ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সুবিধাবাদীরাই জিতে যাচ্ছে!

মাহমুদুর রহমান মানিক
🕐 ৬:৪০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২০

নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি পণ্যের সংকট যে কোনোভাবে সৃষ্টি হতে পারে। সবচেয়ে বেশি সংকট হয় যখন চাহিদার শীর্ষে থাকা পণ্যের জোগান কমে যায়। এ ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিপাকে পড়ে মানুষ, সংকটের সময় সরকারও চেষ্টা করে যত দ্রুত সম্ভব যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হলে পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি শ্রেণিকে সহযোগিতামূলক আচরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে যারা সংকটকালীন মুহূর্তকে বিবেচনা করে আশীর্বাদ হিসেবে।

গত ছয় মাসে বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে পেঁয়াজ, লবণ ও মাস্কের মতো পণ্য। ইতিপূর্বে এসব নিয়ে সম্ভবত এত আলোচনা হয়নি। এ পণ্যগুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংকটের জন্য কিন্তু আমাদের দেশে শুধু সংকটের জন্য আলোচিত হয়নি। এর পেছনে রয়েছে আরও কিছু কথা। গত বছরের শেষের দিকে যখন আমাদের প্রধান পেঁয়াজ আমদানিকারক দেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ পেঁয়াজ ঘাটতির জন্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তখন রাতারাতি ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ হয়ে যায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। অথচ নতুন করে বেশি মূল্যে আমদানি করা পেঁয়াজ তখনও বাজারে আসেনি। স্টকে মজুদ থাকা পেঁয়াজই পাঁচগুণ মূল্য বাড়িয়ে দেয় অতি মুনাফাখোর কিছু ব্যবসায়ী। এমনকি মূল্য আরো বাড়ানোর জন্য তৈরি করে কৃত্রিম সংকট এবং তারা সফলও হয় মূল্য আরও বেড়ে যায়।

অবস্থা এমন হয়, রাশিয়া যখন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে তখন মানুষের পকেটে টাকা থাকা সত্ত্বেও যেমন পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়, তেমন পেঁয়াজের বাজারে যখন দাম প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়ে চলছে তখন আরেক দল ব্যবসায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় লবণের সংকট হয়েছে। আর সাধারণ মানুষও তাদের সেই ফাঁদে পা দিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে লবণের প্যাকেটের ওপর। মূল্য যাই হোক লবন ছাড়া তো চলার উপায় নেই।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস চীনের গণ্ডি পেরিয়ে ভয়াল থাবায় আক্রান্ত করেছে একশ’টির বেশি দেশকে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। সারা পৃথিবীতে আক্রান্ত এক লাখের অধিক মানুষ আর মৃত্যুর সংখ্যাটিও তিন হাজারের বেশি, প্রতিদিন বেড়ে চলছে নতুন আক্রান্ত দেশ রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আশার বাণী ছাড়া আর কোন ভালো খবর বিশ্ববাসীকে দিতে পারেনি। গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশেও কয়েকজন আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে। এ খবর প্রচারমাধ্যমে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সেই পেঁয়াজ ও লবণের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে ফার্মেসি বা যেখানে মাস্ক পাওয়া যায় সেসব দোকানে।

যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির মাধ্যমে সুস্থ কেউ সংক্রমিত হতে পারে তাই মাস্ক ব্যবহার করলে করোনা ভাইরাস থেকে অনেকটাই নিজেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। কিন্তু এবার অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা একধাপ এগিয়ে চীন থেকে বাংলাদেশে করোনার আবির্ভাব হওয়ার আগেই মাস্ক স্টক করে রেখে দিয়েছে কারণ তারা জানে সংকটের সময় কয়েকগুণ অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করতে পারবে। এর প্রমাণ পেয়েছি, তখনো করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আসেনি ডাস্ট থেকে সুরক্ষার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটে মাস্ক কিনতে গেলে দোকানদার ভাই বলেন, ‘মাস্ক প্রতি বক্সে তিনগুণ বেশি হয়ে গেছে। আর অতিরিক্ত মূল্যেও মাস্ক সরবরাহকারীরা সরবরাহ করছে না।’

বুঝতে পারলাম একদল অপেক্ষা করছে কবে জাতি করোনা নামক ভাইরাসের সংকটে পড়বে আর তাদের মুনাফার আশীর্বাদ শুরু হবে। এরপর প্রচারমাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর আসার পর পরিস্থিতি সবার জানা ৪০ টাকার মাস্ক এক লাফ দিয়ে হয়ে গেল ২০০ টাকা। তখন একদল ব্যবসায়ী নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত।

সংকটকালীন সুবিধাভোগীরাই কেন যেন বারবার জিতে যাচ্ছে। এ সংকটের পর হয়ত আরও কোনো সংকট অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আবার জিম্মি হতে হবে অন্য কোনো শ্রেণির মুনাফাখোরীদের পকেটে। এভাবেই কি জনগণের সংকট বারবার বিশেষ গোষ্ঠীর আশীর্বাদে রূপ নেবে!

মাহমুদুর রহমান মানিক : শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 
Electronic Paper