শীতের রোগ : কারণ ও প্রতিকার
ডা. মাজেদ হোসাইন ১২:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২০

শীতের একটা আমেজ সবাই কমবেশি উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। শীত আসছে। বিপদও আসছে। আর মধ্যেই চলছে করোনা মহামারী। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এই সময়টায় ঠা-া লাগা বা ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ কারণে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, ঋতু পরিবর্তনের সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাবে। এর কারণ হিসাবে শীতকালে আর্দ্রতা, সূর্যের তাপ, ভিটামিন ডি-এর অভাব এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া সহ অন্যান্য ভাইরাস ও ফ্লু জাতীয় শ্বাসকষ্ট রোগের লক্ষণ দেখা দেয় বলে এসময় মানুষের জীবন করোনাভাইরাস নিয়ে আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। এ সময় সর্দি-জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা নাকের প্রদাহ, কনজাঙ্কটিভাটিস বা চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া, খুশকি, খোস-পাঁচড়া প্রভৃতি রোগ হয়ে থাকে। সর্দি-জ¦র বা কমন কোল্ড শীতের সময়কার একটি সাধারণ রোগ।
সর্দি-জ্বর দেহের শ্বাসনালীর ভাইরাসজনিত এক ধরনের সংক্রমণ। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেশি দেখা যায়। কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন লোকদের এ রোগ বেশি হয়। হাঁচি কাশির মাধ্যমে এ রোগ একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়। সর্দি-জ্বর হলে প্রথমে নাকে ও গলায় অস্বস্তি লাগে, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে। নাক বন্ধও থাকতে পারে। মাথাব্যথা, মাথা ভারী বোধ হওয়া, শরীরে ব্যথা, হালকা জ¦র, গলাব্যথা প্রভৃতি উপসর্গও দেখা যায়। কখনো কখনো চোখ লাল হতে পারে এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে। সর্দি-জ¦রের সময় বিশ্রামে থাকতে পারলে ভালো। সাধারণ খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পানি, লেবুর রস, আনারস, পেয়ারা বা আমলকী জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।এই যে হঠাৎ আবহাওয়া ও জলবায়ুর এ পরিবর্তন তাতে কিন্তু অনেকেই সহজে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন না। আবহাওয়া ও জলবায়ুর এই পরিবর্তনের এ সময়টাতে অনেকেই নানা অসুখে ভুগতে শুরু করেন, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার সময়ে বিভিন্ন শীতকালীন অসুখ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর এ পরিবর্তনে কিন্তু অনেকেই সহজে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না।
এ প্রসঙ্গে সবুজ আন্দোলন কার্যনির্বাহী পরিষদের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা.এমএ মাজেদ বলেন, বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রায় ২৫ শতাংশ মৃত্যুর কারণ পরিবেশগত। বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পরিবেশগত স্বাস্থ্য এবং এর সুরক্ষা যেহেতু একটি সর্বজনীন ব্যাপার, সব মানুষের এখানে অংশগ্রহণ প্রয়োজন। পরিবেশ স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা একজন ছাত্রের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব রাখতে পারে। পরিবেশের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। পরিবেশগত জ্ঞান ব্যবহার করে মানুষ তার জীবনযাপনের মান আরও উন্নত করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ফলে মানুষের জন্য পরিষ্কার পানি, বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির মুখে। পৃথিবীর সবার টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশের