ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মেধা বিকাশের অন্তরায়

মুহম্মদ সজীব প্রধান
🕐 ৭:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ০১, ২০২০

শিক্ষা এমন এক আলো যার সংস্পর্শে বিকশিত হয় জীবন, আলোকিত হয় সমাজ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার প্রকৃত অর্থ। বর্তমানে শিক্ষা মানে দিন-রাত পাঠ আর পরীক্ষার খাতায় তা উগলে ফেলা। এ উগলে ফেলার মাঝেই নিহিত রয়েছে আসল প্রাপ্তি ও তৃপ্তি। হ্যাঁ, আমি একবিংশ শতাব্দীর পড়াশোনা ও পরীক্ষা পদ্ধতির কথা বলছি যেখানে মেধার সর্বোৎকৃষ্ট মাপকাঠি জিপিএ-৫।

কখনো কি ভেবেছেন জিপিএ-৫ এর গুরুত্ব কতখানি? যারা বইয়ের খুঁটিনাটি সবকিছু বুঝে বুঝে পড়ে পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে তারা অবশ্যই মেধাবী কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ অর্জনের জন্য পুরো বই না পড়ে সংক্ষিপ্ত সাজেশন অনুসরণ করে আর এতে করে তাদের জানার পরিধি এবং মেধার বিকাশ প্রস্ফুটিত হতে পারে না। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ‘আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি’র ইংরেজি অনুবাদ করতে পারে না এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে। অনেকে মনে করেন জিপিএ-৫ না পেলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া যাবে না এবং ভবিষ্যতে উচ্চপদস্থ চাকরি করতে বেগ পেতে হবে কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

দুঃখজনক হলেও সত্য, জিপিএ-৫ অর্জনের আকাক্সক্ষা শিক্ষার্থীদের জীবনে অভিশাপ বয়ে আনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্থাৎ কাক্সিক্ষত ফল অর্জনে ব্যর্থ হলে অনেক শিক্ষার্থীই মানসিক ব্যাধিতে ভোগে যা পড়াশোনা ও জ্ঞানার্জনের অন্তরায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক নক্ষত্র শিক্ষার্থী হতাশায় কাবু হয়ে ঝরে পড়ে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, অনেক শিক্ষার্থী সমাজের কাছে নিজেকে জিপিএ-৫ এর মাপকাঠিতে মেধাবী প্রমাণ করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়! জিপিএ-৫ এর সাগরে নিজেকে বিসর্জন দেয়। আত্মহত্যার এমন ভয়াবহ চিত্র কোমলমতি পিইসি পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মাঝেও দেখা যায়।

২০১৯ সালে পটুয়াখালীর ফাহিম পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেয়ে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে, একই বছরে বরিশালের সারিয়া আক্তার এবং বগুড়ার তামিমা ইসলাম এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেয়ে আত্মহত্যার মাধ্যমে নিজেদের জলাঞ্জলি দেয়। এবছর এমন আত্মহত্যার সংখ্যা কত হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি না করলে তা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলবে। অতল গভীরে হারিয়ে যাবে অজস্র সম্ভাবনাময় আঁধার। এ বেড়াজাল থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে অভিভাবক, শিক্ষক ও সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের যথাযথ জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় জন্ম নেবে সত্যিকারের প্রতিভাবানরা।

মুহম্মদ সজীব প্রধান : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

 
Electronic Paper