ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ

নুরউদ্দিন আহসান
🕐 ৭:০৯ অপরাহ্ণ, জুন ০৫, ২০২০

বর্তমান সময়টা কৃষকদের জন্য জয়োৎসব। কষ্টের পূর্ণ প্রাপ্তির সময়। সারা বছর যার জন্য প্রতীক্ষা করেছে যাদের দেখার জন্যে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছে, সেই মর্হূতটা তাদের কাছে অবস্থান করছে। যাদের দেখে মনের অজান্তেই চোখের কোণে তৃপ্তির ছায়া এসে যায়।

সেই কাক্সিক্ষত ফসল, ধান আজ প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে উঠতে শুরু করেছে। যে ফসলটা শত কষ্টের ছাপ মুহূর্তে মুছে দেয়। মা যেমন তার সন্তান কে তিল তিল করে বড় করে তোলে। যখন যা প্রয়োজন তখন তা দিয়ে তাদের অভাব পূরণ করে। যেন কোনো প্রকার অপ্রাপ্তি না থাকে যেন সেদিকে লক্ষ রাখে।

ঠিক তেমনি ভাবে প্রতিটি কৃষক তাদের ফসলকে তিল তিল করে সময় মত সার, বিষ, পানি ইত্যদি দিয়ে বড় করে তুলে। তবে কৃষকের পূর্ণ প্রাপ্তির পেছনে বড় ধরনের পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে সরকার। আর তা হলো সময়মতো সার, বিষ, তেল, বিদ্যুৎ কৃষকের কাছে সরবরাহ করা। দিন শেষে প্রশ্ন থেকে যায় কৃষক কি তাদের এই কষ্টের পূর্ণ ফল পায়? আমরা যদি একটু লক্ষ করি তাহলেই এর হিসাবটা পেয়ে যাব। গত বছর দেখেছি একজন শ্রমিকের মূল্য এক হাজার টাকা আর এক মণ ধানের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা যা ছিল কৃষকের জন্য ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’র মতো। কেননা যেখানে দ্বিগুণ লাভ হওয়ার কথা ছিল সেখানে দ্বিগুণ লোকসান হয়েছিল। যে কারণে কৃষক ধানি জমিতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। যা আমাদের জন্য কষ্টের তো বটেই আশঙ্কারও।

মনে রাখতে হবে প্রবাসীরা যদি রেমিটেন্স-যোদ্ধা হয় তাহলে কৃষক হলো খাদ্য উৎপাদনকারী যোদ্ধা। যাকে আমরা প্রকৃত যোদ্ধা বলতে পারি। তবে প্রতিটি মৌসুমে এই প্রকৃত যোদ্ধাকে অবহেলার স্বীকার হতে হয়। কাজের স্বীকৃতি তারা পায় না বললেই চলে। যে বিষয়টি নিয়ে তাদের বেশি চিন্তা করতে হয় তা হলো সারা বছর কষ্ট করে ফলানো ফসলের ন্যায্যমূল্য। যা অধিকাংশ সময় তারা পায় না। এটা শুধু ধান তা নয় অন্যান্য ক্ষেত্রেও।

যে ফসল আমাদের জন্য আশীর্বাদ, যে মাটিকে পরির্চযা করলেই সুন্দর ফসল পাওয়া যায়। সেই আশীর্বাদটা যেন আমরা হেলায় নষ্ট করে না ফেলি। কৃষক যদি তার উৎপাদনের ন্যায্যমূল্য না পায়। তাহলে কেন তারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলাবে। কৃষক কেন, যে কোনো মানুষই কষ্ট করার পর যদি তাকে ন্যায্যমূল্য না দেওয়া হয়। যদি তাকে অবহেলার শিকার হতে হয় তাহলে সে নিশ্চিত কর্ম থেকে বিরত থাকবে। নতুবা নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমরা কেন জানি বিষয়টা বুঝতেই চাই না। হাসি তামাশার ছলে তাদের কষ্টকে উপহাস করি।

ফসলের মূল্য নির্ধারণের পেছনে বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে সিন্ডিকেট নামক অমানবিক ব্যবসার। যা অপ্রত্যাশিত। মনে রাখতে হবে কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ। এটা নিছক স্লোগান নয়। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রেরণা। মনে রাখা দরকার, বিশেষ করে নীতিনির্ধারক ব্যক্তিবর্গকে। কৃষিকাজ ছেড়ে মানুষ কাজের সন্ধানে শহরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে শহরগুলো দিন দিন বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। তাই কৃষির ওপর গুরুত্ব দেওয়া কতটা জরুরি তা সহজেই অনুমেয়। আমরা যদি ঠিকভাবে প্রতি বছর কৃষির মূল উপকারণ ধান উৎপাদন করতে পারি তাহলে দেশের খাদ্যাভাব মিটিয়ে বাহিরে রপ্তানি করতে পারব। তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি যে কোনো দুর্যোগে খাদ্যাভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে পারব।

কৃষি নিয়ে বিশ^ ব্যাংক আমাদের জন্য এক আশীর্বাদের মতো তথ্য দিয়েছে। বিশ^ ব্যাংকের হিসাব মতে, এখনো শতকরা প্রায় ৮৭ শতাংশ গ্রামীণ মানুষের আয়ের উৎস কৃষি। দুই-তৃতীয়াংশ গ্রামীণ পরিবার কৃষি ও অকৃষি উভয় আয়ের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব ব্যাংকের এ তথ্য আশীর্বাদ তখনই হবে যখন এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারব। কাজে লাগানোর এখনই সময়। মানুষ কাজের সন্ধানে এখন ঘুরছে এ সুযোগে তাদের কৃষির প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাবে। তাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা ও দেশের ক্রান্তিলগ্নে কিছুটা হলেও উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকবে। শহরের প্রতি আসক্তিটা কিছুটা হলেও কমবে।

 

নুরউদ্দিন আহসান : কলাম লেখক

[email protected]

 
Electronic Paper