কাঠামো ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দরকার। একটি দেশের অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে পরিবেশগত উন্নতি প্রয়োজন। সারা পৃথিবী এখন পরিবেশকে দূষণমুক্ত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই আমাদের পরিবেশ স্বাস্থ্য ও তার নিরাপত্তা খুবই জরুরি। স্বাস্থ্য হলো শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে মানুষকে তার চারপাশের সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। এই উভয় প্রকার পরিবেশ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। স্বাস্থ্য সচেতনতা হলো কিছু অভ্যাসের আচরণ, যার দ্বারা আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি। ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’- এটি একটি বহু পরিচিত বাক্য। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সচেতনতা দরকার। স্বাস্থ্য সচেতনতার নানা দিকগুলো নিয়ে এভাবে ভাগ করা যায়। দৈনন্দিন কাজকর্মে স্বাস্থ্য সচেতনতা। খাদ্যাভাসে স্বাস্থ্য সচেতনতা। অসুখ নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা।
আচার-আচরণে স্বাস্থ্য সচেতনতা। দৈনন্দিন কাজকর্মে স্বাস্থ্য সচেতনতায় থাকবে পরিশুদ্ধ পানীয় জল পান করা, শৌচের পরে ও খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। স্বাস্থ্যবিধি সম্মত শৌচাগার ব্যবহার করা ইত্যাদি। খাদ্যাভাসে স্বাস্থ্য সচেতনতায় থাকবে ক্ষতিকর খাদ্য ও পানীয় ব্যবহার না করা। মাদক সেবন থেকে দূরে থাকা। ভেজাল খাদ্য নিয়ে সচেতন থাকা। অসুখ নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতায় উল্লেখ করা যায় অসুখের কারণ জানা। অসুখের সময় পথ্যের ব্যবহার ভুল ধারণা আছে, সেখান থেকে মুক্ত থাকা। অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। যুক্তিযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন দরকার। আচার আচরণে স্বাস্থ্য সচেতনতায় বলা যায় পরিবেশকে নির্মল ও পরিচ্ছন্ন রাখা। যত্রতত্র আবর্জনা না ফেলা। সামাজিক জীবনযাপন করা। পরিবেশকে নির্মল রাখার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ১) বাতাসের মান বজায় রাখা। বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমানো। ২) ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ জলকে দূষণমুক্ত রাখা। ৩) বিষাক্ত বস্তু ও বিপজ্জনক বর্জ্য সংস্পর্শ এড়ানো।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর এই পরিবর্তনের এ সময়টাতে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন, সর্দি কাশি হাঁচি ও নিঃশ^াসের কষ্ট। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আছে যা সর্তকভাবে খেয়াল রাখলে সহজেই এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শীতের এই আসন্ন সময়টা অনেক মানুষকে প্রায়ই চরমভাবে ভোগায়। এ সময়টাতে নানা অসুখ-বিসুখ মানুষকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়। এ সময় কারও ঠা-াজনিত সমস্যা হলে তা সহজে না সারার প্রবণতাসহ বিভিন্ন শ^াসতন্ত্রজনিত রোগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়ানোর সময়ে বিভিন্ন শীতকালীন অসুখ আমাদের শরীরে আক্রমণের সুযোগ নেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভৌগোলিক কারণে আবহাওয়া ও পরিবেশেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। কারও কারও অ্যালার্জি সমস্যা এ সময়ে বাড়ে। এমনটা ঘটে কারণ আমাদের শরীর কোনো পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের জন্য সময় নেয়। তাই হঠাৎ এই তাপমাত্রা বা আবহাওয়ার পরিবর্তন মানুষকে নানা অসুখে ভোগানোর জন্য দায়ী।
