ধর্ষণ ও নির্যাতন বন্ধে ভাবতে হবে
কাজী সুলতানুল আরেফিন
🕐 ৭:২২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৩, ২০২০
কিছুদিন পর পর চারদিক থেকে বিভিন্ন পন্থায় নারী নির্যাতন আর ধর্ষণের খবর আসে; অনেক সময় আর্তনাদে কেঁপে ওঠার মতো ভয়ঙ্কর খবরও ভাসে। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে কাঁদার খবর। এমনকি এই করোনাকালের ক্রান্তিলগ্নেও থেমে নেই এই নির্যাতন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি খবর মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। এ মহামারিতে সাধারণ মানুষ বাঁচবে নাকি মরবে সে চিন্তায় অস্থির। অথচ কতিপয় কুলাঙ্গার নিজেদের কার্যসিদ্ধি করে চলেছে। অবশ্যই এই পশুদের কাছে অপরাধ করার জন্য কোনো বাছ-বিচারের প্রয়োজন হয় না। এরা সবসময় অপরাধ করে বেড়ায়। সুযোগ পেলেই নিজেদের ভয়ঙ্কর রূপ দেখাতে পিছপা হয় না।
এ যেন ধারাবাহিকভাবে চলমান প্রক্রিয়াতে শুরু হয়েছে। থামবে কখন বোঝা মুশকিল! তাও পৈশাচিক বর্বরতায় নির্যাতন। অনেক সময় নির্যাতন করেও থেমে থাকে না; তারপর হত্যা করা হয়। যারা এগুলো ঘটাচ্ছে তাদের মনুষ্যত্ব দূরে থাকুক, পশুত্ব আছে কিনা সেটাও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ পশুরাও এমন নির্যাতন দেখলে কেঁপে উঠবে। যারা এমন নির্যাতন করছে তাদের মনে হয় না যে যাকে নির্যাতন করা হচ্ছে সে একজন মানুষ। মানুষের প্রতি মানুষের অনুভূতি জেগে না উঠলে বুঝতে হবে সে মানুষ নয়, অন্যকিছু। মূলত নির্যাতনকারীরা পশুই। নারী নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হলে সব পুরুষ হেয় হয়। ছোট হয়। এদের রক্ষা করা বা পালন করার জন্য থাকে আরেকটি পশুর দল।
নিজের ঘরের নারীরা যেমন সবার আপনজন তেমনি অন্য নারীরাও কারো না কারো আপনজন। এই নারী নির্যাতন বা নারীদের চলার পথে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শুধু নারীরা সচেষ্ট হলে চলবে না। এককভাবে কোনো গোষ্ঠী বা সংঘঠন প্রতিবাদী হলেও চলবে না। এই জন্য নারী পুরুষ সবাই এবং সমাজের আর দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই এদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রাচীর গড়ে তুলতে হবে।
প্রথমে নারীদের সম্মান দেখাতে হবে। তাদের চলচল নিরাপদ করতে হবে। কারণ নারীরা যদি চলাচলের পথে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তাহলে কাজে-কর্মে তারা কখনই এগিয়ে যেতে পারবে না। একদল পশু সবসময়ই মুখিয়ে থাকে, সুযোগ খোঁজে নারীদের হেনস্তা করার জন্য। এই পশুদের হাত সব সময় নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর।
এদের বিরুদ্ধে আজ সোচ্চার হয়ে উঠার সময় এসেছে। নারীকে উত্যক্ত করার দৃশ্য চোখে পড়া মাত্রই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ধরে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া উচিত। নারী নির্যাতনের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে আসামিদের সাজা নিশ্চিত করলে এর কিছু ভালো প্রভাব দেশে পড়বে। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের নারীদের শিক্ষার হার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মনে সাহস বাড়ানোর প্রচেষ্টা করতে হবে। সমাজে আর দেশে নারীদের ভূমিকা সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে। প্রতিটা নারীকে তাদের কাজের মূল্যায়ন করতে হবে।
নারীদের সাহসের সঙ্গে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সাহস দিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে মানবসমাজে এক শ্রেণির পশুকে ভয় পেয়ে দমে থাকলে চলবে না। এই নারীদের যারা মানুষ ভাবে না তাদের চিন্তায় একবারও আসে না এই নারীর গর্ভেই তার জন্ম।
ধর্ষণ আর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য আমাদের দ্রুত নতুন করে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে নতুন করে আইন পাস করতে হবে। নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। ধর্ষকের বিচার বিলম্ব না করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার ও সাজা কার্যকর করলে ধর্ষণ কিছুটা হলেও কমত। অন্যদিকে এ অপরাধের শাস্তি বাড়িয়ে ফাঁসি করা যেতে পারে। ধর্ষণ রোধে এখন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে কেবল প্রতিহত করা যাবে না। এর শাস্তির ভয়াবহতা বাড়িয়ে পশুদের মনে ভয়ের কম্পন ধরাতে হবে। কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরলাম।
প্রস্তাবনা ১ : ধর্ষণের শাস্তি খুব দ্রুত দেওয়ার আইন চালু করা হোক। এতে পশুরা কিছুটা ভয় পাবে!
প্রস্তাবনা ২ : ধর্ষণের শাস্তি সর্বোচ্চ করা হোক। ফাঁসিসহ মালামাল ক্রোক করার বিধান চালু হোক!
প্রস্তাবনা ৩ : ধর্ষকের শাস্তি ঢাকঢোল পিটিয়ে বা প্রকাশ্যে প্রচার করে দেওয়া হোক। এতে পশুদের মনে কিছুটা প্রভাব পড়বে!
প্রস্তাবনা ৪ : ধর্ষক প্রমাণ হওয়ার পরে তার ছবির বিজ্ঞাপন সারা দেশে প্রচারের ব্যবস্থা করা হোক!
প্রস্তাবনা ৫ : ধর্ষককে সহায়তাকারীদের একইভাবে শাস্তি এবং সামাজিকভাবে হেয় করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক!
প্রস্তাবনা ৬ : ধর্ষকদের সামজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে নাগরিক সকল অধিকার কেড়ে নেওয়া হোক!
এসব প্রস্তাবনার সঙ্গে নতুন কিছু যোগ করা যেতে পারে। আসুন সবাই মিলে নারীর অবমাননা রুখে দিই।
কাজী সুলতানুল আরেফিন, পূর্ব শিলুয়া, ছাগলনাইয়া, ফেনী