ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি

মো. আব্দুর রহিম
🕐 ৭:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২০

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু। আমি একজন শিক্ষক। নাম মো. আব্দুর রহিম, লেখক নাম রহিম আব্দুর রহিম। আপনার সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এ যাবৎ প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। আপনার সুচিন্তার ফলাফলই আলেম সমাজকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে।

আপনি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষিতদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি প্রদান করেছেন। সারা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণ, এক লাখ মসজিদের প্রত্যেকটি মসজিদে, একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন; যারা সম্মানী পাচ্ছেন ৪,৫০০ টাকা। করোনাকালে আপনি প্রায় সারা দেশের মসজিদগুলোর ইমাম ও খেদমতকারীদের জন্য ৫,০০০ টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামো তুলনাহীন উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।

দেশের আলেম ওলামাদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদ জাতীয়করণ তারই অবদান। তাবলিগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদ নির্ধারণ, উপমহাদেশের সহবৃহৎ টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা প্রদান তিনিই করেছেন। শুধু তাই নয়, এক সময়কার মুষ্টি চালে পরিচালিত বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষকদের মূলধারায় এনে সম্মানী ভাতা প্রদান শুরু করেন। যা আপনার আমলে, সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈষম্যহীনভাবে বেতন-ভাতাদি পেয়ে যাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্থপতিকন্যা আপনি, আপনার হাতে পিতার উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকবে এটাই স্পষ্ট। আপনার সরকারের আমলে জাতীয় শিক্ষানীতিতে ইসলামী শিক্ষাকে অতীব গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কয়েক হাজার মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ, প্রায় ২০ হাজার পাঁচশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন, একশটি মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা চালুকরণ ও ইসলামি এরাবিক এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নানামুখী কর্মসূচির মাধ্যমে পাঠ্যক্রম চলাসহ রকমারি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায়, আপনার সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। একই সঙ্গে জাতির জনকের মাদ্রাসা উন্নয়ন ভাবনা অতি দ্রুত প্রতিফলিত হচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরপরই দেশের শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেন। তারই সুযোগ্য কন্যা আপনি ও আপনার সরকার বিগত ১১ বছরে ৩৩১ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করেন। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি দেশের ৪ কোটি ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৫ কোটি নতুন বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। এই বই প্রত্যন্ত গ্রামের মাদ্রাসাপড়–য়া হতদরিদ্র খেটে খাওয়া, ছেঁড়া জামা-জুতার শিশুরা পেয়ে খুশি হয়েছে।

হযরত মোহাম্মদ (স.) উম্মতদের ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত করার জন্য সর্বপ্রথম তার সাহাবা ছায়েদ বিন আকরামের বাড়িতে, মক্কা নগরীর নিকটস্থ সাফা পাহাড়ের পাদদেশে ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাসা স্থাপন করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে এ উপমহাদেশে মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের জন্য লর্ড হেস্টিংসের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৭৮০ সালে স্থাপিত হয় কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা। ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা স্থাপিত হয় ১৯৪৯ সালে। এভাবেই উপমহাদেশ তথা বিশ্বের সর্বত্রই ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আরও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।

কালের ঘূর্ণায়নে যে প্রতিষ্ঠানে আরবির পাশাপাশি বাংলাসহ অন্যান্য ভাষায় জ্ঞানদান করা হচ্ছিল। আপনার আমলে এই মাদ্রাসা শিক্ষায় আধুনিক মাত্রা যোগ হয়েছে। আমি এই ধরনের একটি আলীম (প্রস্তাবিত ফাযিল) মাদ্রাসার বাংলা প্রভাষক। চাকরির শুরুতে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার নওহাটা ফাযিল মাদ্রাসায় বাংলা প্রভাষক হিসেবে ১৯৯৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেছিলাম। পরে কর্মস্থল পরিবর্তন করে পঞ্চগড় জেলার প্রত্যন্ত পল্লীর গলেহাহাট আলিম (প্রস্তাবিত ফাযিল) মাদ্রাসায় একই পদে যোগদান করি। চাকরির বয়স দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর ৪ মাস। প্রভাষক হিসেবেই রয়েছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

এ সমস্যা শুধু আমার নয়, সারা দেশের আলিম এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ পর্যায়ের সকল প্রভাষকের। আনুপাতিক ৫:২ বিধির কারণে অনেক শিক্ষকই কর্মজীবন শেষ করছেন প্রভাষক হিসেবে। অথচ আমাদের ছাত্ররাই সরকারি কলেজ কিংবা কোনো বেসরকারি ডিগ্রি কলেজে চাকরিতে যোগদানের পর, আট বছরের ব্যবধানে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার সম্মান অর্জন করছেন। আপনার সরকারের আমলে সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মানিত শিক্ষকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই বেতন-ভাতাদি পেয়ে যাচ্ছেন। বৈষম্য বিরাজ করছে এই ক্ষেত্রেÑ সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোতে আনুপাতিক হারে পদোন্নতি হয় না, ৮ বছর পূর্ণ হলেই এই সম্মান তারা পান। বিপরীতে বেসরকারি কলেজ, মাদ্রাসাগুলোতে আনুপাতিক হারের অযৌক্তিক পদোন্নতি পাওয়ার বিধি থাকায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা প্রাপ্য সম্মান থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনার আমলে আনুপাতিক এই বিধি তুলে দিয়ে, কর্মজীবনের সম্মানটুকু পরিপূর্ণ করার আকুল অনুরোধ জানাচ্ছি। আনুপাতিক নয়, আপনার সরকার সারা দেশের সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে খুব একটা ভর্তুকি দিতে হবে না। কারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সকল আয় রোজগার রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই জমা হবে।

আপনার সরকারের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবান্ধব। এই আমলেই আমার মতো ভুক্তভোগী একজন শিক্ষকের আবেদন মঞ্জুর হলে, লাখো শিক্ষক তাদের কর্মজীবনের শেষ সম্মানটুকু নিয়ে অবসরে যেতে পারবেন।

আমিন।

ইতি

আপনার আদর্শের শুভাকাক্সক্ষী

মো. আব্দুর রহিম : ইনডেক্স নম্বর : ৩১৬৯২০। প্রভাষক, বাংলা, গলেহাহাট ফাযিল মাদ্রাসা, টুনিরহাট, পঞ্চগড়; প্রতিষ্ঠান কোড : ১৫২৯১; ইআইআইএন : ১২৬১২৬; প্রাতিষ্ঠানিক এমপিও : ৭৯০৪০৬২২০১

[email protected]

 
Electronic Paper