শীতকালীন যেসব রোগে রোগীরা বেশি আক্রান্ত হয় সেসব রোগের জন্য হোমিওপ্যাথি:
* মাম্পস: ঠা-া বাতাস লাগার ফলে যখন কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে তখন প্যারামিক্সোভাইরাস দ্বারা লালা গ্রন্থি (প্যারোটিড গ্ল্যান্ড) আক্রান্ত হয়। তখন নিচের চোয়াল সহ গাল ফুলে ওঠে। রোগী বড় করে মুখ খুলে হা করতে পারে না। সে সঙ্গে জ্বরও থাকে। গালের ফোলা সপ্তাহ খানেক হতে দশদিন পর্যন্ত থাকে। সাধারণত একদিকেই লালা গ্রন্থি আক্রান্ত হয়। মাম্পস হতে কখনো কখনো অন্য অঙ্গও আক্রান্ত হয়। সাধারণত তিন বছরের পর হতে টিনঅ্যাজ পর্যন্ত দেখা যায়। বড়দের খুব কম হতে দেখা যায়। লক্ষণের ওপর যেসব ওষুধ আসতে পারে, বেলাডোনা, রাস টক্স, মার্ক সল, মার্ক বিন আয়োড, মার্ক বিন রুব্রাম, পালসাটিলা।
* টনসিলাইটিস: মুখের ভিতরে গলার দুপাশে লিম্ফয়েড টিস্যুর যে গ্ল্যান্ড থাকে তাকে টনসিল বলা হয়। এটিও সাধারণত বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে। শীতকালে ঠাণ্ডা লাগার ফলে এ গ্ল্যান্ডগুলো ফুলে যায়, জ¦র হয়, শরীরে ব্যথাও থাকে। রোগী ঢোক গিলতে পারে না। গ্ল্যান্ডগুলো ফোলার কারণে আকারে বড় হয় এবং অনেক সময় এগুলো পেকে যায়। টনসিল কারও কারও ক্ষেত্রে শীতকাল ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ও দেখা যায়। অনেকেই সার্জারির মাধ্যমে এগুলো কেটে ফেলেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না কারণ প্রত্যেক শীতেই তখন রোগী ঠাণ্ডাজনিত রোগে বিশেষ করে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভোগে। কারণ টনসিল রোগজীবাণু প্রতিরোধ করে থাকে। লক্ষণের ওপর যেসব ওষুধ আসতে পারে, বেলাডোনা, ব্যারাইটা কার্ব, হেপার সালফ, মার্ক সল, মার্ক বিন আয়োড, মার্ক বিন রুব্রাম, ফাইটোলাক্কা, থুজা, টিউবারকুলিনাম ... ইত্যাদি।
*এডিনাইটিস: মুখের ভিতরে তালুর পেছনে এ গ্রন্থির অবস্থান। টনসিলের মতো এ গ্রন্থিও রোগজীবাণুকে দেহে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এডিনাইটিস হওয়ার কারণে শিশু ঘুমের সময় নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারে না তাই মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। লক্ষণের ওপর যেসব ওষুধ আসতে পারে, বেলাডোনা, ব্যারাইটা কার্ব, কেল্কেরিয়া কার্ব, কেল্কেরিয়া জুডেটাম, কেল্কেরিয়া ফস, থুজা, টিউবারকুলিনাম।
*চিকুনগুনিয়া জ্বরঃ শীতকালে এ জ¦র হতে দেখা যায়। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহনকারী মশা যখন মানুষকে কামড়ায়, তখন ম্যালেরিয়ার মতো এ রোগও মানবদেহে ছড়ায়। এতে হঠাৎ করে ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ¦র হয়, যা পাঁচ-সাতদিন পর্যন্ত থাকে। মাথাব্যথা সহ সমস্ত শরীরে জোড়ায় জোড়ায় এত তীব্র ব্যথা যে রোগীর নড়াচড়া অসহ্য মনে হয়। কখনো চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। অনেকের মাঝে ত্বকে মশার কামড়ের মত অনেক লাল লাল ফোঁটা ফোঁটা দাগ পড়ে। দশদিনের মধ্যে যদিও রোগ সেরে যায় কিন্তু সার্বিক দুর্বলতা আরও সপ্তাহ খানেক বা দশদিন পর্যন্ত থাকে। লক্ষণের ওপর যেসব ওষুধ আসতে পারে, আর্সেনিক এলবাম, বেলাডোনা, ব্রাইয়োনিয়া, ইউপেটোরিয়াম পা?র্ফ, রাস টক্স, সালফার।
*বাতব্যথা: শীতকালে সাধারণত গাউট ও আরথ্রাইটিস উভয় ধরনের বাতের বৃদ্ধি দেখা যায়। এ রোগটি বয়স্কদের হয়ে থাকে।
ওষুধ: আরনিকা, বেঞ্জোইক এসিড, ব্রাইয়োনিয়া, কেল্কেরিয়া কার্ব, কষ্টিকাম, কলচিকাম, রাস টক্স, লক্ষণের ওপর যেসব ওষুধ আসতে পারে-
