প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী নির্দেশনা
পাঠক কলাম ডেস্ক
🕐 ৮:০৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২০
১৯৭১ সালে রক্তের বিনিময়ে বিজয়ের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিল বাংলাদেশ। এ বিজয় এমনি এমনি ধরা দেয়নি। এ দেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ, দল-মত, নির্বিশেষে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তির আকাক্সক্ষায়। সকলের ঐক্যের ফলে অর্জিত এই বিজয়। রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং শ্রেণি বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য। স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য পরিপূর্ণরূপে এখনও বাস্তবায়িত হয়নি বরং স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশকে এসেও বাংলার অমিত তেজি মানুষের মনে সম্প্রীতি ও ঐক্যের ফাটল!
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধোত্তর বিজয় দিবসে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের চূড়ান্ত সাফল্য রচিত হয়। আর তা যার ওপর ভর করে সম্ভব হয়েছিল সেটি হচ্ছে ঐক্য। কিন্তু সে ঐক্যের প্রশ্নে আজ জনমনে সন্দেহ কেন? কেন আমরা আজ ঐক্য ও সম্প্রীতি ভুলে দ্বন্দ্ব ও রেষারেষিতে ব্যস্ত? আমরা কি পারি না সহিংসতা পরিহার করে সমঝোতার মাধ্যমে ঐক্য, সম্প্রীতি ও দেশপ্রেমের পথ মসৃণ করতে?
ইতিহাস থেকে আমরা যদি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করি, দেখতে পাইÑ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে জেল হত্যা থেকে শুরু করে, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা, ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মামলা-হামলা, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ, ২০১৪ সালে নির্বাচনী দাঙ্গা, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দাঙ্গা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অপরাজনীতিকে কেন্দ্র করে হাফিজ, আবরারসহ অসংখ্য হত্যাকা- এবং এখন অব্ধি গুম, খুন, লুটতরাজ বিরাজমান রয়েছে।
আমরা নিজেদের মধ্যে প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে রেখেছি। দেশের চেয়ে আজ দল বড় আমাদের কাছে। মানুষের কাছে আজ প্রকাশ্যে মানুষ হত্যাও সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেশের একটি অংশকে দেশের নাগরিক বলেও মানতে চাই না অথচ সকল ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পন্থা বের করা উচিত ছিল।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও আমরা বিজয়ের পরিপূর্ণ সুফল পাচ্ছি না। আমাদের এই বিজয় কেবল একটি জাতীয় পতাকা বা স্বাধীন একটি ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বৈষম্যহীন দেশ গঠনের প্রেরণা এই বিজয়। মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। সুদীর্ঘ ৪৮ বছর একটি জাতির জন্য কম সময় নয়, কিন্তু এই সুদীর্ঘ সময়ে দেশের মানুষ যে জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল সেই বাকস্বাধীনতা, সেই ভোটাধিকার, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, জননিরাপত্তা আজও সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। প্রতিষ্ঠিত হয়নি মানুষের মৌলিক অধিকার।
শাসকরা এখন পর্যন্ত জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি। ব্যক্তি স্বার্থ ও দলীয় মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করা নেতার শাসন এখনো অধরাই রয়ে গেল। ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্রসংগঠনগুলোর দৌরাত্ম ও প্রশ্ন ফাঁস শিক্ষাখাতে কাক্সিক্ষত অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করছে। দেশজুড়ে মাদকের ছড়াছড়ি তরুণ সমাজকে অন্ধকার জগতে ঠেলে দিচ্ছে। সর্বোপরি স্বাধীনতার সম্পূর্ণ সুফল আমরা এখনো পাচ্ছি না।
জয়বাংলার বজ্রতুল্য উচ্চারণ কণ্ঠে ধারণ করে বাঙালি এ মাসে ইতিহাসের স্বর্ণপটে তুলে ধরে বিজয়ের নিশান। টুটে পড়ে দাসত্বের শৃঙ্খল। পরাজিত হয় বর্বরতা। দূর হয়ে যায় দুঃশাসন, নিপীড়ন, শোষণ ও নির্যাতনের কাল। ঠিক তেমনি আজ যদি আমরা হাতে-হাত রেখে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি, সকল অন্যায়-অবিচার সবে মিলে যদি নস্যাৎ করি, দেশমাতৃকার সকল বিপদ-আপদ শক্ত হাতে রুখে দেয় তাহলে আরও একবার বিজয়ের দামামা বেজে ওঠবে। কিন্তু সবার আগে আমাদের নিজেদের উঠে দাঁড়াতে হবে, ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সকল বিভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ রেখে শপথ নিতে হবে দেশের তরে আমরা সবাই এক। খেয়াল রাখতে হবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য যেন স্বদেশকে বিপদে না ফেলি।
বিভাজনে-বিভাজনে দেশটি আজ কলুষিত হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আমাদের যে উঠে দাঁড়াতে হবে, সে কথাই যেন ভুলতে বসেছি। এই ভুল পথে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা চলবে না, সক্রিয় হয়ে মাতৃভূমির ঋণ পরিশোধে অটুট ঐক্য ও সম্প্রীতি গড়ে তুলতে হবে। এটাই হোক স্বাধীনতার মাসের অঙ্গীকার।
আমজাদ হোসেন হৃদয় : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়