ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ধর্ষণ ও নারীর পোশাক

শারমিন সুলতানা রীনা
🕐 ১২:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০২০

আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি, যে সমাজ ধনীকে আরও ধনী গরিবকে আরও গরিব করছে। এর প্রভাব রাষ্ট্রসহ সমাজ পরিবারেও পড়ছে। আর তাই নারী-পুরুষ বিতর্ক ক্রমেই ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রাত্যহিক জীবনে। এর ফলে নারীর প্রতি বাড়ছে বৈষম্য। অনেকে নারীকে ভোগের সামগ্রী ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না। ধর্ম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ আসন। কিন্তু ধর্ম নিয়ে যাদের কাজকর্ম তারাও ধর্মের অপব্যাখ্যায় নারীকে ভোগের সামগ্রী করে ফেলেছে। প্রতিনিয়ত নারীকে পুরুষের লালসার শিকার হচ্ছে। তিন বছরের শিশু থেকে কোনো বয়সের নারী এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কোন বয়স বা কোন পরিবেশে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা এখনও অমীমাংসিত।

প্রধানমন্ত্রী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করেছেন। তাতেও কি ধর্ষণ বা নারীর প্রতি বিরূপ মানসিকতার পরিবর্তন হবে? সেটা অবশ্যই ভবিতব্য বলে দেবে। অনেকে নারীর পোশাককে দায়ী করছে। তাই যদি হবে, তাহলে তিন বছরের শিশুর কী পোশাক পরা উচিত সেটাও প্রশ্নের বিষয়। আবার মাদ্রাসাগুলোতে কী নির্মমভাবে ছোট ছোট ছেলেরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়, তা অনেকেই দেখে থাকবেন। আসলে আইন দিয়ে কিছুই রোধ করা সম্ভব নয়। নারী-পুরুষ দুজনের প্রতি থাকতে হবে শ্রদ্ধাবোধ। যতদিন এ শ্রদ্ধাবোধ ও নৈতিকতা পরস্পরের প্রতি সৃষ্টি না হবে ততদিন এমন ঘটনা ঘটবে। ফাঁসি বা কারাদ-ে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না। মৃত্যুর পর যে শাস্তি আর জীবিত অবস্থায় জেলখানার কয়েদিদের যে শাস্তি আমরা শুনতে পাই, মানুষ তাতে নিজেকে কতটা শুদ্ধ করতে পেরেছে! যে যে অবস্থায় আছে সে সেখান থেকেই শুরু করছে দুর্নীতি। কোনোভাবেই দুর্নীতি কমছে না। এটাও নারী নির্যাতনের একটি ধাপ। টাকা ছাড়া বা ক্ষমতা ছাড়া থানায় কোনো মামলা নেওয়া হয় না। তাতে করে দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত কেউ আইনের আশ্রয় নিতে সাহস পায় না।

পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা নারীকে পরোক্ষভাবে তৈরি করে ফেলেছে পণ্যে। হিজাব থেকে শুরু করে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, সাবান, স্নো, ক্রিম এমনকি কনডমের বিজ্ঞাপনেও নারীর প্রতিভার চেয়ে গ্ল্যামারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মেয়ের গায়ের রঙ কালো বলে বাবার আক্ষেপ আমার যদি একটা ছেলে থাকত! কথাটা মেয়ের কানে যেতেই ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ব্যবহার করে মেয়ে সাদা হয়ে যায়! তারপর বাবার মনের আশা পূর্ণ করে! এ হলো আমাদের মানসিকতা। প্রতিভার চেয়ে গ্ল্যামারকে কতটা প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে নির্বোধ নারী সেটা বুঝতে পারছে না। বুঝলেও নিজের বিবেককে প্রতিষ্ঠা ও টাকার কাছে বিক্রি করছে। এসব আচরণ থেকে আমাদের অনেক আগেই বের হয়ে আসা উচিত ছিল। কিন্তু এটা না করে আমরা বুর্জোয়া শ্রেণির কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি। নারী স্বাধীনতার নামে বেলেল্লাপনা ও অশ্লীলতায় মেতে উঠি। এ মানসিকতা থেকে আমরা বের কেন হতে পারি না এটাও একটা বড় প্রশ্ন। নারী প্রকৃতিগতভাবে পুরুষের তুলনায় শক্তি ও সাহসে কম হলেও মেধা মননে কোনো অংশেই কম নয়। সেটা আমরা সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস আদালত এমনকি মাটি কাটা বা ইট মাথায় করে নেওয়ায় নারীর সে কর্ম দেখি।

অনেকে পোশাককে দায়ী করে। সেটাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক মার্কেট বা ইউনিভার্সিটি ছুটির পর কিছু কিছু মেয়ের পরিহিত পোশাক দেখে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক দাঁড়িয়ে ঢোক গেলে। এটা আমার নিজের চোখে দেখা। রিকশাচালককে তখন কোথাও যেতে বললে সে যেতে চায় না। সটান দাঁড়িয়ে থাকে, মেয়েদের দেখতে! আসলে লিখলে অনেক কিছু লেখা যায়। তাতে অনেকে হয়তো রেগে যাবেন আমি নারী বলে এসব লিখছি বলে। বাংলাদেশের সিনেমার নায়ক-নায়িকা তাদের সন্তানকে এ পেশায় জড়িত করেন কজন! সেটাও আমরা অনেকেই জানি এবং বুঝি। কেউ চায় না তার প্রিয়জন অন্য পথে চলে যাক।

ঘটা করে নারী দিবস পালন করি, কেন করি তা আমরা জানি না। আমরা শুধু অনুকরণ করি। নারীকে মানুষ থেকে নারীতে রূপান্তর করা আর পুরুষ মানুষ হয়েই থাকে। প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত তার সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। একটা বয়সের পর সন্তান শাসন না মানলে সেখানে বাবা-মায়ের কিছুই করার থাকে না। সেটা ভিন্ন বিষয়। এ লেখাটা সবার জন্য নয়। যারা মেয়েদের ছোট চোখে দেখে বা লোলুপ দৃষ্টিতে তাকায় তাদের জন্য। আপনারা ভাবেন, আপনাদের ঘরেও মা বোন সন্তান আছে। মহাকাল কাউকে ক্ষমা করে না। আজ আপনি যা করছেন অন্য মেয়ের সঙ্গে, সেটা আবার আপনার ঘরেই ফেরত আসবে। পৃথিবী কাউকে ঋণী করে রাখে না। এখানেই সব ঋণ পরিশোধ করে যেতে হবে। সবার সুবুদ্ধি হোক।

শারমিন সুলতানা রীনা : সাহিত্যিক
[email protected]

 
Electronic Paper