ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তারুণ্যের ভাবনায় স্বদেশ-সমকাল

খোলামত ডেস্ক
🕐 ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০

বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটিয়া
রাজধানীসহ সারা দেশের কোটি নগরবাসীর বাড়িভাড়া নিয়ে একটা প্রশ্ন। বাড়িভাড়া বৃদ্ধি কবে শেষ হবে? একটি বাসায় পাঁচ বছর, ১০ বছর থাকলেও বাড়িভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ হয় না। ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগের বাসা ছেড়ে দিয়ে নতুন বাসায় উঠেও কি কারওর স্বস্তি আছে? যখন কেউ একটা নতুন বাসায় ওঠে তখন মনে মনে ঠিক করে আর বাসা পাল্টাবে না। কিন্তু দেখা যায় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার সেই একই বিড়ম্বনা। তাদের জীবনটা যেন যাযাবরের মতো। নতুন বাসা খোঁজা, বাসাবদল করা যেমন ঝামেলা তেমনি কষ্টেরও বটে। টাকা যেমন খরচ হয় তেমনি টানাটানিতে নষ্ট হয় জিনিসপত্রও।

বাড়িভাড়ার আইনের বাস্তবায়নসহ বিষয়টি দেখভালের জন্য সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে মালিকরা নিজেদের সুবিধামতো ভাড়া বাড়িয়ে যাচ্ছে। স্বল্প আয় ও নিম্নআয়ের অসহায় ভোক্তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। দ্রব্যমূল্য, হোল্ডিং ট্যাক্স, আয়কর, গ্যাস, পানির দাম বৃদ্ধিসহ নানান অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। তাই বলব, ভাড়া বাড়ানোর বিভিন্ন অজুহাতস্বরূপে ভাড়াটিয়াকে দোষারোপ করা হলেও, মূলত দায়ী থাকে মালিকরাই। অগ্রিম টাকা আদায়, লাগামহীন ভাড়া, আর সার্ভিস চার্জ নামে অনৈতিক অর্থ আদায়ের ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আরোপ করা প্রয়োজন।

মোমেনা আক্তার
শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
[email protected]

ত্যাগ, ট্যাগ ও আমাদের জীবনযাপন
ত্যাগ : টয়লেটে গেলেই শুধু আমাদের মনে পড়ে, ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। এছাড়া জীবনে কোনো পর্যায়ে ত্যাগ স্বীকার করতে চাই না যেন! অনেক ক্ষেত্রে নিজের উন্নতি, ভালো থাকার জন্যও ত্যাগ স্বীকার করতে চাই না আর সেখানে অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার তো কথাই আসে না। একা একা কেউ বাঁচতে পারে না, জীবনে চলার পথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একে অপরের সহযোগিতার দরকার পড়ে। শারীরিক শক্তি বা অর্থনৈতিক খরচ ছাড়া উদার মানসিকতার মাধ্যমেও মানুষের সহযোগিতা করা যায়। ভূপেন হাজারিকার মানুষ মানুষের জন্য গানের একটা লাইন আছে ‘বলো কি তোমার ক্ষতি জীবনের অথৈ নদী পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি’। আসলে কোনো ক্ষতিই নাই কিন্তু হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার জন্য আমরা হাত বাড়াই না, হাত ধরতে আসলেও ছিটকে দিই।

ফেসবুক ট্যাগ : ফেসবুক ট্যাগ একটা আলোচিত বিষয়। বাংলাদেশে ফেসবুকের প্রারম্ভিক যুগে এটার ব্যবহার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে খুব আলোচনা হতো, এর ব্যবহারের পক্ষের চেয়ে বিপক্ষেই বেশি মানুষ ছিল কিন্তু তারপরও প্রায় সবাই-ই ট্যাগের শিকার হতো নিয়মিত। দেখা গেল কেউ রাত দুইটার সময় পোস্ট দিল ফিলিং অ্যালোং উইথ বল্টু, পল্টু অ্যান্ড টেন আদার্স। ট্যাগের বিপক্ষে আমার অবস্থান ধরে রাখতে পারলাম না। ফেসবুকে প্রায় কবি-লেখকরাই নিয়মিত কবিতা, গল্প বা যেকোনো কিছু লিখে পোস্ট করে তার আশপাশের সবাইকে গণহারে ট্যাগ দেন। তাই ফেসবুকের এই ট্যাগ এখন আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় আমরা ট্যাগ করি এবং ট্যাগের শিকার হই।

