দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা দিন
হাওলাদার মুহা. হাসিব
🕐 ২:৪২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০২, ২০২০
রাষ্ট্রের মারপ্যাঁচে আদিলগ্ন থেকেই শ্রমজীবী মানুষ অবহেলিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত হয়ে আসছে। রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি তথা রাজস্ব আয়ে তাদের অবদান থাকলেও রাষ্ট্র পরিচালনার নিমিত্তে বরাবরই তারা নিষ্পেষিত। বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের পরিসংখ্যান বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ শ্রমজীবী মানুষ যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে অবদান রেখে যাচ্ছেন। সেটা প্রবাসে আয়ে হোক কিংবা শিল্পখাত বা অন্য যেকোনো কঠিন শ্রমে। করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে যখন বিশে^র বিভিন্ন দেশের সরকার লকডাউন করে দেয় তখন খুব বেশি সমস্যা জনগণের মধ্যে দেখা যায় না। সেখানে দারিদ্র্যের সংখ্যা কম। আবার কোনো কোনো দেশের সরকার নাগরিকদের সকল সুবিধা দেওয়ারও ঈঙ্গিত করেছেন তথা মৌলিক অধিকার বলতে যা বোঝায়। এমন দেশের কথা বলতে গেলেই সবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ভাষণের কথা মনে পড়বে।
আমরা কি হতদরিদ্র মানুষদের এখনো নিশ্চয়তা দিতে পেরেছি স্বাভাবিক জীবনযাপনের? বা আমাদের মত গরিব দেশের পক্ষে কি তা আদৌ সম্ভব? যদিও রাষ্ট্র ইতোমধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা বাজেট করেছে। এ বাজেট যদি সুষ্ঠুভাবেও বিতরণ করা হয় এত কোটি হতদরিদ্র পরিবারের ঠিক কতদিনের বা কতটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে তা একটু চিন্তা করলেই স্পষ্টভাবেই বোঝা যাবে। যেহেতু এখন পর্যন্ত আমরা তাদের কাছে তাদের এ প্রাপ্য বাজেট পৌঁছে দিতে পারিনি কিংবা জীবনযাপনের দায়িত্ব নিতে পারিনি, সেহেতু তারা তো মাঠে নামবেই। তাদের আয়ের জন্য।
একজন শ্রমিক সে হোক না রিকশাওয়ালা রিকশা চালিয়ে নিজে একা খায় না। বরং এ সামান্য আয় দিয়ে সে আস্ত একটা পরিবার পরিচালনা করে থাকে। তার একদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করে ঐ দিনের জীবনযাপন। তাদের এ স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিক্রমা ব্যর্থ হলে না খেয়ে থাকা লাগে, তা কি আমরা ভেবেছি? মানুষ যখন ক্ষুধার রাজ্যে থাকে তখন ক্ষুধাই হয়ে উঠে তার জন্য ভয়ংকর মহামারি। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া কিছু ছবিতে দেখা গেল প্রশাসন কিছু শ্রমজীবী মানুষকে তাড়িয়ে মারছে।
এগুলো নৈতিকতার অবক্ষয়জনিত রোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরাও চাই স্বাভাবিক নাগরিকদের মত তারাও বাসায় থাকুক। তবে আগে তাদের খাবার কিংবা যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া লাগবে। ভাতের অভাবে কেউ যাতে করে কবির এ কবিতার মত আর্তনাদ না করেÑ দুপুরবেলা পাতিলে হাত দিয়ে দেখি/ কবিতা না লিখে সাদা কাগজ ফেলে রেখেছেন মা/ -একজন ব্যর্থ কবি।
এ দুর্যোগ মোকাবেলা করা কোনোভাবেই সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে দলমত নির্বিশেষে সরকারকে সাহায্য করা উচিত। যাতে এ মানুষগুলো ভালো থাকে। কারণ এরা ভালো থাকলে ভালো থাকবে বাংলাদেশ।
হাওলাদার মুহা. হাসিব, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়