ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গুজবকে দূরে রাখুন

জুবায়ের আহমেদ
🕐 ১:১৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০

অধিকার আদায়ের দাবিতে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে খুব কম জাতিই স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছে। যারা পেরেছে, আমরা সেই বীরের জাতিদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখের শহীদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ, পেয়েছি সবুজ শ্যামল শস্যে ভরা প্রিয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল অধিকার আদায়ে, মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে পাক হানাদার বাহিনীর বিশাল বহরকে পরাজিত করে মুক্ত হয়েছিল প্রিয় স্বদেশ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জাতি পরবর্তীকালে এভাবে আর কখনোই দেশের নানাবিধ সংকটে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। তবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে গুজব ছড়ানোর কাজে, যার মাধ্যমে বহু নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে নিয়মিত। কে কী বললো বা প্রচার করল, তার সত্যতা যাচাই না করেই ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে আমাদের জুড়ি নেই।

বাংলাদেশে সময়ে সময়ে গুজবের শেষ নেই। ধর্মীয় বিধান মতে কোন তথ্য পাওয়ার পর তার সত্যতা না পাওয়া পর্যন্ত প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গুজব বিষয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে বহু সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও গুজবপ্রিয় জাতির বদনাম আমরা ঘুচাতে পারিনি বরং বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর প্রভাবে গুজব যেন রকেট গতিতে ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ব্রিজ নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে, ছেলেধরা, চাঁদে মানুষ দেখা যায়, এই জন স্বপ্নে ঔষধ পেয়েছে, স্বপ্নে মানুষকে ধর্মকর্ম করার তাগিদ দিয়েছে, না হয় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, এই লিফলেট ছিঁড়ে ফেললে বড় ক্ষতি হয়ে যাবেসহ হেন কোনো গুজব নেই যা বাংলাদেশে রটে না। গেল বছর পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এমন গুজব এবং ছেলে ধরা গুজবে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষকে গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, যারা পরবর্তীকালে নির্দোষ ছিলেন মর্মে প্রমাণ হয়েছে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পুরো বিশ্ব।

চীনের উহান প্রদেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীর দুইশ’ দেশে ইতোমধ্যে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলো যেখানে প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছে, সেখানে বাংলাদেশে লোকজন রাস্তাঘাটে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার হোমিওপ্যাথিক-বনাজি ঔষধ বিক্রি করছে। কেউ কেউ ছড়িয়েছে, এই ধর্মের লোকের হবে না, ঐ ধর্মের লোকের হবে এবং বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস আসবে না। জনৈক প্রবাসীকে করোনা ভাইরাস স্বপ্নযোগে সাক্ষাৎকার দিয়েছে কীভাবে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়সহ নানা প্রকার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী।

চীনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস গত ৯ মার্চ থেকে বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। দিন দিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। আবার অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সরকার দেরিতে হলেও প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিসহ তারকা ব্যক্তিত্বরাও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসছে একে একে। প্রতিরোধ করার সবচেয়ে বড় উপায় হোম কোয়ারেন্টাইন বা নিজেদের গৃহের মধ্যে আবদ্ধ রাখা হলেও এ নিয়ম মানছে না অনেকেই। সেই সঙ্গে গুজব ছড়াচ্ছে একটি শ্রেণি।

থানকুনি পাতা খেলে সেরে যাবে, নারিকেল গাছের গোড়ায় পানি ঢাললে সেরে যাবে, কোনো শিশু জন্মের পর চিনি ছাড়া রঙ চা খেলে সেরে যাবে বলেই মৃত্যুবরণ করেছে! নানা প্রকার গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে একটা শ্রেণি, সাড়া দিচ্ছে বহু মানুষ, যাদের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে গুজব, হয়রানির শিকার হচ্ছে বহু মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। আর ধর্মপ্রাণের সূত্রেই বহু মানুষ ধর্মান্ধ।

ধর্মীয় বিধান মতে কোনো তথ্য প্রচারের আগে সত্যতা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি হলেও তা মানা হয় না বাংলাদেশে, ফলে সহজেই যেকোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যায়। দেশব্যাপী শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়লেও শুধু অশিক্ষিত ব্যক্তিরাই যে গুজব ছড়ায় তা নয়, ক্ষেত্রবিশেষে ও গুজবের ধরণ বুঝে সব শ্রেণির মানুষেই গুজবে কান দেয়। ধর্মীয়ভাবে গুজব ছড়ানো গুনাহের কাজ। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ধর্মীয় বিধান জানার ও বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারের যুগে এসেও বাংলাদেশের মানুষ সৃষ্টিশীল ও গবেষণাধর্মী কাজে নিজেদের নিয়োজিত না রেখে কুসংস্কার ও ভিত্তিহীন কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে।

জুবায়ের আহমেদ : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)
[email protected]

 
Electronic Paper