ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনা ভাইরাসে সতর্কতা

গোপাল অধিকারী
🕐 ৯:২৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চীনে এ ভাইরাসে মারা গেছে অনেকে। আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতেও এ রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের কোনো রোগী এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তবে বিদেশ ফেরত এক যাত্রীকে গত ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার করোনা সন্দেহে বিমানবন্দর থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। তবে বিস্তার ঠেকাতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ চীনগামী বিমানের ফ্লাইট বাতিল করছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া, ক্যাথে প্যাসিফিক, এয়ার ইন্ডিয়া ও ফিনএয়ার ইতোমধ্যে চীনগামী বিমানের সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।

চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববাজারে বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কিনা তা এখনও অজানা। তবে চীনের বিভিন্ন স্থানে রোগীর মৃত্যুর ধরন থেকে কিছু লক্ষণ ধারণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এবার জেনে নিই- করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। তবে নতুন এ করোনা ভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। এ ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় সঙ্কটের এ সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে নিজেকে ও আশপাশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সাবান ও পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধুতে বলা হয়েছে ডব্লিউএইচওর নির্দেশনায়। এছাড়া মাংস ও ডিম অবশ্যই যথাযথ তাপে ও ভালোমতো রান্না করে খেতে বলা হয়েছে। হাঁচি ও কাশির সময় অবশ্যই হাত বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে। এরপর টিস্যু ফেলে দিতে হবে এবং অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে। যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পর হাত ধুতে হবে। কোনো প্রাণীর যত্ন নিলে বা স্পর্শ করলে ও প্রাণিবর্জ্য ধরার পরও হাত ধুতে হবে। শরীরে যে কোনো সংক্রমণ এড়াতে রান্না ও খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিতে হবে। নিজের পাশাপাশি অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও।

ব্যবহার করা টিস্যু খোলা ঝুড়ি বা ডাস্টবিনে না ফেলে ঢাকনা রয়েছে এমন ঝুড়িতে ফেলতে হবে। হাতে গ্লাভস না পরে বা নিজে সুরক্ষিত না থেকে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির মুখ ও দেহ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একইভাবে গবাদিপশু ও বন্যপশুকে ধরার আগেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। রান্নাঘরের কাজেও বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলছে। কাঁচা মাংস, সবজি, রান্না করা খাবার কাটার জন্য ভিন্ন চপিং বোর্ড ও ছুরি ব্যবহার করতে হবে। কাঁচা মাংস, সবজি ও রান্না করা খাবার হাতে ধরার আগে অবশ্যই প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিতে হবে। রোগে ভুগে মারা যাওয়া বা অসুস্থ প্রাণীর মাংস একেবারেই খাওয়া চলবে না। তবে রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন এলাকাতেও উপযুক্ত তাপে ও ভালোভাবে সিদ্ধ করা মাংস খেলে ঝুঁকি নেই। কাঁচা বাজারে গিয়ে কোনো প্রাণী ও প্রাণীর মাংস হাতে ধরলে দ্রুত হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।

কাঁচা বাজারে অবস্থানের সময় অযথা মুখে-চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজের জায়গাটি দিনে অন্তত একবার হলেও পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরিধেয়টি অবশ্যই প্রতিদিন বদল করতে হবে এবং ধুতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা ভালো। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কের মধ্যে ভ্রমণ বিষয়েও সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদি জ¦র-সর্দি অনুভূত হয়, তাহলে যে কোনো ভ্রমণ বাতিল করাই ভালো। পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও ওষুধ খেতে হবে। জ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি মাস্ক ব্যবহার করা হয়, তবে নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। একবার মাস্ক পরলে তা বারবার স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একবার মাস্ক ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হবে। মাস্ক ধরার পর হাত ধুয়ে নিতে হবে।

যদি ভ্রমণের সময় অসুস্থ বোধ হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। এর আগে রোগের ইতিহাস থাকলে সেটাও চিকিৎসককে জানাতে হবে। যেখানে সেখানে বা জনসমাগমের স্থানে থুথু ফেলা যাবে না। অসুস্থ প্রাণী ধরা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো রোগ-ব্যাধিতে আত্মবিশ^াসই বড়। আমার মনে হয় মহাঅসুখেও যদি সাহস ও মনোবল থাকে তাহলে সেই অসুখটা ৫০ শতাংশ নির্মূল হয়। আর মনোবল দুর্বল হলে সেই অসুখটা বেড়ে যায়। ঠিক একইভাবে কঠিন অসুখে চিকিৎসক যদি ভালো ব্যবহার করে রোগীকে আত্মবিশ^াসী করে তোলে তাহলে অর্ধেক রোগ তখনই ভালো হয়ে যায় বলে মনে হয়। করোনা কেন যেকোনো ভাইরাস যেকোনো সময়ে আক্রমণ করতেই পারে। করোনা ভাইরাসের সর্তকতাগুলো কিন্তু শুধু এ ভাইরাসের কারণেই না যে কোনো রোগ থেকে বাঁচার জন্যই করা দরকার। আর করোনা ভাইরাসে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই কারণ এ ভাইরাস এখনো বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি আশা করি করবেও না। আসুন, আমরা সচেতন থাকি, অন্যদেরও সর্তক করি।

গোপাল অধিকারী : কলাম লেখক
[email protected]

 
Electronic Paper