শিশুর সোনালি শৈশব কোথায়!
ইমরান হোসেন
🕐 ২:৩৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০২, ২০২০
আজকের শিশুই জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে পরিবার ও রাষ্ট্রের চেষ্টার অন্ত নেই। কিন্তু আমাদের সেই চেষ্টার ধরনই যদি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে, তবে সুন্দর আগামীর আশা করাটা বোকামি। শিশুদের শৈশব বিবেচনা করা যাক। জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চার বাবা-মা স্বপ্ন দেখেন, সন্তানকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। নিজে যেই স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই স্বপ্নের বোঝা চাপিয়ে দেন সন্তানের ওপর। খেলনা, খাবার-দাবার, গাছপালা, প্রাণীদের নাম শেখানোর আগেই অনেক অভিভাবকের ইচ্ছে থাকে তার সন্তান বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা শিখবে! চার বছর হলেই বাচ্চাকে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করে বাবা-মা বগল বাজাতে শুরু করেন। অভিভাবকদের প্রতিযোগিতা ততদিনে শুরু হয়ে যায়। বাচ্চারা পাঁচ বছর বয়সে কিন্ডারগার্টেনের একটি শ্রেণি টপকে যায়।
নতুন শ্রেণিতে উঠলেই বাচ্চার পিঠে ঝোলানো স্কুলব্যাগের ওজন বাচ্চার ওজনকে ছাড়িয়ে যায়। রাখা হয় গৃহশিক্ষক। অথচ ৪-৫ বছরের বাচ্চার জন্য পিতা-মাতার শিক্ষাই যথেষ্ট। ছয় বছরের বাচ্চা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলে তার বইয়ের সংখ্যা আঙুলে গোনা যায় না! ৩-৪ ঘণ্টা ক্লাস করার পরও বাচ্চার মুক্ত পরিবেশ শেকলবন্দি হয় গৃহশিক্ষকের চাপে। বাংলা, ইংরেজি, গণিতের বাইরেও ড্রয়িং, আইসিটি, বিজ্ঞানের মতো বিষয় যুক্ত হয়ে যায়। অভিভাবকরা ছোট্ট বাচ্চাকেই নামিয়ে দিচ্ছেন এক অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায়। জেতার জন্য ব্যস্ত রুটিন আর পড়াশোনার চাপে শিশুর চিন্তার জগৎ ছোট হয়ে যাচ্ছে।
যেই বয়সে শিশুরা গ্রামের মেঠোপথে দৌড়ে বেড়াবে, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল চরানো দেখে মজা পাবে, খেলনা নিয়ে দলবেঁধে খেলে বেড়াবে, ক্রিকেট-ফুটবলে মেতে থাকবে, হৈ-হুল্লোড় করবে, সেই বয়সের শিশুকে রুমের চার দেয়ালে বন্দি করে ফেলা হচ্ছে। বাবা-মার কাছে যখন শিশুরা বাড়ির জিনিসপত্র বা প্রকৃতি নিয়ে মুক্তমনে জিজ্ঞাসা করবে, তখন তার স্বাধীনতা খর্ব করে রুটিন বেঁধে একাডেমিক বইয়ের চর্চায় বাধ্য করা হচ্ছে। এতে করে শিশুরা শিক্ষায় আনন্দ হারাচ্ছে, বাধ্য হয়ে অভিভাবকদের আদেশ পালন করছে। ফলে পাঠে শিশুর আগ্রহ কমে যাচ্ছে, সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতির সংস্পর্শে গিয়ে মেধা ও মননের বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাছে। কেবল রুটিনমাফিক পড়াশোনায় ও দেয়ালবন্দি জীবনে বাচ্চার মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে । শিশুরা মানুষ না হয়ে রোবট হয়ে যাচ্ছে।
ইমরান হোসেন, শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়