ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চাই ব্যক্তি সচেতনতা

জান্নতুল মাওয়া নাজ
🕐 ১:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৬, ২০২০

করোনা ভাইরাসে ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির। করোনার প্রভাব যেমন অর্থনীতিতে আছে, তেমনি আছে স্বাস্থ্য সেবা ও ব্যবসায়। সচেতনতার জন্য নানা উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে কার্যকর ব্যবস্থার কথা। কিন্তু এত আয়োজনের মাঝেও আছে বিভ্রান্তি। আছে ‘অতি সচেতনতার’ বাড়াবাড়ি। সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও পরিবর্তনের প্রভাব ¯পষ্ট। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সচেতনতা ও নিয়ম-কানুনই পারে এই সংক্রামক থেকে রক্ষা করতে।

করোনা ভাইরাসকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘২০১৯-এনসিওভি’ নামকরণ করে। ২০২০ সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত চীনের সঙ্গে সঙ্গে ১২১টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায় যাতে ৫০০০ জনের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। যার পরিমাণ বর্তমান সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে আরও অনেক বেশি। উহানে দেখা দেওয়া ভাইরাস প্রজাতিটি ‘এসএআরএস-সিওভি’ প্রজাতির সঙ্গে প্রায় ৭০ শতাংশ জিনগত মিল পাওয়া যায়।

অনেকেই অনুমান করছেন নতুন এ প্রজাতিটি সাপ থেকে এসেছে যদিও অনেক গবেষক এ মতের বিরোধিতা করেন। করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরনের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি। গত ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা করোনা ভাইরাস ডিজিজ ২০১৯-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশেও প্রথম এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে যদি কেউ হোম কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা না মানে। অর্থাৎ, নিজ গৃহে কারও সংস্পর্শে না এসে ১৪ দিন অবস্থান করতে হবে। 

বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন কীভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে এবং কীভাবে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়, তা বের করার। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা যায়, করোনার লক্ষণের মধ্যে রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। করোনার জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি অনেকটাই সার্স ভাইরাসের মতো। সাধারণত জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়।
প্রতি চারজনের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে যায় বলে মনে করা হয়। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে হালকা ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে উপসর্গ দেখা দিতে গড়ে প্রায় ৫ দিন সময় লাগে।

যাদের মধ্যে ১২ দিন পর্যন্ত কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসটির উন্মেষ পর্ব ১৪ দিন থাকে এবং এ কারণেই কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন রাখার কথা বলা হয়। তবে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও যাদের শরীরে ভাইরাসটি রয়েছে তারা বাহক হিসেবে কাজ করেন এবং তাদের কাছ থেকে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মত ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ মারাত্মক হয়। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

প্রতিরোধে দেশে দেশে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রয়োজন। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের সবার প্রস্তুতি। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজন জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানা যায়, করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগের বিস্তার সীমিত পর্যায়ে রাখতে মেডিকেল মাস্ক সাহায্য করে। তবে এটার ব্যবহারই এককভাবে সংক্রমণ হ্রাস করতে যথেষ্ট নয়। নিয়মিত হাত ধোয়া এবং সম্ভাব্য সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা না করা এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায়।

প্রাথমিকভাবে আমাদের হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ঘনঘন অন্তত ২০ সেকেন্ড পর পর হাত পরিষ্কার করতে হবে। হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় রুমাল, টিস্যু বা হাতের কনুই দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। যেখানে-সেখানে থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সর্বদা হালকা উষ্ণ পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ভিটামিন সি ও সবুজ শাকসবজি খাওয়া জরুরি।

এগুলো ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়াও জীবিত অথবা মৃত গৃহপালিত/বন্যপ্রাণী থেকে দূরে থাকতে হবে। যে কোনো বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসটি নিজে থেকে ধ্বংস হয় না। এই রোগ থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেওয়া। মানুষজনের চলাচল সীমিত করে দেওয়া। হাত ধুতে সবাইকে উৎসাহিত করা। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা বা সেবা দেওয়া। রোগীদের ভাইরাস রয়েছে কিনা তা জানতে এবং রোগীদের সংপর্শে আসা লোকদের শনাক্ত করার জন্য নজরদারি ব্যবস্থার প্রয়োজন।

যেহেতু মানবদেহে সৃষ্ট করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো ভ্যাক্সিন বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি, তাই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং ও স্যানিটাইজেশন এই রোগের প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। আতঙ্ক না ছড়িয়ে সচেতন হওয়াটা জরুরি। মনে রাখতে হবে, আতঙ্ক হলেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। যেহেতু এখন পর্যন্ত সচেতনতাই একমাত্র প্রতিকার, তাই আতঙ্ক না হয়ে, ব্যক্তিগত সচেতনতাই পারে মহামারি এ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম হতে।

জান্নাতুল মাওয়া নাজ : শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 
Electronic Paper