রাজনৈতিক ট্যাগ : গত এক যুগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশাল একটা পরিবর্তন আসছে। সহনশীলতার বদলে প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যবহারই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে জায়গা-জমি, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা সামাজিকভাবে কাউকে ঘায়েল করতে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগানো হয় কথায় কথায়। ক্ষমতাশীল, বিরোধীদল কিংবা রাজনৈতির সঙ্গে সম্পর্ক নাই সবধরনের লোকই এটা করে এবং এটার শিকার হয়। আর এটার প্রভাবও ব্যাপক পরিলক্ষিত হয় বা হচ্ছে। হামলা, মামলা, জেল পর্যন্তও গড়ায় বিষয়গুলো।

নাস্তিকতা বা ধর্মান্ধ ট্যাগ : আমরা কিছুতেই যেন সহনশীল আচরণ করতে পারি না, আমাদের আচরণ সবসময় মার মার কাট কাট। যারা নিজেদেরকে সেক্যুলার বা আধুনিকমনস্ক মনে করেন তারা কঠোরভাবে ধর্মীয় আদর্শ লালন করা ব্যক্তিকে ধর্মান্ধ ট্যাগ দিয়ে ফেলেন, ওদিকে আবার তিনিই ভিন্ন আদর্শের লালন করেন এবং সে আদর্শ বিস্তারেও নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। আবার যারা ধর্মীয় আদর্শকে কঠোরভাবে লালন করেন তারা বিরুদ্ধাচারণ করা কাউকে বাছবিচার ছাড়াই অনেক সময় নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে বসেন যা কোনোমতেই কাম্য নয়।

মধ্যবিত্ত ট্যাগ : আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের মধ্যবিত্ত ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আসলে এটাও এক ধরনের ট্যাগ এর ধারায় চলে আসছে, যে অতি বিলাসবহুল জীবনযাপন করে না আবার দিন আনে দিন খায় না তারাই যেন মধ্যবিত্ত। সারাজীবন একটা টানাপোড়েনের জীবন, হবে হবে করেও অভাবমুক্ত হচ্ছে না, অর্থকষ্ট দূর করার স্বপ্ন নিয়ে চলছে জীবনের ঘানি টেনে। আসলে কী দেখা যায়? দৈনিক ১০ থেকে ২০ ডলার বা ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা আয় করা চার সদস্যের পরিবারকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে পিউ রিসার্চের গবেষণায়।

আবার অন্য একটা মতে মধ্যবিত্ত বলতে চার সদস্যের পরিবার, নিজস্ব মালিকানাধীন বাসায় অন্তত দুইটা ঘর আর দুইটা বাথরুম আছে, আছে পৃথক পাকের আর বসার ঘর। তারা ঋণ করে কেনা হলেও অন্তত ১৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি ব্যবহার করে, বছরে একবার অন্তত ব্যয়বহুল তিন তারকা পর্যটনে বের হয়, বাসায় কাজের লোক রয়েছে, বাচ্চাদের শহরের ভালো মানের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে/ বেসরকারি মেডিক্যালে/ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াতে পারে। মাসে আয় অন্তত এক থেকে সোয়া লাখ টাকা আর মোট সম্পদের পরিমাণ এক কোটি টাকা তাদের মধ্যবিত্ত বলা যায়। এ পর্যায়ে দেখা যায় আমরা অনেকেই মধ্যবিত্ত থেকে নেমে গিয়ে দরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি।

মুহাম্মদ আবু তালহা
স্নাতক (চতুর্থ বর্ষ), লোকপ্রশাসন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

