ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি : কষ্টের আরেক অধ্যায়

প্রদীপ সাহা
🕐 ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২০

করোনা মহামারির দাপটে প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবন আজ বিপন্ন-বিপর্যস্ত। অনেকের চাকরি নেই, অনেকের ব্যবসা বন্ধ। কেউ বেকার ও নিঃস্ব হয়ে অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছে। কেউ আবার তার ভালো চাকরিটি হারিয়ে রাস্তায় নেমে গেছে। দিনমজুর হয়ে কাজ করতেও অনেকে বাধ্য হচ্ছে শুধু পেটের তাগিদে; পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটুখানি খেয়ে-পরে বাঁচার আশায়। মহামারী করোনা সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। কম-বেশি সবার মধ্যেই পড়েছে এর নেগেটিভ প্রভাব। করোনায় অকাল মৃত্যুর ফলে অনেক পরিবার আজ তার একমাত্র আয়ের মানুষটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে সবকিছু হারিয়ে অর্থকষ্টে দিনযাপন করছে। করোনা এখনও তার শক্ত আগ্রাসন থেকে সরে যায়নি। এর প্রকোপ সামান্য কিছু কমলেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়নি। সবার মধ্যে এখনও একটা অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে সারাক্ষণ। মানুষ এমনিতেই একটা অস্থিরতা ও কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে; তার মধ্যে শুরু হলো কষ্টের আরেক অধ্যায়— নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। ঠিক যে সময়টিতে মানুষ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কোনোরকমে একমুঠো খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য চেষ্টা করছিল, তখনই শুরু হলো নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। কী নির্মম নিষ্ঠুরতা! কী নিষ্ঠুর মানবতা!

বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তেই পারে— এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তুদাম বাড়ার একটা মাত্রা তো অবশ্যই থাকতে হবে। কোনো জিনিসের দাম বাড়ানোর আগে বিক্রেতাকে দেখতে হবে, চিন্তা করতে হবে— মানুষের কতটুকু ক্ষমতা বা সাধ্য রয়েছে জিনিসটি কেনার ব্যাপারে। সেটি যদি কোনো বিলাসসামগ্রী হয়, তা না হয় বাদ-ই দিলাম। কিন্তু যদি সেটি হয় নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো সামগ্রী বা উপাদান, তাহলে ব্যাপারটি নিয়ে কথা উঠতেই পারে। দেশের বিরাট সংখ্যার মানুষ দিন এনে দিন খায়; রয়েছে নিম্ন আয়ের অসংখ্য মানুষ। নিম্ন মধ্যবিত্তদের কথাও এক্ষেত্রে বাদ দেওয়া যাবে না। প্রকৃত অর্থে, নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো জিনিসের দাম যখন খুশি তখন ইচ্ছেমতো বাড়ালে তা সবার জন্যই কষ্টকর। সম্প্রতি এরকম একটি খেলা হয়ে গেল পেঁয়াজ নিয়ে। পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। যেখানে মানুষ কমপক্ষে এক থেকে দু’কেজি পেঁয়াজ কিনত, সেখানে এমন আকাশছোঁয়া দামে অনেককেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আধকেজি বা তারও কম কিংবা অনেককে পেঁয়াজ বাদ দিয়েই বাজার করতে হত।

এখনও পেঁয়াজের দাম পুরোপুরি সাধ্যের মধ্যে আসেনি। বর্তমানে আবার আলু নিয়ে শুরু হয়েছে একইরকম মূল্যবৃদ্ধির খেলা। শুধু কি আলু-পেঁয়াজ, বর্তমান বাজারে চাল-তেল, মাছ-মাংস, শাকসবজিসহ যেকোনো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসই নাগালের বাইরে এবং ক্রয় করা রীতিমতো কষ্টকর। ভাবতে সত্যিই লজ্জা হয়, আমাদের দেশের বাজারগুলোতে দ্রব্যমূল্য খুব সহজেই লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে বেড়ায়।

কেউ শুধু একটিবার যেকোনো জিনিসের দাম বাড়ানোর ইচ্ছেটা করলেই হলো, সে সহজেই তা করে ফেলতে পারে— এমন একটি চাকাকলের মধ্যে পড়ে গেছে গোটা দেশ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে— তাহলে কি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই এখানে? কেউ কি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না? কঠিন শাস্তির বিধান কি করা যেতে পারে না তাদের জন্য? তাহলে কি ধরে নেব, এ শক্তিশালী চক্রের হাতে সবার হাত-মুখ বাঁধা? সবাই চোখে কালো কাপড় জড়িয়ে চুপটি করে বসে আছে? সবাই খেয়ে-পরে একটুখানি বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সবাই আশা করে, নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকুক। কিন্তু তাই কি হয়? আমরা দেখি, বিভিন্ন সিন্ডিকেটের বেড়াজালে প্রায়ই আবদ্ধ থাকে সবাই। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ কেউ গ্রহণ করে না এবং সাধারণত করতেও দেখা যায় না।

বর্তমান সময়ে কারও মনে শান্তি নেই, করোনার আতঙ্ক কাটছে না কোনোভাবে— সেখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার শামিল। অবশ্য এ কষ্ট, এ যন্ত্রণা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। হয়ত যারা অকারণে খেয়াল-খুশিমতো এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছেন, তারা বুঝতেও চান না সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা। সবার মধ্যেই যেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার স্বপ্ন বিরাজ করে সারাক্ষণ। মহামারী করোনা এরই মধ্যে আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, আমাদের অনেককে নিঃস্ব করে দিয়েছে। অন্তত এ ক্ষতির কথা ভেবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর যেন নায্য মূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং তা যেন সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সহনশীল মাত্রায় মূল্য নির্ধারণের জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রদীপ সাহা: কবি ও লেখক
[email protected]

 
Electronic Paper