ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ধর্মীয় উৎসব সম্প্রীতির বন্ধন

অপর্ণা দত্তগুপ্ত
🕐 ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২০

কিছুদিন পর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। সাধারণত মহালয়ার সাতদিন পর শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। কিন্তু এবার মল মাসের উপস্থিতির কারণে পূজা একমাস পিছিয়ে গেছে। যেহেতু মল মাসে কোনো মাঙ্গলিক কাজ হয় না, তাই এবারের দুর্গাপূজা শরৎকালের পরিবর্তে হেমন্তকালে অনুষ্ঠিত হবে।

যদিও পূজা হেমন্তকালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তবুও তা আমাদের সকলের কাছে শারদীয় দুর্গোৎসব বলেই সমাদৃত হবে। যেকোনো ধর্মীয় উৎসব ভালো খাবার এবং নতুন পোশাক পরার এক অন্যরকম বার্তা নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। এবং ধর্মীয় উৎসবের মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে একটি সম্প্রীতির বন্ধন হয়। ছোটবেলা থেকে আজ মাঝ বয়সে এসে এই-ই দেখে আসছি।

ছোটবেলায় দেখেছি, প্রতিবেশীরা খুব ভোরে ঈদের দিনে সেমাই, পায়েস, পিঠা ইত্যাদি খাবার নিয়ে আসত। আবার, শবেবরাতের দিন আমরা সব ভাই-বোন অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম কখন প্রতিবেশীর বাসা থেকে রুটি, পায়েস, হালুয়া, খাসি বা মুরগির মাংস ইত্যাদি খাবার আসবে। আবার মাকে দেখতাম পূজার সময় প্রতিবেশীর বাসায় চিনি, গুড় ও তিলের নাড়ু, বিভিন্ন রকমের মোয়া, ফল, পায়েস লুচি ইত্যাদি পাঠাত।

বাবা যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন (চৌমুহনী মদন মোহন হাইস্কুল) সেখানে হোস্টেলের ছাত্র এবং বাবার সহকর্মীরা আসতেন পুজোর সময় বাসায়, সে যেন এক মিলনমেলা! যেন সারা বছরের অপেক্ষা এই দিনটির জন্য! ভাইয়েরা যখন পড়াশোনা শেষ করে এবং কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখন পূজার সময় বাড়ি গিয়ে প্রথমেই মাকে বলতেন, ‘মা, বন্ধু এবং অফিসের সহকর্মী সবার জন্য নাড়ু বানিয়ে দেবেন, আমি আসার সময় আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।’

ঠিক একইভাবে, পুজোর পর যখন স্কুল খুলত, আমার সহকর্মীরাও অপেক্ষায় থাকত আমি কখন নাড়ু নিয়ে স্কুলে যাব। আমি মনে করি, এ অপেক্ষা সম্প্রীতির বন্ধন এবং ভালোবাসা এক ধর্মের লোকের প্রতি অন্য ধর্মের। শবেবরাতের ছুটির পর বা ঈদের ছুটির পর সহকর্মীরাও আমার জন্য বিভিন্ন খাবার নিয়ে আসত, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইসরাইল চাচা চুপিচুপি আমার ব্যাগটা খুলে একটা প্যাকেট ঢুকিয়ে দিত, বাসায় এসে দেখতাম শবেবরাতের হালুয়া, রুটি ইত্যাদি।

আসলে, প্যাকেটের মধ্যে খাবারের আদলে প্রকৃতপক্ষে অন্তর্নিহিত আছে ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি যেটা প্রকাশ করা যায় না। অনুভব করা যায়। যখন আমার সন্তান পড়ালেখা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখনই সে বলে, নাড়ু বানিয়ে দিতে। পূজার ছুটির পর অফিসে নিয়ে যাবে। এ আয়োজন নিয়ে কোনো ক্লান্তি নেই, শুধু আছে ভালোবাসা।

এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে আসছে ঘরে ঘরে মানুষের ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রতির বন্ধন কেবল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাতেই সম্ভব। এজন্যই বোধ হয় বলা হয়, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।

অপর্ণা দত্তগুপ্ত : অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক, শ্যামলী, ঢাকা ১২০৭

 
Electronic Paper