ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ক্যাম্পাসের আনন্দ-বেদনা

খোলামত ডেস্ক
🕐 ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০

শিশুদের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব
করোনাভাইরাসের কারণে সর্বস্তরের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। দীর্ঘ ছয় মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে করে শিশুরা সারাদিন বাড়িতেই অবস্থান করছে। লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে এবং সামাজিক দূরত্ব রাখার জন্য অধিকাংশ বাবা-মায়েরাই শিশুসন্তানের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন বিনোদনের অংশ হিসেবে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর বদলে তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন গেমিং ডিভাইসে। যার ফলে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।

লকডাউনের সময়ে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ পরিবারে শিশুদের খেলনার তালিকায় প্রথমেই আসে স্মার্টফোন। এক গবেষণার তথ্য বলছে, স্মার্টফোন অন্য যেকোনো মাদকের চেয়ে বেশি আসক্ত করছে শিশুদের। চিকিৎসকদের মতে, স্মার্টফোনে আসক্তি শিশুদের মস্তিষ্ককে একমুখী করে ফেলছে এবং আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে শিশুদের কর্মস্পৃহা। বর্তমানে সময়ে এ আসক্তি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। স্মার্টফোন কিংবা গেমিং ডিভাইসে আসক্ত বাচ্চাদের আচরণের ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী করে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে শিশুরা এক নেতিবাচক ভবিষ্যতের দিকে ঝুঁকছে। 

দীর্ঘ ছয় মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে শিশুরা। ক্লাস পরীক্ষা না থাকায় তারা ক্রমেই বইবিমুখ হয়ে পড়ছে।

করোনাভাইরাসের ফলে দরিদ্রদের হার বেড়ে যাওয়ায় একটি অংশের পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুযোগ নেই অনলাইন ক্লাসেরও। তাছাড়া টেলিভিশন এ শিশুদের অনলাইন ক্লাস নেওয়ার দীর্ঘ সময় টিভি স্কিনে চোখ রাখার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানান শারীরিক জটিলতা। শিশুরা স্মার্টফোন কিংবা গেমিং ডিভাইসের পাশাপাশি আসক্ত হচ্ছে টেলিভিশনেও। বিভিন্ন ধরনের কার্টুন চ্যানেলে চোখ রেখেই তাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটছে।

ঘরবন্দি শিশুদের থাকছে না বাইরে খেলাধুলার সুযোগ। ফলস্বরূপ কোনো শারীরিক ব্যায়াম না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি। এ ছাড়াও করোনাভাইরাসের কারণে শিশুরা নানা ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একঘেয়েমি জীবনে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক জরিপে দেখা গেছে করোনার প্রভাবে ৯১ শতাংশ শিশু মানসিক চাপে রয়েছে। এ ছাড়াও মহামারির কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে যা আগামীর জন্য হুমকিস্বরূপ।

লামিয়া রহমান সুপ্তি
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

কুটির শিল্পের সুদিন ফিরুক
করোনার মধ্যে যদিও অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা সচল হয়েছে কিন্তু সচল হয়নি দেশের ঐতিহ্য, গৌরবের কুটির শিল্প। নিজের সৃজনী প্রতিভার মাধ্যমে কিছু সৃষ্টি করার নামই কুটির শিল্প। এই কুটির শিল্পের সঙ্গে অধিকাংশ গরিব লোক জড়িত। অবসর সময়ে তারা এ কাজে ব্যস্ত থাকেন। বাংলাদেশের কুটির শিল্পের মধ্যে মৃৎশিল্প, তামা-কাঁসা শিল্প, কর্মকার শিল্প, স্বর্ণকারের তৈরি পণ্য, তাঁত শিল্প ও চর্ম শিল্প প্রভৃতি। অতীতে বাংলাদেশের কুটির শিল্পের বেশ সুনাম খ্যাতি ছিল। এমন এক সোনালি যুগ ছিল, যখন ঢাকার মসলিন কাপড় ছিল পৃথিবীর বিখ্যাত।

