ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অভিশাপমুক্ত হোক বিশ্ব

ফারহানা নওশিন তিতলী
🕐 ১:০৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০

বিশ্ব স্তম্ভিত হঠাৎ চারদিকে থমথমে পরিবেশ। স্যোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে টেলিভিশন, পত্রিকার শিরোনামগুলোর দিকে নজর সবার। নতুন করে আবার কেউ কি আক্রান্ত হলো, কেউ কি মৃত্যুবরণ করল, কেন এখন পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারছে না এধরনের নানা প্রশ্ন বিশ্ববাসীর মনে। সময় অতিবাহিত হচ্ছে ঠিকই তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না কেউই। মুঠোফোনে বিশ্বের নানা প্রান্তের আত্মীয়স্বজনদের কাছে বারবার যোগাযোগ করছেন স্বজনরা। কেমন আছেন তারা। নিত্যদিনের কাজ শেষে পরিবারের সবাই এক জায়গায় বসে আলোচনা করছেন। বিশ্বের আলোচনার একমাত্র বিষয় নভেল করোনা ভাইরাস। একটি ভাইরাস যার কোন আকৃতি পর্যন্ত আমরা জানি না, তা হয়রান করে ছাড়ছে বিশ্ববাসীকে।

করোনা ভাইরাস একই শ্রেণিভুক্ত ভাইরাস যা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে শ্বাসনালি সংক্রমণ ঘটায়।

সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বরের ন্যায় মনে হয়। এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনো ভাইরাস, কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের মতো। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য বিস্তার করেছে ভাইরাসটি। এশিয়ার বিভিন্ন অংশ এবং এর বাইরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো ভ্যাক্সিন বা অ্যান্টিভাইরাস আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গত ডিসেম্বর মাসে উহানে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করেছিলেন। সাধারণত হাঁচি, কাশি বা সংস্পর্শের মাধ্যমে এটি ছড়ায়। ভাইরাসটি প্রথম চীনের উহান প্রদেশে দেখা দিলেও তা এখন বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে ১৬৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার প্রাদুর্ভাবকে প্যানডামিক বা মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (সিএনএইচসি) ও অন্যান্য তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মার্চ পর্যন্ত সারা বিশ্বে মোট আক্রান্ত ৪ লাখ ৭১ হাজার ৪৪ জন। মৃত ২১ হাজার ২৮৪ ও সুস্থদের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ২২৮ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা চীনে। সেখানে মোট ৮১ হাজার ২৮৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩২৮৭ জনের। মৃতের হিসেবে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ইতালি।

দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার ৫০৩ জন আর আক্রান্ত হয়েছে ৭৪৩৮৬ জন। এই মৃত্যু ও সংক্রমনের সংখ্যা স্থির নয়, মুহূর্তের মধ্যেই বেড়ে যাচ্ছে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা। চীন, স্পেন, কানাডা, ইতালি, সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, ভারতসহ অনেক দেশ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে লকডাউন করে দিয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে এত ভালো চিকিৎসা ও সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কোনোভাবেই মৃত্যু ও সংক্রমণের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশে চলতি মাস মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করে। বাংলাদেশ বর্তমানে খুব ঝুঁকির মধ্যে আছে। করোনা এমন একটি ভাইরাস যা পরিবারের একজন সংক্রমিত হলে তার সংস্পর্শে একাধিক মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। সংক্রমিত অসুস্থ ব্যক্তিকে সেবা করার জন্য রোগীর কাছে যাওয়ার উপায় নেই এমন একটি ভয়াবহ ভাইরাস এটি। এমনকি এই ভাইরাসে মৃত ব্যক্তিকে শেষ বিদায় পর্যন্ত দিতে পারছে না স্বজনরা।

এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক বা ওষুধ এখন পর্যন্ত কোন দেশের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। সচেতনতাই মুক্তি দেওয়ার একমাত্র উপায়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সচেতনতার দিকে উদাসীনতা দেখাচ্ছে জনগণ। সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম, লিফলেট ও বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা করেও সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা তা মানছে না। বোকামি করে নিজে, নিজের পরিবারসহ দেশবাসীকে বিপদে ফেলছে তারা। ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়ানোর জন্য দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, আদালত, গণজমায়েত, গণপরিবহন, ও সারা দেশে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। অন্যান্য উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশ লকডাউন করে দিলে দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দিনমজুররা কীভাবে দিনাতিপাত করবে? ভাইরাসের বদলে তখন মানুষ না খেয়ে মরবে। অন্যান্য উন্নত দেশের মতো প্রত্যেক ঘরে ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, ঘর ভাড়াসহ অন্যান্য দ্রব্য বাংলাদেশ সরকারের একার পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা প্রতিরোধে ঢাকায় ৬টি হাসপাতাল প্রস্তুত করেছেন আরো কিছু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়াও ভূমিহীন, গৃহহীনদের জন্য ৬ মাসের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা ফ্রি, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য ৫শ’ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন যা স্বস্তির আশ্বাস। তবে এ সেবাসমূহ তৃণমূল নেতারা যথাযথ বণ্টন করবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান।   

যেহেতু এটি একটি সংক্রামক ব্যাধি সুতরাং সচেতনতার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের। এই সময় যারা সমাজের বিত্তবান তারা তাদের আশপাশের দুস্থ গরিব মানুষদের সাধ্যমতো সাহায্য করতে পারেন। পেশাদারিত্ব ছেড়ে আমরা সবাই একটু মানবিক হলে সরকার বা দেশের মানুষ অনেক এগিয়ে যাবে। গুটিকয়েক বিত্তবানই শুধু নয় যাদের নিজেদের ভরনপোষণ শেষে যতটুকুু বাকি থাকে ততটুকুই নিয়ে গরিবদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে বাংলাদেশের সবাই হয়ত এখনও বুঝে উঠতে পারেনি। এ সময় তরুণ সমাজের দায়িত্ব জনসাধারণের মাঝে করোনার ভয়াবহতা ও ভাইরাসটি রোধে এখন কী করণীয় সে সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে একযোগে সবাই সচেতনতার সঙ্গে আন্তরিক ও মানবিকতার পরিচয় দিলে প্রাকৃতিক অভিশাপ করোনামুক্ত হবে দেশ, বিশ্ব।

ফারহানা নওশিন তিতলী : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 
Electronic Paper