শিক্ষাব্যবস্থার সর্বাঙ্গে ব্যথা
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সর্বশেষ শিক্ষানীতি ২০১০-এর মুখবন্ধে এ মেরুদ- দিয়ে সংক্ষেপে নিখুঁত বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। যার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন রিপোর্ট ধারণের চেষ্টা চলছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষানীতিতে কতটুকু পরিবর্তন আনয়নে সক্ষম হয়েছে এই চেষ্টা? প্রথমে জানা যাক, শিক্ষা কী? শিক্ষা শব্দটা আচরণগত পরিবর্তন বোঝায়। শিক্ষা হলো বৃদ্ধি ও বিকাশমূলক প্রক্রিয়া। শিশু ও শিক্ষার্থীর মনের মধ্যে যে সব মানসিক শক্তি জন্মসূত্রে বিদ্যমান সেগুলো বাইরে আনা।

তাছাড়া শিক্ষকদের সংখ্যা কম হওয়াতেই একজন শিক্ষক নিচ্ছেন একাধিক ক্লাস। গণিত, আইসিটি শিক্ষক নেই এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম নয়। এছাড়াও রয়েছে শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, ক্লাস বর্জন, বেতন বৈষম্য, ক্লাসরুম সংকট, পাঠদান উপকরণের অভাব নিয়ে আন্দোলন করে বছরের বাকি সময়ে নির্দিষ্ট কিছু টপিক দিয়েই সিলেবাস কম্পলিট করে বসায় পরীক্ষায়। ফলে পাসের হার বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক শিক্ষার মান। মাধ্যমিক পর্যায়ে, দুটি পাবলিক পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীরা ভীত হয়ে যায় ফলে বছরের প্রথম দিন কোচিংয়ে ভর্তি করা হয় তাদের। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো করার উদ্দেশ্যে হাতে-কলমের শিক্ষার থেকে মুখস্থ বিদ্যাতে ঝুঁকে পড়ে।

ফলে, শিক্ষার মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না।উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আরও বেহাল দশা। গ্রামীণ কলেজগুলোতে ভালো মানের পড়াশোনা হয় না। তার বিভিন্ন কারণ হচ্ছে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, সাইন্স ল্যাবের অভাব, বিজ্ঞানের যোগ্য শিক্ষক না থাকা। তারা পাঠ্যবই নিয়েই মেতে থাকে। উচ্চশিক্ষার আকর্ষণীয় দিকগুলো তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক সমস্যা, সেশনজট কতিপয় কারণে হতাশায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণাভিত্তিক পড়াশোনা থেকে সরে গিয়ে চাকরিভিত্তিক গাইড-নোট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে চাকরির ক্ষেত্র নেই বলে। তারপরও চাকরি ক্ষেত্রে পাচ্ছে না যথাযথ সুযোগ সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসন সংকট দূর করে গবেষণামুখী পড়াশোনা করাতে হবে। গবেষণায় আর্থিক বরাদ্দ বাড়িয়ে কর্মমুখী কাজে অনুপ্রাণিত করতে হবে। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ও ডাটার জোগান নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হবে।

সাদিয়া সুলতানা
আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

আমরা কি পরিবর্তন হব
করোনাভাইরাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের অসুস্থতা শুধু করোনা নয়, বরং আরও ভয়ঙ্কর অসুস্থতা মানসিকতায়। প্রতিদিনের পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় ধর্ষণের খবর। করোনার এ কঠিন মুহূর্তেও বদলায়নি আমাদের হীন মানসিকতা।

করোনার পাশাপাশি আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে ভয়াবহ বন্যা সমস্যাও। যা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। মানুষগুলো অসহায় হয়ে ঠিকমতো তিন বেলা খাবার পেত না। পানিবন্দি এক বিভীষিকাময় জীবনযাপন। ঠিক সেই সময়েও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সরকারের বিতরণ করার জন্য দেওয়া চাল আত্মসাৎ করেছে। যে চাউলে তিন বেলা আহারের স্বপ্ন দেখত সেই অসহায় মানুষগুলো। কতটা বিকৃত মানসিকতার পরিচয় আমরা স্থাপন করেছি! আমরা দেখেছি রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের প্রতারণার ঘটনা।

