ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বিড়ম্বনা

সাহাদাৎ রানা
🕐 ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২০

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। যাতে বিলম্ব মওকুফ ছাড়া আরও সময় নিয়ে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সব কর্মচারীর সত্যিকারের জনসেবকের ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে সবার পাশে থাকতে হবে। যাতে কারো মধ্যে মাস শেষে বাড়তি বিল নিয়ে আর চিন্তা করতে না হয়।

সারা বিশ্বে এখন প্রধান আলোচনার বিষয় করোনাভাইরাস। প্রধান হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। কেননা, প্রতিদিন সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এর বাইরে নয় বাংলাদেশও। বাংলাদেশেও এখন ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। অবশ্য এমন পরিস্থিতির মধ্যেও থেমে নেই মানুষের জীবনযাপন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও সবাই যার যার সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এর মধ্যেও কাজ করছে ভয় আর উৎকণ্ঠা। বেঁচে থাকার প্রশ্নে এখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সবাই যার যার মতো লড়াই করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

এ লড়াই শুধু করোনা নামক একটি ক্ষুদ্র ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়, অনেক কিছুর সঙ্গেই লড়াই করতে হচ্ছে মানুষকে। সবার আগে লড়াইটা বেঁচে থাকার প্রশ্নে। সবার মতো বাংলাদেশের মানুষও এই লড়াইয়ে সামিল। তবে বাস্তবতা হলো আমাদের দেশে করোনাকালীন এমন কঠিন সময়ে সবাই কষ্টে আছেন। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এসব মানুষদের জীবন কাটছে নিদারুণ কষ্ট ও শঙ্কার মধ্যে। এর পেছনে রয়েছে অনেকগুলো যৌক্তিক কারণ। করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দেশের অনেক শ্রমজীবী মানুষ। তাই সংসার চালানো সবার জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে কষ্টসাধ্য। এমন খবরের মাঝে আরও একটি খবর সবাইকে অস্বস্তি দিচ্ছে।

যখন অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঠিকমতো চলতে পারছে না তখন আবার বিদ্যুৎ বিল হয়ে দাঁড়িয়েছে এক ধরনের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সারা দেশেই চলছে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে হয়রানি। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও করোনার সময়ে বাড়তি বিল এসেছে অনেকের। অথচ লকডাউনের কারণে অনেকে বাসা থেকে গ্রামে চলে গেলেও সেই বন্ধ বাসায় বিদ্যুৎ বিল এসেছে কয়েকগুণ। সবার প্রশ্ন বন্ধ বাসায় তবে কারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করল। তাই অনেকে এমন বাড়তি বিদ্যুৎ বিলকে ভূতুড়ে বিলও বলছেন!

দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন হাজার হাজার গ্রাহক তাদের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিড়ম্বনা ও বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ অন্য সময়ের চেয়ে গত দুই তিন কয়েক মাস অস্বাভাবিক বেশি বিল এসেছে। অথচ, এই সময়ে সবচেয়ে কম আসার কথা। বেশি বিলের বিষয়ে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলে তারা সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। শুধু বলছেন পরবর্তী বিলের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা। তবে অনেক জায়গায় বলা হচ্ছে গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল নেওয়া হবে না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা কতটুকু হচ্ছে বা হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এখানে সবচেয়ে সঙ্কটের বিষয়ে হলো করোনার বিস্তার রোধে অনেক গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে মিটার রিডিং নিয়ে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করা হয়নি। এটা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এখানে মূলত বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন আগের বছরের একই সময়ের বিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিল করেছে।

এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যাদের বাসায় গত দুই-তিন মাস মিটার বন্ধ ছিল তাদেরকে বিদ্যুৎ বিভাগের ইচ্ছেমতো বিল ধরিয়ে দেওয়া অনভিপ্রেত। বাস্তবতা হল, লকডাউনের কারণে অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এসময় গ্রাহক বাসায় না থাকলেও ঠিকই বিদ্যুৎ বিল এসেছে। শুধু তাই নয়, বাসার সবকিছু বন্ধ থাকার পরও অতিরিক্ত বিল এসেছে। এটা গ্রাহকের জন্য কোনো স্বস্তির খবর নয়। তাই গ্রাহকরা এমন অতিরিক্ত বিল দিতে আগ্রহী নয়। অবশ্য এমনটা শুধু কয়েকজন গ্রাহকের ক্ষেত্রে হয়নি। হয়েছে সারা দেশে হাজার হাজার গ্রাহকের সঙ্গে। এরই মধ্যে আরও একটি শঙ্কার খবর সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া বিল জমা দিতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবেন না তাদের বিদ্যুতের লাইন কাটা হবে। যেখানে গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিল কোথা থেকে দেবেন সেই ভাবনায় রয়েছেন সেখানে লাইন কাটার আতঙ্ক সবাইকে আরও বেশি শঙ্কিত করে তুলেছে।

যদিও শুরুতে করোনা পরিস্থিতির কারণে সংক্রমণ এড়াতে লাইন ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে মওকুফ করা হয়েছিল বিলম্ব বিল। এটা অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এখন সেই বিল পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে। গ্রাহক তার বিল অবশ্যই পরিশোধ করবেন। তবে শুধু বিলম্ব বিল মওকুফ করলেই এক্ষেত্রে বাড়তি বিলের সমস্যার সমাধান হবে না। অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে যথাযথ সমাধান প্রয়োজন। তবে অনেক গ্রাহক লাইন কেটে ফেলার ভয়ে ইতোমধ্যে কয়েক মাসের বিল পরিশোধ করেছেন। তাদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে গ্রাহক যদি ব্যবহারের চেয়ে বেশি বিল পরিশোধ করে থাকেন তবে সেটি পরের মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এটা হয়ত সমাধানের একটি পথ।

কিন্তু করোনার কঠিন সময়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকের পক্ষে এখন বাড়তি অর্থ ব্যয় করা সহজ কাজ নয়। কারণ অনেককে শুধু নিত্যদিনের খাদ্যসামগ্রী জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে বাড়তি অর্থ খরচ করা তাদের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতোই। তাই যাদের অতিরিক্ত বিল দেওয়া হয়েছে সেটা সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা উচিত। এখানে গ্রাহক যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেটা অবশ্যই সবার আগে দেখতে হবে।

শুধু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে নয়, অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুৎ পাওয়া না পাওয়ার বিষয় নিয়েও। অনেক এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। কখনও এক থেকে তিন ঘণ্টা আবার রাতে গেলে সারারাত বিদ্যুৎ না আসার অভিযোগও রয়েছে অসংখ্য। বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে যথাসময়ে সেবা না পাওয়ার অভিযোগও কম নয়। তাই নিশ্চিত করতে হবে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সেবা। তবে এটাও সত্য অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সারা দেশকে বিদ্যুতের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার অনেকাংশে সফলও। কিন্তু এত সফলতার মাঝে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের খবর কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে এটাও সত্য সারা দেশে অবৈধ অনেক বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। যা কিছু অসাধু কর্মচারীর সঙ্গে আঁতাত করে গ্রাহকরা করে থাকেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের অর্থনীতির। তাই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি। সারা দেশে যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে তা বিচ্ছিন্ন করতে হবে। যারাই অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তবেই কমে আসবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের সংখ্যা। লাভবান হবে দেশ, দেশের অর্থনীতি।

আবারও অতিরিক্ত বিল প্রসঙ্গ। কারণ প্রসঙ্গটি সত্যি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উচিত গ্রাহকদের কথা ভেবে বাড়তি বিলের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা। বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা আরও বাড়ানো। কারণ কাজ না থাকায় অনেকের কাছে অর্থ নেই। এমন অবস্থায় একসঙ্গে তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল দেওয়া বেশিরভাগ গ্রাহকের জন্যই কঠিন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। যাতে বিলম্ব মওকুফ ছাড়া আরও সময় নিয়ে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সব কর্মচারীর সত্যিকারের জনসেবকের ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে সবার পাশে থাকতে হবে। যাতে কারো মধ্যে মাস শেষে বাড়তি বিল নিয়ে আর চিন্তা করতে না হয়।

সাহাদাৎ রানা : সাংবাদিক ও কলাম লেখক

[email protected]

 
Electronic Paper