ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাজ্জাক হোসেন শিহাবের ‘জীবনের রোডম্যাপ’

চয়নিকা সাথী
🕐 ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২০

হেমন্তের শিউলি ফোটা দিনে কাশফুল নুইয়ে এসেছে চারদিকে। কিন্তু তরুণের চিন্তা জাগ্রত হচ্ছে— সৃষ্টির উল্লাসে বাড়ছে সৃজনশীল কাজের পরিধি। মানুষ নতুন চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। সে হোক কোনো জীবনের গল্প বা নতুন সৃষ্টি ও বই নিয়ে নতুন পরিকল্পনা। সৃজনশীল মানুষ একের পর এক নতুন ভাবনায় পথ চলতে চায়। এমনই এক নতুন চিন্তা নিয়ে আড্ডায় বসেন একদল তরুণ। তারুণ্যের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও জীবন নিয়ে পরিকল্পনার মানচিত্র নিয়েই গত শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরে একটি হোটেলে আলো-আঁধারি সন্ধ্যায় জমে ওঠে চিন্তাশীল আড্ডা। কুয়াশায় যখন প্রকৃতি নিমগ্ন, আলো জ্বেলে হয়ে গেল সাহিত্যিক সাজ্জাক হোসেন শিহাব-এর জীবন নিয়ে লেখা বই জীবনের রোডম্যাপ নিয়ে তুমুল আড্ডা। সেই আড্ডা চলল রাত দশটা পর্যন্ত। আড্ডার ভিতরেই দেশ পাবলিকেশন্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন লেখক সাজ্জাক হোসেন শিহাব। এ সময় প্রকাশনীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কবি ও প্রকাশক অচিন্ত্য চয়ন। যার হাত ধরে উঠে এসেছেন অনেক উদীয়মান কবি-সাহিত্যিক। বইটি সম্পর্কে প্রকাশক বলেন— ‘পা-ুলিপির সঙ্গে শুরু থেকেই আমি জড়িত। আমি জানি, কতটা রাত বিনিদ্র থেকে লেখক আমাদের একটু ভিন্নভাবে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। তিনি বাক্যের ভাঁজে ভাঁজে আমাদের যেনও আলতো করে আঘাত করে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, জীবন মানে দায়িত্বের ঘেরাটোপ।’

বইটি নিয়ে আশাবাদী লেখকও। তিনি বলেন— ‘আমাদের জীবন আ বেড অব রোজেজ না। আমাদের পথে হাজারো বাধা। হাজারো দায়িত্ব। কাজের ভিতরে আমরা সামনে আগাতে চাই। সাফল্য পেতে চাই। বইটির আসল উদ্দেশ্য হলো জীবনকে সুন্দর করে উপভোগ করা। দৃষ্টিভঙ্গি বদলে এটা মগজের ভিতরে প্রোথিত করা— আ বিউটিফুল লাইফ ইজ ডিউটিফুল।’ উপস্থিত ছিলেন— কবি ফারুক সুমন, শিশু চলচ্চিত্রকার শাহীনুর আলম শাহীন, কবি চয়নিকা সাথী, সাংবাদিক শফিক হাসান প্রমুখ।

