দরকার উভয়পক্ষের সচেতনতা
হাবীব ইমন
🕐 ১:১৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০
একটি মন্দ সময় আমরা পার করছি। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন- সামনে আরো কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হবে। মহামারি থেকে অতিমারিতে রূপ নিয়েছে করোনা ভাইরাস। কঠিন সময়টাকে পাল্টে দেওয়ার দায়িত্ব যেমন সরকারের, তেমনি সাধারণ মানুষেরও। দুটো পক্ষকেই সমানতালে শক্তিশালী হতে হবে। সামাজিকভাবে মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ করার প্রধান দায়টা সরকারকেই নিতে হবে। ইতালির ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, অবহেলা করলে কী মারাত্মক ফল হতে পারে!
মানুষকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে বিশ্বের একের পর এক শহর, অঞ্চল, দেশ লকডাউন করা হচ্ছে। তবে লকডাউনও যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্বাহী পরিচালক মাইক রেয়ান। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আমাদের দেশেও ভাইরাস দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সংক্রমণ এখনও পর্যন্ত স্টেজ টু-এ আটকে আছে। এখনই সতর্ক না হলে আগামী সপ্তাহে তৃতীয় পর্যায়ে, অর্থাৎ স্টেজ থ্রি-তে পৌঁছে যাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা আছে। এই কারণেই সবাইকে বাড়ি থেকে না বেরোনোর অনুরোধ করা হয়েছে। করোনা মানুষের শরীর ছাড়া বাঁচতে পারে না। এই মুহূর্তে আক্রান্ত এবং সন্দেহজনক মানুষজনসহ কেউ কারও সংস্পর্শে না এলে ভাইরাস আর ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।
স্টেজ থ্রি মানে কী : কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, অর্থাৎ বিদেশ থেকে অসুখ নিয়ে দেশে ফিরেছেন এমন কোনো মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া অথবা কোনো আক্রান্ত মানুষের কাছাকাছি না এসেও যদি কারোর শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়াকে বলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। এই পর্যায়ে সংক্রমিতদের শরীরে কোথা থেকে এই ভাইরাস এসেছে তা শনাক্ত করা যায় না। এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে আক্রান্তের সংস্পর্শ থেকেই ড্রপলেট ইনফেকশনের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ, আমরা স্টেজ টু-তে আছি। এই ভাইরাসের দাপট কমাতে সতর্ক হতে হবে এখন থেকেই।
আক্রান্তদের মৃত্যুহার সার্স অথবা মার্স-এর থেকে অনেক কম হলেও এর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে এখনও বিশেষ তথ্য নেই। তাই বাড়তি সতর্কতা নিতেই হবে।
কী করে আটকানো যায় : আক্রান্তদের আইসোলেশনে রেখে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করার সঙ্গে সঙ্গে গৃহবন্দি থাকতে হবে। সেই সঙ্গে হাত ধোয়া, মুখে চাপা দিয়ে হাঁচি, কাশি ও কোনোরকম সন্দেহ হলে গৃহবন্দি থাকলে ভাইরাসের বাড়-বাড়ন্ত কমানো যাবে বলে আশা করা যায়। তবে এর থেকেও মারাত্মক হল স্টেজ ফোর। যখন করোনা ভাইরাস কোনও স্পষ্ট কারণ ছাড়াই মহামারির আকার ধারণ করে। চীনে ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে প্রতিপদে।
কী খাবেন, কী করবেন : স্টেজ থ্রি-তে পৌঁছালে তা ভয়ানক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর মূলে আছে পুউর নিউট্রিশনাল স্ট্যাটাস। অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারেও ডায়েট নিয়ে ভুল ধারণা থাকায় সঠিক পুষ্টির অভাব থেকে যায়। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম। বাড়িতে তৈরি টাটকা সবজি, মাছ, ডাল, চিকেন, শস্য, শাক রাখুন প্রতিদিনের ডায়েটে। এছাড়া আগামী ১৫ দিন যতটা সম্ভব কম বাড়ির বাইরে যান। বাড়িতে যেন যথেষ্ট রোদ আর বাতাস থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। পরিচ্ছন্ন থাকুন।
কাদের ক্ষেত্রে ভয়ানক : বেশি বয়সের মানুষ ও ধূমপায়ীদের রিস্ক ফ্যাক্টর তুলনামূলকভাবে বেশি। এছাড়া অ্যাজমা বা হাঁপানি, সিওপিডি, আইএলডি সমেত ফুসফুসের অসুখ আছে কিংবা ক্রনিক কিডনির অসুখ আছে, তাদের জন্যও মারাত্মক হতে পারে। অন্যদিকে আর্থ্রাইটিস, আলসারেটিভ কোলাইটিস সমেত অন্যান্য কারণে নানান ওষুধ খেতে হয় বা যাদের প্রেশার, সুগার কিংবা হার্টের অসুখ আছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে তাদের প্রাণ বাঁচানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।
শেষ কথা : সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। সেটা কীভাবে? দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও প্রশাসনকে সহযোগিতা স্থানীয় মানুষদের অংশীদারিত্বে কমিউনিটি পুলিশিং ও সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন গড়ে উঠেছে। যেখানে সরকারের পাশাপাশি জনগণ সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক সেবা নিশ্চিত করছে। এর জন্য এলাকা বা পাড়ার বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে একটা মাসিক চাঁদা নেওয়া হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ চাঁদার ব্যয় নিয়ে সন্দেহ থাকলেও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কমিউনিটি পুলিশিং থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
যেমন- ১. নিজেকে অন্তত দুই সপ্তাহ গৃহে আটকে রাখার ব্যাপারে সামাজিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া। ২. ঘরের সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে, বাসার লিফট, বাসার সিঁড়ি, ধাতব সবকিছুকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিচ্ছন্ন করতে সচেতন করা। ৩. প্রত্যেকটি বাসার প্রবেশপথে পানি, সাবান বা হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা রাখা। ৪. বাসার দারোয়ান-কাজের বুয়াদের সচেতন করা, তাদেরকে নিয়মিত হাত ধোয়ার জন্য বলা। ৫. আবাসিক এলাকায় বাড়িগুলোতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাইকিং করা। ৬. এলাকার চারপাশ-বাসার চারপাশ ব্লিচিং পাউডার মিশ্রণ করে স্প্রে-র মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। ৭. এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা।
সকলে মিলে হাতে হাত রেখে আতঙ্কিত না হয়ে আমরা নিশ্চয়ই মহামারি থেকে রক্ষা করতে সম্ভব হব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছেন- ‘১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবেলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনা ভাইরাসও একটা যুদ্ধ।’ এ যুদ্ধে নিশ্চয়ই আমরা জয়ী হব। আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা।
হাবীব ইমন : সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর
[email protected]