এই মসলিন কাপড়ের মাধ্যমে বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখত। যা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গৌরব। অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি ব্যবহার করত এই মসলিন কাপড়। কিন্তু আমাদের দেশের কুটির শিল্পের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। বর্তমানে বাংলাদেশের কুটির শিল্পের সোনালি যুগ নেই। নেই কোনো আগের মতো কুটির শিল্পের সেই কারুকার্য। তবুও বৃহদায়তন শিল্পের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিছু কিছু কুটির শিল্প এখনো সচল আছে। এ সোনালি যুগের কুটির শিল্পের অবনতির কারণ হচ্ছে বর্তমানে আধুনিক কলের তৈরি সস্তা কাপড় বাজারে ছেয়ে গেছে। ফলে হাতেবোনা বস্ত্র শিল্প ধ্বংস হচ্ছে।

মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে সবার নজর কলে তৈরি সংস্থা ও ক্ষণভঙুর জিনিসের প্রতি। দেশের লোকদের স্বদেশি জিনিস ব্যবহারে অনীহা এবং বিদেশি পণ্যের প্রতি আগ্রহ। এ ছাড়াও আরও একটি প্রধান কারণ হচ্ছে বৃহদায়তন শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে টিকতে না পারা। কুটির শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে বৃহদায়তন শিল্পের পাশাপাশি কুটির শিল্পের স্থান দিতে হবে এবং একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক সুনিশ্চিত করতে হবে। কুটির শিল্পে উৎপাদিত পণ্য যুগোপযোগী ও সংস্কার সাধন করতে হবে।

দেশের লোকদের দেশীয় পণ্য ব্যবহারের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে এবং কুটিরশিল্পে যা উৎপন্ন হয় তা বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করতে হবে এবং বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। যার ফলে, দেশে কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে, বেকারত্ব হ্রাস পাবে এবং দেশে উৎপাদন বাড়বে ও দেশের অর্থনীতিতে উন্নতির প্রসার ঘটবে। এ ছাড়া প্রত্যেক দেশের কুটির শিল্প সেই দেশের ও জাতির ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিত। তাই কুটির শিল্পের সুদিন ফেরাতে দেশে কুটির শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে।

মু. সায়েম আহমাদ
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
[email protected]

মূল্যবোধের অভাবই অপরাধের কারণ
আমরা সবাই সুন্দরকে ভালোবাসি। সবাই চাই আমাদের সবকিছু সুন্দর হোক। কিন্তু সব কিছু সুন্দর হওয়ার জন্য প্রয়োজন সুন্দর মানসিকতা এবং সুন্দর ব্যক্তিত্ব। অনেক সময় আমরা সুন্দরের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে অনেক অসুন্দর কাজ করে ফেলি, যা অবাঞ্ছনীয় এবং যা অসুন্দর ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ। সুন্দরকে ভালোবাসা কিংবা দেখা কোনোটাই অপরাধ না। তবে যখন সেই মাত্রাটা অতিরিক্ত হয়ে যায় অর্থাৎ সুন্দরের জন্য অসুন্দর কাজ করি তখনই সেটা অপরাধ হয়ে যায়।

সুন্দর সম্পর্কে আরো দুই একটা কথা বলি। অনেকেই ভাবি, সুন্দরের মধ্যেই সুন্দর লুকিয়ে আছে। আসলে বিষয়টা এমন নাও হতে পারে। সব সুন্দর যে সুন্দর হবে এমন তো কথা না। কবিগুরুর উপমায় শিমুল ফল আর মাকাল ফলের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখান থেকে আমার বোঝানোর উদ্দেশ্য, আমাদের পরিচয় কাজে, সৌন্দর্যে না। আসলে এদের ওপরে ফিটফাট আর ভেতরে সদরঘাট।

সিটি গোল্ডকে আসল সোনার মতোই দেখা যায়, তাই বলে কি সেটা আসল সোনা হয়? আমরা সবাই মানুষ, কিন্তু মানুষ হিসেবে কয়জন মানুষের মতো সুন্দর কাজ করি। অনেক মানুষের কাজ দেখলে মনে হয় যেন উড়ে এসে জুড়ে বসাই এদের স্বভাব। একজনের হক নষ্ট করে নিজের আত্মাকে তৃপ্ত করাতেই যদি আমাদের কাছে সুন্দর লাগে তাহলে আমরা সভ্যতার কতটা সীমায় পৌঁছেছি? সভ্যতার প্রধান মাপকাঠি কী তা সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই। তবে তা যদি হয় ব্যবহার তাহলে বলব, সভ্যতার একদম তলানিতে আমরা অবস্থান করছি।

