ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আমরা কতটুকু সভ্য

নেজাম উদ্দিন
🕐 ২:২০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৭, ২০২০

গত মাসের ২১ তারিখ থেকে ঘরবন্দি। এর মধ্যে এক দুবার বের হয়েছি মায়ের ওষুধ আর ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য। বিনা প্রয়োজনে বের হইনি আগের মত। সারা বিশে^র মত বাংলাদেশও আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশের কিছু মানুষ ভয়ে দিনযাপন করছে আর কিছু মানুষ এটিকে উৎসবমুখর বা কিছুই হয়নি এমন ভাব নিয়ে ঠিক আগের মতো চলাফেরা করছে। সরকার এই ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি সব দফতর, প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হতে বারণ করছে বারবার। জনসচেতনতার জন্য প্রতি মহল্লায় মাইকিং করা হচ্ছে। টহলরত আছে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশ সরকার চাইছে যদি কিছুদিন ঘরে থাকা যায় বা একে অন্যেও সংস্পর্শে না আসে তবে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কিন্তু আমাদের দেশের কিছু মানুষ সরকারি ছুটির কারণে রাস্তাঘাট আগের চাইতে ফাঁকা থাকায় অতি উৎসাহে রাস্তায় ঘুরতে বের হচ্ছে। আর তারাই পুরো জাতিকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে। কয়েকদিন আগে বাহারছড়া বাজারে গিয়েছিলাম বাইক নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনব বলে। প্রথমে দূর থেকে যা নজরে এল তাতে মনে হল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে যারা বাজারে এসেছে তারা অবগত নন। বিক্রেতাগণ মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করছে না, ঠিক তেমনি কিছু ক্রেতাগণের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অনেক মানুষের মুখে মাস্ক নেই।

দক্ষিণ সাইটে একজন হ্যান্ড মাইক নিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে অনুরোধ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমি কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলাম একটু দূরে, বাজারে মানুষ কমে কিনা। কিন্তু দেখা গেল ভিন্ন চিত্র আরো বাড়তে শুরু করেছে। বাধ্য হয়ে আমার এক পরিচিত সবজি বিক্রেতাকে ফোন করে আমার যা প্রয়োজন তা অর্ডার করে দাঁড়িয়ে রইলাম নিজ জায়গায়। অর্ডারকৃত সবজি আমি যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম পাঠিয়ে দিলে বিকাশে তার মূল্য পরিশোধ করে তা নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

বাজার থেকে ফিরতে রাস্তায় যা দেখা গেল সেনাবাহিনীর গাড়ি আসতে দেখলে যারা রাস্তায় মানুষ ঘোরাফেরা করছে তারা সেনাবাহিনীর নজর এড়াতে লুকিয়ে পড়ছে। না হেসে পারলাম না। যে বিপদ থেকে রক্ষা করতে আজ সেনাবাহিনী, পুলিশ কাজ করছে তাদের ফাঁকি দিয়ে করোনা ভাইরাসকে আমরা আলিঙ্গন করছি! আমরা সেনাবাহিনী বা পুলিশ দেখতে পাচ্ছি কিন্তু করোনা ভাইরাস দেখতে পাচ্ছি না বলে হয়তো বিশ^াস করতে পারছি না! যদি তা আমরা অবগত না হই অন্তত সরকার বলছে ঘরে থাকতে সরকারের এমন জরুরি অবস্থা জারি করা মানে কী এটা বুঝতে হবে দেশে কিছু ঘটতে চলেছে। সারা বিশে^র দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে করোনা কত ভয়ংকর এবং পাড়া মহল্লায় যারা শিক্ষিত যুবক আছে তাদের উচিত করোনা সম্পর্কে যারা জানে না তাদের অবগত করা এবং ঘরে থাকার জন্য বলা। চীন, ইতালি, বা ফান্সের মতো উন্নত দেশ। আমরা তাদের করোনার ভয়াবহতার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেও শংকিত নই।

বাংলাদেশে করোনা ভয়াবহ আকারে দেখা দিলে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি হতে পারে। ফিলিপাইনে লকডাউন অমান্য করায় একজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে সম্প্রতি। তাতেও আমরা বুঝতে পারছি না করোনা কতটা ভয়ংকর! সহকর্মীর সংবাদ ও ফেসবুকের বদৌলতে জেলার বিভিন্ন এলাকার কথা জানতে পারি।

