বেতারের স্বপ্নদ্রষ্টা জগদীশ চন্দ্র বসু
মোহাম্মদ আশিক উজ্জামান
🕐 ২:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২০
ইউরোপীয় রেনেসাঁর শেষ ধাপে এই বাংলা তথা ভারতকে সারা বিশ্বের কাছে যে কয়জন গুণী ব্যক্তি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসু তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি পৃথিবী বিখ্যাত এক বাঙালি বিজ্ঞানী। জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলার প্রাচীন জনপদ বিক্রমপুরের রাড়িখাল গ্রামে তার পৈত্রিক নিবাস। পিতার নাম ভগবান চন্দ্র বসু এবং মাতা বামাসুন্দরী দেবী।
শিক্ষিত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও স্বাধীনচেতা পিতা তাকে নিজস্ব কর্মস্থল ময়মনসিংহের একটি বাংলা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এখানে প্রকৃতির সাহচর্যে তিনি মুক্তচিন্তায় পৃথিবীকে বুঝতে শেখেন। অতঃপর সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল ও কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা এবং এফএ পাশ করে ১৮৮০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। তারপর লন্ডনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ১৮৮৫ সালে দেশে ফিরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু তার যোগ্যতা একজন ইউরোপীয় শিক্ষকের চেয়ে বেশি থাকা সত্ত্বেও তার বেতন ছিল ইউরোপীয় একই পদে থাকা শিক্ষকের চেয়ে কম অর্থাৎ তিন ভাগের দুই ভাগ। তিনি যেন স্বদেশে পরবাসী তাই উপনিবেশবাদী ব্রিটিশদের অপমানজনক নিয়ম মেনে নেননি। বিনা বেতনে তিন বছর চাকরির পর অবশেষে ব্রিটিশ সরকার নিবর্তনমূলক এ নিয়ম রহিত করে তার বকেয়া সকল বেতন পরিশোধ সাপেক্ষে চাকরি স্থায়ী করে দেয়। এ প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি শুরু করেন পদার্থ ও জীব বিজ্ঞানের গবেষণা। সাফল্যও পেয়ে যান। ১৮৯৫ সালে তিনি অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোর ধর্ম এবং তা উৎপাদন ও ধরার যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। একই বছর তিনি কলকাতা টাউন হলে শত শত মানুষের সামনে তার উদ্ভাবিত মাইক্রোওয়েভ দিয়ে লোহার গোলা নিক্ষেপ, পিস্তলের আওয়াজ ফোটানো এবং বারুদের স্তূপ উড়াতে সক্ষম হন। কোনো তারের সাহায্য ছাড়া তরঙ্গ প্রেরণে সাফল্যই তাকে একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে এনে দিয়েছিল জগতজোড়া খ্যাতি। জগদীশ চন্দ্রের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহারই আমরা পরবর্তীকালে দেখতে পাই বেতার, টেলিভিশন, রাডার, মোবাইলসহ তথ্য যোগাযোগ ও মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
১৮৯৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জগদীশ ব্রিটেনে বিজ্ঞানী থমসন, অলিভার লজ ও লর্ড কেলভিনের উপস্থিতিতে বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে বক্তৃতা প্রদান করেন। তার জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ বিজ্ঞানীরা তাকে ইংল্যান্ডে অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তিনি নাড়ির টানে ইউরোপ বিজয় করে ১৮৯৭ সালে দেশে ফিরে আসেন। জগদীশ চন্দ্র বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানী যিনি জীব ও জড়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য পদার্থবিজ্ঞানকে বেছে নিয়েছিলেন। তার উদ্ভাবনই প্রেরণা যুগিয়েছে আজকের বিজ্ঞানীদের সিটি স্ক্যান এমআরআই মেশিন উদ্ভাবনের। তার গবেষণার মূলে ছিল উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ঐক্যের সম্পর্ক স্থাপন। যদিও এর জন্য তাকে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল। তবুও তিনি ছিলেন অনড়। আর এরই ধারাবাহিকতায় উন্মোচিত হয়েছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক নতুন শাখা যার নাম জৈব-পদার্থ বিজ্ঞান। আর তিনিই বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম জৈব-পদার্থ বিজ্ঞানী। পদার্থ বিজ্ঞানের যন্ত্র ক্রেসকোগ্রাফ দিয়ে গাছের বেড়ে ওঠা এবং গাছের উত্তেজনার বেগ মাপার সমতল তরুলিপি যন্ত্র রেজোন্যান্ট রেকর্ডার তৈরি করে তিনি প্রমাণ করেন গাছেরও প্রাণ আছে।
মোহাম্মদ আশিক উজ্জামান : কবি
[email protected]