*হজমজনিত গ-গোলসহ পেট ফোলা: এটিও মূলত মধ্য বয়স্কদের মাঝে দেখা দেয়। শীতকালে তাদের অন্যদের তুলনায় শীত বেশি লাগে এবং তাদের খাবারও অনেক দেরিতে হজম হয়। ক্ষুধা লাগেই না। আবার কখনো ক্ষুধা লাগলে পরে সামান্য একটু খাওয়ার পরই পেট ভরা মনে হয়। বেশিরভাগ সময়ে পেটে গ্যাস জমে পেট ফুলে শক্ত হয়ে যায়। পেটে অসহনীয় ব্যথা যা বুকে এবং পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর প্রায় মরার মত শোচনীয় অবস্থা হয়। যেসব ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে, একোনাইট, আর্সেনিক, ব্রাইয়োনিয়া, কার্ব ভেজ, চায়না, লাইকোপোডিয়াম।
*আর্টিকেরিয়া: শীতকালে আজকাল প্রায় তরুণ-তরুণীদের মাঝে এবং যুবক-যুবতীদের মাঝে এটা দেখা যায়। এতে ত্বকের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে। তবে শীতে হজমের গ-গোলের কারণে, বিশেষ করে লিভারের দুর্বলতার কারণেও এমনটা হয়ে থাকে তাই এটাকে অনেকে শীতপিত্ত রোগও বলে থাকেন। যেসব ওষুধ আসতে পারে, এপিস, ডাল্?কামারা, রাস টক্স, আর্টিকা ইউরেন্স।
* মাস্?ল ক্রাম্প: সাধারণত শীতে মধ্যবয়স্ক রোগে ভোগা দুর্বল লোকদের মাঝেই এটি দেখা দেয়। দিন বা রাত যেকোনো সময় দেখা দেয়। পেশির খিঁচুনির সঙ্গে তীব্র ব্যথা হয়, যেসব ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে, কেল্কেরিয়া কার্ব, কল্?চিকাম, কষ্টিকাম।
* ব্রঙ্কাইটিস: ঠা-ায় যখন শ্বাসনালী সহ ফুসফুসে বাতাস যাতায়াতকারী সরু নালীর প্রদাহ হয় তখন এ রোগ হয়। এটি সাধারণত শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। এ রোগেও জ¦র, কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকে। যেসব ওষুধ আসতে পারে, অ্যান্টিম টার্ট, আর্সেনিক, ব্রাইয়োনিয়া, ড্রসেরা, ফেরাম ফস, হেপার সালফ, ইপিকাক, নেট্রাম সালফ, স্পঞ্জিয়া, টিউবারকুলিনাম ... ইত্যাদি।
* নিউমোনিয়া : এতে শ্বাসনালীর পরিবর্তে ফুসফুসের প্রদাহ হয়। এখানেও জ¦র, কাশি ও তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকে। যেসব ওষুধ আসতে পারে, অ্যান্টিম টার্ট, আর্সেনিক, ব্রাইয়োনিয়া, নেট্রাম সালফ, ফসফরাস, টিউবারকুলিনাম।
* অ্যাজমা : বুকে সাঁ সাঁ শব্দসহ নিঃশ্বাসে কষ্ট, রোগী নিঃশ্বাসে বাতাস নেওয়ার জন্য তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করে, হাঁপাতে থাকে। বিছানায় শুতে পারে না, কিছু খেতে পারে না। শ্বাসকষ্ট সাধারণত রাতেই বেশি থাকে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বাড়ে, সকালের দিকে রোগী কিছুটা স্বস্তিবোধ করে। আজকাল ঘরে ঘরে ছোট শিশুদের মাঝে এবং বয়স্কদের মাঝেও এ রোগ দেখা দিচ্ছে। ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া এসব রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে এ রোগ দেখা দেয়। এছাড়া কনভেন্সনাল চিকিৎসায় অ্যালার্জির জন্য অতিরিক্ত সিনথেটিক ড্রাগ নেওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে এবং আরও কিছু ড্রাগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ যন্ত্রণাদায়ক অসুখের সৃষ্টি হয়। যেসব ওষুধ আসতে পারে, অ্যান্টিম টার্ট, আর্সেনিক, এরেলিয়া, ব্রাইয়োনিয়া, ব্লাটা ওরিয়েন্টালিস, ক্যালি কার্ব, নেট্রাম সালফ, পালসাটিলা, টিউবারকুলিনাম। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথি কোনো রোগের নামে চিকিৎসা করা হয় না। তাই কোনো ওষুধ অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। কারণ একজন চিকিৎসক রোগীর রোগের লক্ষণ অনুসারে অনেক ওষুধ নির্বাচন করতে পারে, এর থেকে একটিমাত্র ওষুধ নির্বাচন করে থাকে।
তাই সঠিক চিকিৎসা পেতে হলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর শীত ও করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে মানুষকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ডা. মাজেদ হোসাইন: কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
drmazed96@gmail.com