গ্রামের দোকানে এখনো আমরা দলগতভাবে আড্ডা দিয়ে যাচ্ছি। দূরত্ব বজায় না রেখে চলাফেরা করছি। বাজার নিয়ন্ত্রিত নয়। যে যার মতো বাইরে ঘোরাফেরা করছে। তাতে আমরা আগামীর জন্য কি প্রস্তুত? আমরা কি এই ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারব? যে দেশে একটি সভ্য জাতিকে সচেতন করতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন পড়ে তাতে প্রশ্ন উঠে আমরা কতটা সভ্য? যদি সভ্য জাতি হতাম তবে নিজ দায়িত্বে ঘরে অবস্থান করতাম এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতাম। এখন ঠিক আগের মতো বাইরে যাচ্ছি, ঘরে ফিরছি একবারও কি চিন্তা করেছি ঘরের মানুষ যারা আছে তারা আমার জন্য কতটা বিপদগ্রস্ত?

ঠিক একই রকমভাবে আমেরিকা অবহেলা করেছিল; এটি তেমন কিছু নয় বলে। কিন্তু যখন বাড়তে শুরু করল তখন তাদের হুঁশ এল যে এটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। যদি ঠেকানো না যায় তবে দেশ বিলীন হয়ে যাবে। এমনিভাবে আমেরিকা, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ভারতসহ বিশ্বেও বেশকিছু রাষ্ট্র আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্বের ভয়াবহতা জানি, তারপরেও আমরা অবহেলা করছি। ঘোরাফেরা করছি নিজের মত করে। বাজার করতে যাচ্ছি। সিগারেট ফুরিয়ে গেছে তা আনতে যাচ্ছি। ত্রাণ নিতে যাচ্ছি। যিনি ত্রাণ দিচ্ছেন তিনি তো প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন আপনার কি প্রস্তুতি আছে? হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পরেছেন? মুখে মাস্ক পরেছেন? চিন্তা করে দেখুন আপনি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন আপনি ঝুঁকিতে আছেন ঠিক তেমনি পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। আমাদের জীবন ব্যবস্থা সাময়িক থামাতে হবে। ঘরে যা আছে তা দিয়ে অল্প খেয়ে বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। নয়ত আগামীর দিনে চরম ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে।

আরেকটি ব্যাপার এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে- সরকার বলছে ঘরে থাকার জন্য অথবা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলার জন্য। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে বারণ করা হয়েছে বারবার। কিন্তু এখন যে হারে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে তাতে সরকারি নিষেধ অমান্য কার হচ্ছে। সব জয়গায় জনসমাগম হচ্ছে। কিছুদিন আগে দেখেছি জেলা প্রশাসন কক্সবাজার রাস্তায় রাস্তায় থাকা মানুষদের ত্রাণ বিতরণ করেছে।
তারা বাড়ি বাড়ি গিয়েও ত্রাণ দিয়ে এসেছে বলে খবর আছে। যখনই সাধারণ মানুষ জানতে পেরেছে জেলা প্রশাসন বা বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ বিতরণে নেমেছে। তখন খেটেখাওয়া মানুষগুলো বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে ত্রাণের জন্য। ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি রয়ে যায়। এই বিশেষ মুহূর্তে যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তারা যদি জনসমাগম না ঘটিয়ে নিজেদের সুরক্ষা রেখে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঘরে ত্রাণ বা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো যায় তবে হয়ত আমরা এই ভাইরাসকে রুখতে সক্ষম হব। এতে জনসমাগম হওয়ার আশঙ্কা থাকে না ও নিজেকে সুরক্ষা রাখা যাবে বলে মনে করি। নয়তো ভয়াবহ সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

সচেতন না হলে সামনের সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ উন্নত অনেক দেশ আজ করোনা ভাইরাসে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সবে উঠে দাঁড়িয়েছি। এই সময় দেশের জন্য কিছুটা সময় বিসর্জন দিয়ে দেশকে রক্ষা করতে পারি তবে সামনে সুন্দর দিন অপেক্ষা করছে। আমরা বীর বাঙালি। সরকার আমাদের যুদ্ধ করতে বলেনি। কয়েকদিন ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে। যেন নিরাপদে থাকতে পারি। আমরা কি পারি না নিজেকে নিরাপদ রাখতে কয়েকদিন ঘরে থাকতে? আসুন করোনা ভাইরাসকে রুখতে নিজ ঘরে অবস্থান করি। সরকারের নির্দেশ পালন করি। তবেই আমরা উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারব বিশে^।

নেজাম উদ্দিন : সংবাদকর্মী, কক্সবাজার

 
Electronic Paper