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’। আমাদের পরিচয় যদি ব্যবহারই বহন করে তাহলে আমাদের অবস্থান আর বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের অবস্থান একই কাতারে।

কথায় বলে, জিহ্বা যদিও ৩ ইঞ্চি লম্বা, তা একজন লোককে হত্যা করতে পারে। প্রথম যখন এই প্রবাদটা শুনি তখন তা বুঝতে না পারলেও এখন হাড়ে হাড়ে টের পাই এর মর্ম কথা। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় তার জিহ্বার মাধ্যমে এবং সুন্দর আচরণে। আজকাল বাংলাদেশে প্রতি মাসেই দুই একটা করে ভাইরাল টপিক থাকে। এই মাসের ভাইরাল টপিক হল পেঁয়াজ, ডা. সাবরিনা, সাহেদ, ড্রাইভার মালেক। গত কয়েক মাসের টপিক ছিল ক্যাসিনো, প্রিয়া সাহা, জামালপুরের ডিসি, রিফাত হত্যাসহ আরও কত কী।

বদরুল আলম রিপন
শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

সংবাদপত্র শিল্প রক্ষায় প্রণোদনা প্রয়োজন
বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের এক জরিপে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে প্রকাশিত ৬০.৩১ শতাংশ সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাওয়া। দেশের জনগণের চলাচল এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও লকডাউন থাকাকালীন জনগণের চলাচল সীমিত ছিল। ফলে তখন পত্রিকা বিক্রিও হয়েছে কম। এর কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষের। এ ছাড়া সংবাদপত্র ব্যবহারে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে এই ধরনের অনুমাননির্ভর ধারণা থেকে বহু পাঠক পত্রিকা পড়া থেকে বিরত থাকছেন।
দেশে-বিদেশে কী ঘটছে সেটা জানা যায় পত্রিকা পড়লে। পত্রিকা প্রকাশ কমে যাওয়ায় তথ্যবিকৃতি হচ্ছে, ছড়াচ্ছে গুজব। বিশেষ করে অধিকাংশ স্থানীয় পত্রিকা আপাতত বন্ধ থাকায় স্থানীয়ভাবে অপরাধ বৃদ্ধির আশঙ্কা বেড়েছে। পূর্বে স্থানীয় প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং তাদের অনুসারীরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের কারণে কিছুটা হলেও চাপের মধ্যে থাকত। তবে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন হকাররা। পত্রিকা বিক্রি করে সংসারের ভরণপোষণ করেন তারা। বিক্রি কমে যাওয়ায় নিশ্চিতভাবে তারা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। যেসব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদেরও কোনো কাজ নেই। ফলে তাদের জীবনেও নেমে এসেছে অন্ধকার। এসব সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষ প্রণোদনা দরকার।

পারভেজ আহমেদ ইমন
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

মোবাইল ফোনে করোনা সতর্কবার্তা
সাত মাস হয়ে গেল বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের। এর মাঝে লকডাউন পিরিয়ডও অতিক্রম হয়েছে। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলার অনুমতি দিয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজারের বেশি। সুস্থের সংখ্যা দুই লক্ষ ছয়ত্রিশ হাজারের বেশি। আর প্রাণঘাতী করোনা জীবন কেড়ে নিয়েছে চার হাজারের বেশি মানুষের। করোনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য সরকার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার সংগঠন পর্যন্ত সবাইকে সচেতন করেছেন। বাসা-বাড়িতে থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সিম কোম্পানিগুলো কল দেওয়ার পূর্বে ৫০ সেকেন্ডের করোনা সতর্কবার্তা যুক্ত করেছে। কার্যক্রমটি প্রথম দিকে উপকারি মনে হলেও, এখন তা জনমনে বিরক্তির জন্ম দিয়েছে। দেশের মানুষ মোবাইল ফোনে কলের আগে করোনা সতর্কবার্তা আর চায় না। বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছে, ইমার্জেন্সি কলের আগে করোনা সতর্কবার্তা জন্য বিলম্ব হচ্ছে। তাতে করে বিভিন্ন বিপদ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সমাজে। যেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা আপডেট সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। সেখানে সিম কোম্পানিগুলোর করোনা সতর্কবার্তা গৌণ। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আমলে নিয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহবান জানাই।

তাসনিম হাসান মজুমদার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম
[email protected]

 
Electronic Paper