ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নদীদূষণ ও হত্যা : প্রতিকার কী

মোশারফ হোসেন
🕐 ১০:১৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। নদ-নদী বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, লোক-সাহিত্য, শিল্প-সাহিত্য ভূতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতি, ভৌগোলিক গঠন, ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ সমৃদ্ধি, রূপকথা, গল্প-কাহিনী, পৌরাণিক উপাখ্যান, গীতি, কবিতা, তীর্থস্থান গড়ে ওঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। মিশরকে নীল নদের দান বলা হয়। তেমনি বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটি গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদ-নদীর দান বলা যায়।

কালের আবর্তে প্রাকৃতিকভাবে এবং মনুষ্য সৃষ্ট নানা ধরনের অযাচিত, অদূরদর্শী তথা নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে প্রবল স্বোতস্বিনী নদীর গতিধারা বিস্তার কমতে কমতে খর্বকায় হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে। দখল দূষণে রুগ্ন-শুকনো মৃতপ্রায়।

অসংখ্য ছোট বড় নদীবাহিত পলি কাদা ও নুড়ি স্তরায়ন হতে হতে সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের। ছড়িয়ে ছিটিয়ে শিরা-উপশিরার সদৃশ নদী বাংলাদেশকে করেছে শস্য-শ্যামল। হাজার হাজার বছর নদীতে নিরবধি বয়ে যাওয়া পলি দ্বারা সৃষ্টি। বাংলাদেশের নদ-নদী গুলো হচ্ছে- পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, যমুনা, ও কর্ণফুলি।

এছাড়াও রয়েছে- তিস্তা, করতোয়া, কপোতাক্ষ, গড়াই, আত্রাই, ধরলা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, মহানন্দা, পুনর্ভবা, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, আঁড়িয়াল খা, তিতাস, চিত্রা, সুরমা, সাঙ্গু, হালদা, কুশিয়ারা। আরো নদীর মধ্যে রয়েছে- জলাঙ্গী, হলদি, শাল, কানা, নাগর, কালিন্দী, কুমীর, অজয়-স্বরসতী, ধল/দামোদর, কিশোর, রূপেনারায়ণ, করসাবতী, শিলাবলী, হাঙ্গর, সুবর্ণরেখা, মনুরাক্ষী, কৌশিকী ইত্যাদি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে। নদ-নদী, পুকুর-খালবিলের পানি মাত্রাতিরিক্ত হারে দূষিত হওয়ার ফলে, কৃষিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার এবং কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খালবিল-নদ-নদীর পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।

ভবিষ্যতে প্রজন্মের জন্য ক্ষুধাও দারিদ্র্যের পাশাপাশি তৃষ্ণামুক্ত করাটাও চ্যালেন্স হিসেবে দাঁড়াচ্ছে দিন দিন। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদী ও পানি সম্পদের গুরুত্ব সীমাহীন। নদীনালা-শুধু একটি দেশের আবহাওয়া জলবায়ুর সঙ্গে জড়িত নয়। নদী গভীরভাবে মিশে আছে একটি দেশের ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে অন্য একটি দেশের সঙ্গে।

একটি দেশের সংস্কৃতি নদীর মাধ্যমেও আদান প্রদান হয়ে থাকে নানাভাবে। আবার চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশের ভূ-রাজনীতিও লক্ষণীয়। একটি দেশের খামখেয়ালিতে আরেকটি দেশের জীবন-জীবিকা, আবহাওয়া, জলবায়ু, তাপমাত্রা, জীববৈচিত্র্যের ওপর বিপন্নতার বিষয়টি রীতিমতো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে যায়। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদী ও পানি সম্পদের গুরুত্ব সীমাহীন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, শিল্পায়ণ এবং কৃষি উৎপাদনের জন্য বিশ্বব্যাপী পানির চাহিদা বেড়েই চলেছে। ৯৩ শতাংশ পানির উৎস বাংলাদেশের বাইরে হওয়ায় পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুষ্ক মৌসুমে খরার সম্মুখীন হয়ে থাকে নদী বিস্তৃত হওয়ার কারণে।

পণ্য বাহনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়, বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে। সব থেকে মারাত্মক যে বিষয়টি আমদের ভাবিয়ে তুলছে- জলবায়ুর পরিবর্তন তথা জীববৈচিত্র্যের বিপন্নতা। সে ক্ষতি অদূর ভবিষ্যতে কাটিয়ে ওঠা দুষ্কর হবে। প্রাণীকুল-উদ্ভিদকুল বিপন্ন হতে হতে বিভিন্ন প্রজাতি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী শাসনের ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণী তথা প্রাকৃতিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশগত নতুন নতুন সমস্যার।

নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। প্রাণীকুলের বিশেষ করে মনুষ্য জাতির শারিরীক-মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের মারফত জানা যায়- চট্টগ্রামের টিএসপি সার কারখানা থেকে সালফিউরিক ও ফসফরিক অ্যাসিড, চন্দ্রঘোনা, কর্ণফুলি কাগজের মিল, সিলেট কাগজ মিল, দর্শনার কেরু এন্ড কোম্পানি, খুলনার শিপইয়ার্ড মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ঢাকার অলিম্পিক ও কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল লক্ষ-লক্ষ তরল বর্জ্য পাশ্ববর্তী নদী ও জলাশয়ে পতিত করার মধ্য দিয়ে মারাত্মক জল দূষণের কবলে ফেলছে।

গঙ্গা ভারত থেকে প্রায় ৮৬২০০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত। গঙ্গা অববাহিকায় বর্জ্য নিয়ে আসে। তীরবর্তী ৭০০ শহরের প্রায় ১২০ কোটি লিটার বর্জ্য প্রতিদিন গঙ্গা নদীর প্রবাহে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে এবং ভাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের মানুষকে সেই দূষিত পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে নদীতে জলতাত্ত্বিক, জীবতাত্ত্বিক অবস্থার পানি প্রবাহের গতি, মাছের আবাসস্থল বিচরণ পানির বিশুদ্ধতা, অপসারিত পানির পরিমাণ, মৎস্য প্রজাতির ধ্বংস হচ্ছে। দিন দিন প্রাণীজ আমিষের উৎস অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা নদী বিধৌত দেশের ছোট-বড় মোট ২৩০টি নদী আছে। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে শাখা-প্রশাখাসহ নদীর সংখ্যা প্রায় ৮০০টি। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অভিন্ন ৫৭টি নদী। আর জলরাশি প্রায় ২৪১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে আছে নদ-নদী। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ প্রায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।

গেল কয়েক বছরে ২৫টির বেশি নদী বিলুপ্তির পথে পৌঁছেছে দখল-দূষণের কারণে। রূপসা, সুরমা, নাফ, হালদা, পুনর্ভবা, করতোয়া, তিতাস, কর্ণফুলি সবই দূষণ দখলে নিমজ্জিত। রাজধানীকেন্দ্রিক নদীগুলোর কথা সত্যি বর্ণনাতীত। বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা-তুরাগের পানি বিষাক্ত, কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। বিবিসির সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৪৩৫টি নদী এখন হুমকির পথে। এর মধ্য ৫০-৮০টি নদী বিপন্নতার শেষ প্রান্তে। অথচ রাজধানী ঢাকার উৎপত্তি ঘটেছিল বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে। লন্ডনের টেমস নদীর সাথ তুলনা করা যেত। এটি রাজধানীর ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত হত।

১৯৭৫ সালে এ দেশে নৌ-পথ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। এখন সেটি মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। শুকনো মৌসুমে এ পথ কমতে কমতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারে এসে পৌঁছায়। নদীগুলোর নাব্য হারানোর নানাবিধ কারণ রয়েছে। অবৈধ দখলদারিত্ব, অপরিকল্পিত নদীশাসন, দূষণ, ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, ইচ্ছামতো বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি।

সেজন্য সরকার প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ঘোষণা করে আর বিশ্বব্যাংক বুড়িগঙ্গাকে মরানদী নামে ঘোষণা দিয়েছে। কপোতাক্ষ, সুরমা নদী, ভৈরব, মুক্তেশ্বরী, বেতনা, নরসুন্ধা, ফুলেশ্বরী, ধনু, রূপসা, ডাকি, শিবসা- অনেক নদী পরিণত হয়েছে সরুখালে।

বিআইডব্লিউটিএর মতে, ১৯৭১ সালে দেশে নদী ছিল ২৪০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। যা ১৯৮৪ সালে হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৪০০ কিলোমিটারে। হালে হারিয়েছি মোট ১৮ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নদী পথ। বাকি আছে মাত্র ছয় হাজার কিলোমিটার। গবেষকদের মত হচ্ছে, এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২০৫০ সাল নাগাদ নদীমাতৃক বাংলাদেশের নাম শুধু ইতিহাসের পাতায় থাকবে। সায়েদাবাদের শোধনাগারই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে যৎসামান্য।

রাজধানীর প্রতিদিনের পয়ঃবর্জ্যরে প্রায় সবটুকু উন্মুক্ত খাল, নদ-নদী, নর্দমা হয়ে অপরিশোধিত অবস্থায় বুড়িগঙ্গায় জমা হচ্ছে। এদিকে টঙ্গী বর্জ্য অঞ্চলের বর্জ্য চলে যাচ্ছে বালু ও তুরাগ নদীতে। নগর উন্নয়নের ফলে খাল-বিল, জলাশয় ভরাটের ফলে সংকুচিত নদীর নৌ-চলাচল সমস্যা ছাড়াও শহর ও বন্দরের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেই সেই সঙ্গে নগরকেন্দ্রিক পরিবেশ। পরিবেশ, আবহাওয়া, জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এক সময় এ প্রায় ১ হাজার ৩৬০টি ছোট বড় নদ-নদী খাল বিল কমে বর্তমানে ৫৬০টিতে পৌঁছেছে। খরস্রোতা নদীগুলোতে জেলেরা মাছ ধরত, নৌকাবাইচ হতো, উৎসবের আমেজে মেতে উঠত নদীর পাড়ের মানুষগুলো। শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত নদীগুলোর পানির দূষণমাত্রা বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছায়। এ রকম মাত্রাতিরিক্ত দূষণ কবলিত প্রধান নদ-নদীগুলো প্রায় ২৯টি।

