করোনায় বেকারত্বের গতি
শ্যামলী তানজিন অনু
🕐 ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৬, ২০২০
বৈশিক মহামারি করোনায় ক্রমবর্ধমান হারে মানুষই কেবল মরছে এমনটা না। সেই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিকে দমিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে অর্থনীতি যে মন্দার সম্মুখীন তা অতীতে যে কোনো মহামন্দাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর তাই অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব কীভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটা এখন ভাবার বিষয়। তার সঙ্গে ভাবতে হবে করোনা পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠন নিয়েও। ভয়াবহ এই করোনার কারণে দেশ তথা সারা বিশ্বে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হবে। ইতোমধ্যে কর্মী ছাটাই শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা আইএলও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বিরুপ প্রভাব পড়ছে তাতে ৩৩০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের আংশিক বা পুরোপুরি বেকার হয়ে যেতে পারে। আইএলও আরও বলেছে, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন সংকট আর আসেনি। এছাড়া গতবছর ডিসেম্বরে আড়াই কোটি মানুষের নতুন করে বেকার হয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। ক্রমেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দীর্ঘ হচ্ছে।
উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত উভয় দেশগুলোর জন্য বেকারত্ব প্রধান সমস্যা। যে কোনো দেশে উন্নয়নের পথে বড় বাধা হল বেকারত্ব। করোনার প্রভাবে বিশ্বের ছোট বড় মাঝারি সব শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এই ক্ষতি সারাতে কর্মী ছাটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত নেবে। যার ফলে বিশ্ব বেকারত্বের মতো বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। যে সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা বছরের পর বছরের ফল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ নাগরিক বেকার ভাতা দাবি করেছে। বেকার সমস্যা কতটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে এই ভাইরাসের কারণে। এই মুহূর্তে উদীয়মান দেশগুলোর প্রয়োজন আড়াই লাখ ট্রিলিয়ন ডলার। এই মন্দা ২১ সালে সামলে ওঠা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। বিশ্ব অর্থনীতির মুল ধাক্কাটা খাবে কর্মী ছাটাইয়ের মধ্য দিয়ে। গত মার্চে স্পেনে বেকারত্বের সংখ্যা এ যাবতকালের সর্বাধিক। দেশটির সরকারি হিসাবে বর্তমানে বেকারত্বের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ।
তার মানে এক মাসে বেকারত্বের হার বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। এক পরিসংখ্যানের হিসাবমতে, লকডাউনের শুরু থেকে স্পেনে চাকরি হারিয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৮২২ জন। যার মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার অস্থায়ী কর্মী। বিশ্বের কয়েক দেশ বাদ দিলে সব দেশেই প্রায় করোনায় প্রাণহানির সঙ্গে বিপর্যস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। অর্থনীতির একটি দিক চাকরির বাজার যা অর্থনীতিকে পুনর্গঠিত করতে পারে। তবে করোনার কারণে এই দিকের টালমাটাল অবস্থা। বিশ্বে দৈনিক করোনার ছোবলে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। চীনের অবস্থা সব থেকে বেশি ভয়াবহ ছিল। তবে সেই ঝুঁকি চীন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যতিব্যস্ত সারাবিশ্ব। এই পরিস্থিতি যদি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে তবে অর্থনীতি আরও বড় বিপদের সম্মুখীন হবে। মূল কথা, করোনায় যে হারে বেকারত্ব বাড়ছে।
এই অবস্থা চলমান থাকলে দেশ তথা বিশ্ব অর্থনীতির সিংহভাগ অচল হয়ে পড়বে। ঘরে ঘরে খেয়াল করলে এখন বেকার যুবক-যুবতী চোখে পড়ে। যার দরুন পরিবারে অশান্তি ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি কবে স্বভাবিক হবে, কবে আবার মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত যুবক-যুবতী ছুটবে কাজের খোঁজে। কেউ ফিরবে পূর্ব কর্মস্থলে।আর তাই বেকারের কথা বিবেচনা করে নিজ উদ্যাগে কিছু কাজ করা উচিত। সেটা হতে পারে অনলাইন বিজনেস, আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং ইত্যাদি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
শ্যামলী তানজিন অনু, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া