তরুণদের আলোচনা জমে ওঠে আড্ডা। শফিক হাসান বলেন— ‘বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে বইটি। যেকোনো মানুষ জীবনের রোডম্যাপ খুঁজে পাবেন এতে। জীবনের জন্য সবার আগে দরকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা। ঠিক কত শতাংশ মানুষ জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোতে পারেন? নানান সীমাবদ্ধতায় লক্ষ্য স্থির থাকেও না। সাধুবাদ জানাই লেখককে, স্বপ্ন দেখানোর সাহসী ভূমিকার জন্য।’ চিত্রকলার মানুষ চিন্তা করেন ভিন্নভাবে। শাহীনুর আলম শাহীন আলোচনা করতে গিয়ে বলেন— ‘জীবনের রোডম্যাপ মানুষকে সঠিক পথ দেখাবে। বিশেষ করে তরুণদের যারা কোন পথে আগাবে, কী করবে বুঝতে পারছে না।’ কবি ও প্রাবন্ধিক ফারুক সুমন বলেন— ‘আধুনিক সময়ে এসে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সফল হলেও মানসিকভাবে নানা ধরনের অশান্তিতে নিমজ্জিত। আশা করি, বইটি মানুষের জীবনে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেবে। আয়োজনটিও একদম নতুন।’ কবি চয়নিকা সাথী বলেন— ‘বর্তমান সমাজের বিদ্যমান পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় জীবনের রোডম্যাপ বইটি একটি গাইডলাইন। পাঠকের মন ও মননশীলতাকে পরিবর্তিত করবে ইতিবাচকতায় এগিয়ে দেবে জীবনের সফল পথে। বইটি নিয়ে লেখকের উদ্দেশ্য সফল হোক।’ জীবনের রোডম্যাপ মোটিভেশনাল বই, যার ধাপে ধাপে আছে জীবন গড়ার দিক নির্দেশনা। বইটির আনুষ্ঠানিক পি-অর্ডার কার্যক্রমও চালু হয়ে গেছে এরই মধ্যে। প্রসঙ্গত, সাজ্জাক হোসেন শিহাব সাস্টেইনেবল ফিউচার লিডারস নামের একটা নন-প্রফিটেবল প্লাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিশ্রুতিশীল লেখক, কবি, অনুবাদক এবং মোটিভেটর। পেশাজীবনেও তিনি সফল মানুষ। কাজ করছেন দেশের স্বনামধন্য একটা গার্মেন্ট কোম্পানির মার্কেটিং অ্যান্ড মার্চেন্ডাইজিং বিভাগে। ইতোমধ্যে অফিসের কাজে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদান করেছেন। ঘুরেছেন পৃথিবীর বারোটি দেশে। ক্রেতা, পণ্য সরবরাহকারীদের নিয়ে আছে বিশদ জ্ঞান। পেশা জীবনে তিনি আল-মুসলিম গ্রুপ, এপেক্স হোল্ডিংস, গ্রাফিক্স টেক্সটাইলস, ইউসিবি ব্যাংক ও প্রাইড গ্রুপে কাজ করেছেন। পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে করেছেন খ-কালীন শিক্ষকতা। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। বইটি নিয়ে বলেন- ‘আমার শ্রম ও স্বপ্নের মিশ্রণে লেখা হয়েছে। আশা করছি, পাঠকের জন্য একটু হলেও কাজে আসবে। জীবন বোঝার জন্য এই বইটি সবার পড়া জরুরি।’

শিহাব বস্ত্র-প্রকৌশলের ওপর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে নিট ইন্ডাস্ট্রি ম্যানেজমেন্টের ওপরে করেছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা। পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বস্ত্র প্রকৌশলে স্নাতক করেছেন। তিনি বাগমারা কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এইচএসসি এবং একডালা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করেন।

তিনি একজন আলোচিত তরুণ লেখক। ইউরোপীয় প্লটে লেখা তার উপন্যাস মহাদেশ-মহাকাল পেয়েছে তুমুল পাঠকপ্রিয়তা। ইংরেজির পাশাপাশি ইতালীয় ভাষায় বইটির অনুবাদ চলমান। বিশেষ তরুণ লেখক শাখায় তিনি ২০১৬ সালে পেয়েছেন দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার। তিনি পঁচিশটিরও অধিক বই লিখেছেন। আলোচিত বইয়ের মধ্যে— ধূপছায়া, আঙ্গুলের কঙ্কাল, ঈশ্বরের দেশে, এসব গল্পের শেষ নেই, হুর রে... অন্যতম। তিনি বস্ত্র-প্রকৌশলের ওপরেও লিখেছেন কয়েকটি বই। সাজ্জাক হোসেন শিহাব ১৯৮৮ সালের ১৪ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৃত জসিম উদ্দীন। মা মোছা. শাহিদা বেগম। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। পৈতৃক নিবাস রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার একডালা গ্রামে। পুষ্টিবিদ তাহমিনা তামান্নাকে বিয়ে করেছেন ২০১৩ সালে। স্ত্রী, দুই সন্তান সাজিদ আর সায়ানকে নিয়ে বর্তমানে ঢাকায় বসবাস।

চয়নিকা সাথী : কবি ও ছোটকাগজকর্মী; সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
[email protected]

 
Electronic Paper