পরিবেশ অধিদফতরের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, মৎস্য অধিদফতর ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ দেশের মাছের জন্য ৯টি অতি গুরুত্বপূর্ণ নদী নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন মাছের উৎস মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে হুমকিতে রয়েছে। সেই সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মাত্রার ধাতু আছে বলে জানিয়েছে।

নদী তীরবর্তী শিল্পকারখানার বর্জ্য অপরিশোধিত বর্জ্য কৃষিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ও সেচের পানির সঙ্গে ধুয়ে নদীতে পড়ছে। হাটবাজার, শহর, বাসাবাড়ি, বস্তি এলাকার গৃহস্থ বর্জ্য ফেলার উপযুক্ত জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে নদীকে।

পরিবেশ অধিদফতরের সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন রাজধানীর চারপাশে নদীগুলো প্রায় সাড়ে চার হাজার টন বর্জ্য ও ৫৭ লাখ গ্যালন দূষিত পানি গিয়ে পড়ছে। এছাড়া রাজধানীর বাইরে সাভার, আশুলিয়া নতুন চামড়া শিল্প নগরী। চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তীরে, পদ্মার মাওয়া ঘাটের পাশে, মেঘনার তীরে শিল্প কারখানা হচ্ছে।

ডায়িং কারখানাগুলোতে এক টন কাপড় উৎপাদন করতে নদীতে বর্জ্য যাচ্ছে ২০০ টন। ওয়াসা প্রতিদিন আবর্জনা পরিশোধন করতে পারে মাত্র ২০ শতাংশ। ট্যানারি থেকে প্রতিদিন প্রায় ২১ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য নদীতে যাচ্ছে। ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন নদীতে সরাসরি যাচ্ছে ১২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য।

পরিবেশ বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের ৩৫ শতাংশ আসে ট্যানারি কারখানা থেকে। এছাড়াও নদ-নদী ঘেষা শিল্পকারকাণার ১৪০টিরও বেশি রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে- নদীতে অ্যামোনিয়ার মান মাত্রা প্রতি লিটারে ০.৫ মাইক্রোগ্রাম অথচ এসব নদীতে বিরাজমান মানমাত্রা ৮.২ মাইক্রোগ্রাম।

এছাড়াও ক্রোমিয়াম আয়রন, জিংকের মতো ভারী ধাতু রয়েছে। শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জের ইছামতি নদীতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে জানা যায়, পরিবেশ দূষণের কারণে বছরে ৬৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। যা ২০১৫ সালের জিডিপির ৩.৪ শতাংশ। শহরের পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বিশ্বে মৃত্যু হয় ৮০ হাজার লোকের যা মোট মৃত্যুর হার ২৮ শতাংশ।

ওয়েস্ট কনসার্ন বর্জ্যকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানের মতে, ১০ বছর পর বর্জ্যরে পরিমাণ হবে সাড়ে ৮ হাজার টন। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির হিসাবে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী পানি সংকটে ভুগবে। পৃথিবীতে মজুদ পানির বেশি সমুদ্রের লোনা। মোট পানির মাত্র ৩ শতাংশের স্বাদু পানি। তাই স্বাদু পানির মজুদকে লিকুইড গোল্ড রিজার্ভ বলা হয়।

২০০৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে নদী ও জলাশয় দখল বন্ধ করতে ১৭ দফা প্রতিরোধমূলক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে তাদের নামের তালিকা জনসম্মূখে প্রকাশ করা। নদী বা জলাশয় দখলকারী বা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী ব্যাংক ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না। ঋণ দেওয়ার সময় অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইউপি থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত যে কোনো ধরনের নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য বলে ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর অপমৃত্যু রোধ করে ঢাকা মহানগরকে রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পাশাপাশি জরিপ কাজের পর সীমা নির্ধারণ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার নির্দেশ ছিল। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার ঘোষণা আশার সঞ্চার করেছে।

পরিবেশ উন্নয়নের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২০ আবেদন আহবান একটি সময়োপযোগী সচেতনতামূলক সিদ্ধান্ত।

এ নদী দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি সুদৃষ্টি দিতে হবে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি-আধা সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতি সপ্তাহে একদিন ক্লাসে এ সম্পর্কিত আলোচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের এগিয়ে আসা খুব জরুরি। ব্যাপক জনসচেতনতা ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড উৎসাহিত করার স্বার্থে মিডিয়ায় ফলো ও প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

মোশারফ হোসেন : লেখক ও গবেষক প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
সরকারি ইস্পাহানি কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা
[email protected]

 

 
Electronic Paper