেলযাত্রা করি। অন্যসব যানবাহনে ভ্রমণের চেয়ে রেল ভ্রমণের আনন্দটা যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ করে আমার একমাত্র কন্যা আফিয়া, তার কাছে ভ্রমণ মানেই ট্রেন। ট্রেনে ভ্রমণ ছাড়া সে যেন অন্য কোনো যানবাহন চিন্তাই করতে পারে না। রেল ভ্রমণ তার জন্য ভীষণ আনন্দের কারণ। ট্রেনের ঝক ঝক শব্দ, যানজটবিহীন পথচলা সত্যিই আনন্দদায়ক। দেশে এবং বিদেশে অসংখ্যবার ট্রেন ভ্রমণ করার সুযোগও হয়েছে। প্রতিটি ভ্রমণের মাঝেই যেন লুকিয়ে থাকে নানা অভিজ্ঞতার কথা।

তবে এবারের অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন। ছুটি শেষে ঢাকা ফেরার পালা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ডোমার, চিলাহাটি কোনো স্টেশন থেকে কোনোভাবেই রেলের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, সাধারণ জনসাধারণের জন্য বরাদ্দ টিকিটের একটি টিকিটও তারা পাচ্ছে না, সব চলে যাচ্ছে টিকিট কালোবাজারিদের হাতে। স্টেশন মাস্টারের কাছে টিকিট নেই, টিকিট পাওয়া যাচ্ছে চায়ের দোকানে বসে থাকা স্থানীয় লোকদের কাছে। ঢাকাগামী বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে আসল চিত্র ফুটে ওঠে।
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ১০ দিন আগে দেওয়া হবে, তা জেনে পঞ্চগড় জেলার এক ভদ্রলোক ২৮ আগস্টের একতা এক্সপ্রেসের টিকিট সংগ্রহের জন্য ১৭ আগস্ট রাত ৯টায় পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। ভেবেছেন রাতে লাইনে দাঁড়ালে হয়তো আগামীকাল সহজেই টিকিট পেয়ে যাবেন। স্টেশনে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় কাউকে দেখতে না পেয়ে তিনি চলে যান। পরদিন ভোর ৬টায় তিনি আবার স্টেশনে আসেন, তখনো কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার ফিরে যান। এরপর সকাল ৯টায় পুনরায় আসেন। এবার এসে তিনি ভিন্ন চিত্র দেখতে পান। স্টেশনের আশপাশের কয়েকজন যুবক স্টেশনে ঘোরাফেরা করছেন, তিনি যেই না লাইনে দাঁড়ালেন এমন সময় যুবকরা হইচই করতে শুরু করলেন আর বলতে থাকেন, আপনি টিকিট পাবেন না, আপনার সিরিয়াল নেই, যারা টিকিট পাবেন তাদের নামের তালিকা করা হয়ে গেছে, এই দেখুন তাদের নাম, এখানে কি আপনার নাম আছে? আপনার নাম নেই, তাই আপনি কোনোভাবেই টিকিট পাবেন না। সিরিয়াল অনুযায়ী, তারা টিকিট সংগ্রহ করলেন কিন্তু তিনি আর টিকিট পেলেন না। টিকিট না পেয়ে তিনি স্টেশনের সামনে চায়ের দোকানে চা পান করতে করতে পুরো বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন, এরা সবাই টিকিট কালোবাজারি। চা বিক্রেতা বলেন, ভাই আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে কোনোভাবেই টিকিট পাবেন না। আপনার সামনে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিল এরা প্রতিদিনই এভাবে তালিকা প্রস্তুত করে রাখে, যার ফলে সাধারণ কোনো যাত্রী টিকিট নিতে পারে না। বিষয়টি এখানকার সবাই অবগত, তারপরও এদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
ভদ্রলোক চায়ের কাপে ঠোঁট লাগানোর আগেই তার চোখের সামনেই ৫৫০ টাকার টিকিট এক ব্যক্তি ক্রয় করলেন দেড় হাজার টাকায়। এটা দেখে তিনি স্টেশন মাস্টার মোশারফের কাছে বিষয়টি বললে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। একই ব্যক্তিরা যে প্রতিদিন টিকিট নিচ্ছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে বলা হয় কারা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন এটা আমরা কীভাবে জানব। অথচ প্রতিদিনই যে কালোবাজারি এই চক্রের লোকজনই টিকিট হাতিয়ে নিচ্ছে তা স্টেশনের সবাই অবগত, তারপরও এরা থাকে নিশ্চুপ। পরে বাধ্য হয়ে তিনি দ্বিগুণ দামে বাসের টিকিট নেন। এটি কি শুধু পঞ্চগড় জেলার সমস্যা? না, এ সমস্যা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার। বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে টিকিট কালোবাজারিরা স্টেশনকেন্দ্রিক বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে নেয় অতিরিক্ত অর্থ।
প্রশ্ন হচ্ছে এই, প্রতিটি জেলায় রেলের টিকিটের ক্ষেত্রে কালোবাজারি চক্র সব সময় সক্রিয় থাকে, এদের হাত থেকে সাধারণ জনগণ কি কখনো মুক্তি পাবে না? লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি। আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসি। এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছি বলে আমরা গর্ববোধ করি। খুব কষ্ট লাগে তখন, যখন দেখি দেশের সুনামকে নষ্ট করার জন্য একটি কুচক্রী মহল সক্রিয় থাকে। আমরা কি আমাদের বুকের রক্ত এ জন্যই বিলিয়ে দিয়েছিলাম যেন এসব কালোবাজারি আর অসৎ চক্রের হাতে জিম্মি থাকি? না, এটা কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এসব অসৎ চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের সবার ঐক্যই পারে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সব ধরনের অসৎ চক্রের হাত থেকে মুক্ত করতে।

 

মাহমুদ আহমদ : প্রাবন্ধিক ও সহকারী সম্পাদক, মাসিক আহ্বান।
[email protected]

 

 
Electronic Paper