পুলক-রত্নার মৃত্যু, এরপর?
আল সানি
🕐 ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২০
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ যুগেও ঈদের শুভেচ্ছা হিসেবে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে বরাবরই আমার ভালো লাগে; কাছের মানুষগুলোকে একটু আলাদাভাবেই অবাক করি এভাবেই। কোরবানির ঈদের ঠিক আগের দিন সন্ধ্যাতে এভাবেই সবাইকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলাম। হঠাৎ মোবাইল ফোনের কন্টাক্ট তালিকার একটা নামে চোখ আটকে গেল- পুলক-সি. সি. জে.। সি. সি. জে.-র অর্থ ক্যান্টনমেন্ট কলেজ যশোর, আর পুলক নামটি ‘ছিল’ ক্যান্টনমেন্ট কলেজ যশোরের এক বন্ধুর।
‘ছিল’ শব্দটা ব্যবহার করলাম, কারণ পুলক এখন আর নেই। কয়েক মাস আগে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পুলক মারা যায়। কিন্তু নম্বরটি এখনও আছে মোবাইল ফোনে। ওর নামটা দেখার পর আর কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি।
টানা কয়েকদিন শুধু ওর কথাই মাথার ভেতর ঘুরছিল। কাছের মানুষগুলো এভাবে কেন চলে যায়? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওর কথাটাও ধীরে ধীরে ভুলতে শুরু করলাম। গত শুক্রবার হঠাৎ চোখে পড়ল পর্বতারোহী রেশমা নাহার রতœার সড়ক দুর্ঘটনাতে মৃত্যুর খবর।
মেয়েটার সঙ্গে আমার কখনো কথা হয়নি, কোনোদিন দেখাও হয়নি। তবুও কেন যেন আবার ভয় পেতে শুরু করলাম। সঙ্গে প্রচ- রকমের খারাপ লাগা। রেশমার জায়গাতে আজ যদি বাইসেকেলে আমি মারা যেতাম? রেশমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব সক্রিয় ছিল, যদিও সেখানেও কখনো কথা বলার সুযোগ হয়নি। মৃত্যুর ঠিক আগের দিন রাতেও সে ফেসবুকে একটি রবীন্দ্রনাথে কবিতা আবৃত্তির লিংক শেয়ার দিয়েছিল। সে কি কখনো ভাবতে পেরেছিল আর কয়েক ঘণ্টা পরেই সড়কের ওপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে! অথচ এই সড়ককেই আপন করে নিয়েছিল।
বছরখানেক আগেও বন্ধুদের দাদা-নানার মৃত্যু সংবাদ শুনে আঁতকে উঠতাম। কিছুদিন আগে কাছের বন্ধুদের বাবা-মায়ের মৃত্যুর সংবাদ আবেগপ্রবণ করে ফেলত আমাকে, আর এখন কাছের বন্ধুদের হারাতে শুরু করেছি। বয়স কত হবে নাম জানা বা না জানা এসব বন্ধুর, অনূর্ধ ২৮ বা ৩০। মনে হচ্ছে এই বয়সেই দুরারোগ্য মৃত্যুভয় পেয়ে বসেছে আমাদের মতো তরুণদের।
আমরা সড়কে মারা পড়ছি, ভাগ্যের খোঁজে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবন হারাচ্ছি কিংবা আত্মহনন করে নিজেকেই শেষ করে দিচ্ছি। আর যারা বেঁচে আছি এখনও, তারা দারিদ্র্য, বেকারত্ব কিংবা অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তা ক্রমেই জীবিত থেকেও মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করে চলছি প্রতিনিয়ত। অথচ ছোট্ট এই জীবনে আমাদের অনেক কিছু দেওয়ার ছিল দেশটাকে, অনেক কিছু বদলানোর কথা ছিল আমাদের হাতেই; কিছুই পারলাম না আমরা। জানি না আর কত শত তরুণকে এভাবে সড়কে প্রাণ দিতে হবে কিংবা বদ্ধঘরে একাকিত্বের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে পচতে হবে। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক আমাদের, সকলের।
আল সানি : শিক্ষার্থী, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
[email protected]