ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফলপ্রসূ হোক অনলাইন ক্লাস

এম. জুবায়ের হোসেন
🕐 ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০

সময়ের প্রেক্ষাপটে অনলাইন ক্লাসকে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি না, সংকটকালীন ক্লাস বলা যেতে পারে। শিক্ষা যেহেতু মৌলিক চাহিদার একটি উপাদান, কোনোক্রমেই এ ব্যাপারে কারোই গা ছাড়া সিদ্ধান্ত কাম্য নয়। নচেত জাতিকে করোনা কেটে যাওয়ার পর শিক্ষা খাত নিয়ে বড়সড় মাশুল দিতে হতে পারে। মার্চে সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার পর ইউজিসি এক নিবন্ধে ঘোষণা দিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সবসময় টাচে থাকতে হবে। খুব প্রশংসনীয় নির্দেশ বটে।

কিন্তু কীভাবে অনলাইনে ক্লাস চলবে অথবা শিক্ষকরা কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টাচে থাকবে সে ব্যাপারে কিঞ্চিৎ ও দিকনির্দেশনামূলক ধারণা দেওয়া হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও ঠিক একই ধরনের ঘোষণা এলো দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে। কিন্তু ঘোষণা বাস্তবায়ন করার নেপথ্যে কোনো কার্যকরী যুক্তিযুক্ত যুক্তি বা সহযোগিতার কথা মেলেনি। নীতিনির্ধারণী মহল বোধগম্যতা অর্জন করতে চেষ্টা করেনি যে প্রতিটি শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের এই সংকট মুহূর্তে একটা স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার আছে কি-না? যাদের নেই তারা এই আপদকালীন সময়ে একটা স্মার্টফোন কেনার সাধ্য কতটুকু?

ধরা যাক, কোনো রকমে একটা ফোন বা কম্পিউটারের ব্যবস্থা হলো; কিন্তু এ প্রযুক্তি ব্যবহার করার মতো সবার প্রযুক্তিজ্ঞান আছে কি-না? আচ্ছা, জ্ঞানও না হয় অর্জন করা গেল; কিন্তু প্রান্তের ইন্টারনেট সংযোগ ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান কে দেবে? অথবা একটা ক্লাস করতে ডাটা কিনতে যে ন্যূনতম গড়ে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা খরচ হবে এ ব্যয়ভার গ্রহণ করার সাধ্য কি সবার আছে? বিষয়গুলো চিন্তা করলে অবশ্যই হয়রানি বা বৈষম্যের কথা এমনিতে চলে আসবে। কয়েকদিন আগে নিউজে দেখলাম এক শিক্ষক পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য গাছে উঠে পাঠদান করছেন! ব্যাপারটা নিয়ে অনেকেই অনলাইনে হাসাহাসি করলেও আমার কাছে খবরটা খুব বিপজ্জনক ও উদ্বেগের মনে হয়েছে। ব্যাপারটা মোটেও এ রকম না, যে অনলাইন ক্লাসের বিপক্ষে অবস্থান করছি।

 বরং কথা বলছি যথোপযুক্ত বৈমষ্যহীন হয়রানিমুক্ত ফলপ্রসূ ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে, যেহেতু আমাদের দেশটা নিম্ন মধ্যম আয়ের ও আমরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছি। পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে না হয় মোটামুটিভাবে অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নেওয়া গেল, কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা কী হবে? কলেজ বা ডিপ্লোমা কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের কি অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার সার্বিক সক্ষমতা আছে? অথবা পিএসসি, জেএসসি জন্য টিভিতে চালু করা ক্লাস দেখার মতো টিভি, বিদ্যুৎ সবকিছুর সমন্বয় করে এ ক্লাসগুলো করতে পারছে কি-না? মুখবদ্ধ ও ঘরবন্দি জীবন শুরু হওয়ার পর শিক্ষাব্যবস্থার মান ঠিক রাখতে অনলাইন ক্লাস বা পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণ বা বৃত্তির ব্যবস্থা করতে পারত। মোবাইল বা কম্পিউটার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে সংকটকালে এ সেবাগুলো দিতে পারত।

বাজেটে ইন্টারনেট সংযোগের সেবা বৃদ্ধি করে খরচ কমানো দরকার ছিল। এতে এ সংকটকালে মানুষের শিক্ষামুখী ও ঘরমুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়ত। যা-ই হোক, সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে যদি এই অনলাইন ক্লাস পরিকল্পিতভাবে চালু রাখা যায়, তবে অবশ্যই অস্বীকার করার সুযোগ থাকবে না যে, আমাদের শিক্ষাখাত অনেকটাই উপকৃত হবে এবং আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে আরও একধাপ এগিয়ে থাকবে। ইউনেস্কোর এক প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর জন্য বিশে^র ১৬৫টি দেশের প্রায় ১.৫ বিলিয়ন শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত।

 তাই অনলাইন ক্লাস চালিয়ে নিতে হবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক, যাতে এ ক্লাস সমগ্র জাতির জন্য ফলপ্রসূ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে যেহেতু করোনা সহসা যাচ্ছে না, তাই আমাদেরও স্থায়ী ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ক্লাসগুলোর ব্যাপারে মানদণ্ড ঠিক করা জরুরি। করোনা পরবর্তী সময়েও কি এ ক্লাসগুলো আবার নেওয়া হবে? পরীক্ষাগুলো কখন, কীভাবে হবে? যাদের ব্যবহারিক ক্লাস আছে তাদের জন্যও সিদ্বান্ত নিতে হবে। এ আপদকালকে পুষিয়ে নিতে করোনা পরবর্তী রূপরেখা নিয়েও এখনই ভাবতে হবে।

সুষ্ঠু রূপরেখার মাধ্যমে এ অনলাইন ক্লাস চালিয়ে নিতে পারলে আমাদের অর্জিত হবে প্রচুর অনলাইনভিত্তিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। প্রান্ত থেকে কেন্দ্রের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিবিম্ব জাতির সামনে প্রতিনিয়ত ফুটে উঠবে। বিজ্ঞ বিজ্ঞ শিক্ষকদের লেকচার পাওয়া যাবে অনলাইনে। এ ক্রান্তিকালে যে যে শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রাখছেন, থাকছেন আপনাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা থাকবে সবসময়। আপনাদের এ সহায়তা জাতিকে আরও শক্তি ও সাহস দেবে ভবিষ্যতে দুর্দিনের পথ চলার। এ ক্রান্তিকালে শিক্ষাখাতকে জাগিয়ে রাখার জন্য দেশের উচ্চ মহল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির মনে শিক্ষাখাত নিয়ে চলমান সংকট কাটিয়ে তোলার জন্য শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

এম. জুবায়ের হোসেন : শিক্ষক ও গবেষক

 
Electronic Paper