মানুষের জীবন এবং দেশের সম্মানের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মানুষকে করোনার ভুয়া রিপোর্ট বিলিয়ে নিজ আখের ঘোচানোর চেষ্টা। বিশ্বের বুকে ছোট করেছেন আমাদের সম্মান। মেজর সিনহা হত্যাও জাতি অবলোকন করল। আলোচিত পথশিশু জিনিয়া অপহরণের ঘটনা ভেবে দেখুন। গা শিউরে উঠবে নিশ্চয়ই। শিক্ষিত বেশধারী নূর নাজমা আক্তার লুপা তালুকদার তাকে অপহরণ করেছিল। অভিযোগ আছে, তিনি এসব মেয়েকে অপহরণ করে পাচার করে দেন। কী অসুস্থ মানসিকতা এসব মানুষের! প্রশ্ন জাগে, করোনা তো কেটে যাবে, কিন্তু মানুষ কি সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন ও নৈতিক হবে!

হযরত আলী
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

সামুদ্রিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার হোক
ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ব্লু ইকোনমি। অর্থাৎ সমুদ্র থেকে যাই আহরণ করা হোক না কেন, যদি সেটা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয় তবে তা ব্লু ইকোনমির অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সমুদ্রে একটি আদর্শ মানচিত্র পেয়েছে বাংলাদেশ। আর উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশের সকল প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদ বাংলাদেশের তবে মহীসোপান এলাকায় যেকোনো দেশের জাহাজ চলতে পারে। বাংলাদেশ যে অঞ্চলের মালিকানা পেয়েছে সেখানে অন্তত চারটি ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালানো হলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার উপার্জন করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে চারটি তেল-গ্যাস উত্তোলন, মৎস্যসম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ এবং পর্যটন।

বঙ্গোপসাগরের অতলে প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছসহ ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি। প্রাণিসম্পদ ছাড়াও ১৩টি জায়গায় আছে মূল্যবান বালু, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম। এগুলোতে মিশে আছে বিভিন্ন মূল্যবান ধাতব উপাদান। তাছাড়া সিমেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে। এর তলদেশে রয়েছে বিপুল পরিমাণে সামুদ্রিক আগাছা। এসব প্রক্রিয়াজাত করলে অনেক রোগের ওষুধ তৈরি হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান ইসপিরুলিনা। বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদকে যথাযথভাবে আহরণ ও ব্যবহার করতে পারলে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে যেতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি নরওয়ের কথা, একসময়ের দরিদ্র দেশ সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তবুও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সমুদ্রসম্পদ আহরণ কিন্তু সহজ কোনো বিষয় নয়। সমুদ্রে খনিজসম্পদ অনুসন্ধান, খনন, আহরণ সবকিছুই প্রযুক্তিনির্ভর। গবেষকদের মতে, একটি জরিপ কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা উচিত, যেখান থেকে তথ্য মিলবে।

প্রয়োজনে বিদেশি দক্ষ সংস্থার সহায়তা নিতে হবে। সমুদ্রনির্ভর শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা জরুরি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান করতে হবে পাশাপাশি দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের সামুদ্রিক শিল্প নিয়ে কাজে আগ্রহী করে তুলতে হবে। সমুদ্র শিল্পকে আরও উন্নত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আলাদা বিভাগ চালু করে আলাদা গবেষণাগার তৈরি করা যায়।

আমরা সামুদ্রিক সম্পদকে এখনো ব্যবহার করতে পারছি না, তবে এই বিশাল সম্ভাবনার দ্বার যদি একবার খুলে যায় তাহলে দেশীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। হতেই পারে আমরাও নরওয়ের মতো উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সুযোগ পাব। সরকারের উচিত এ বিশাল অর্জনের সঠিক ব্যবহারে এবার কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে সুযোগকে কাজে লাগানো।

সানজানা হোসেন অন্তরা
শিক্ষার্থী, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 
Electronic Paper