ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অবহেলিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

আজহার মাহমুদ
🕐 ৯:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। যাকে বলা হয় বাংলাদেশের একটি এফেলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয়। গাজীপুর জেলার বোর্ড বাজারে ১১.৩৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অধিভুক্ত কলেজের তদারকি করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় বাড়তি চাপ কমাতে ও অধিভুক্ত কলেজগুলোর মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হয়।

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ নতুন সিলেবাসের মাধ্যমে চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) ও এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করেছে। এছাড়াও তিন বছর মেয়াদী স্নাতক (পাস) কোর্স এবং চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল কোর্স রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি এবং এমফিলের ব্যবস্থাও আছে।

দেশের স্নাতক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেকই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি বেসরকারি কলেজ আছে ২২৭৪টি। এর মধ্যে ২৭৯টি সরকারি কলেজ। স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয় ১৮১টি সরকারি কলেজে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২৮ লক্ষ।

দেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিব পরিবার থেকে উচ্চ শিক্ষায় আসা সর্বোচ্চ সংখ্যক ছাত্রদের আশ্রয়স্থল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে, উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে বেশি অবহেলা আর উদাসীনতার শিকার এ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯২ থেকে ২০২০। ২৮ বছরের দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েও দৃশ্যমান উন্নতির ছোঁয়া পাচ্ছে না এ বিশ্ববিদ্যালয়। অভিজ্ঞতা বলে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যয় যত বেড়েছে ভোগান্তিও বেড়েছে তত বেশি। ২০১৪ সালের পরে সেশন জট কিছুটা কমলেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মাণ করা হয়নি পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, পরীক্ষার হলরুম, অধিকাংশ কলেজে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষকও।

যে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা অনেক আগেই নিরাশায় পরিণত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৮ বছরেও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি মেলাতে পারেনি। বছরের পর বছর কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর অনাদরে সমস্যার স্তূপ জমতে জমতে পাহাড়সম আকার ধারণ করেছে। এ পাহাড় ডিঙোনোর মন্ত্র খোদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আছে কিনা তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন।

রুলস-রেগুলেশন অনুযায়ী বছরে ৩৬৫ দিনে ২১০ দিন ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও ক্লাস হয় মাত্র ২৫-৩০ দিন। অনেক কলেজে দেখা যায় বছরে একটি ক্লাসও হয় না। এ ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষক কিংবা কলেজের ওপর দোষ চাপানো ঠিক হবে না। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্ররাও কলেজে কিংবা ক্লাসে উপস্থিত থাকে না। তবে এর দায়ও কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি এড়াতে পারে না। কারণ শিক্ষার্থীরা কেন ক্লাসে আসছে না, কী তাদের সমস্যা এসব তদারকি করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের। ক্লাসে ছাত্রদের টানতে না পারার ব্যর্থতা কলেজের শিক্ষকদেরও নিতে হবে। এ জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়েনি।

এত সমস্যার মধ্যেও সমস্যা বেড়েই চলে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষরাও তাই এ বিশ্ববিদ্যালয়কেও ছোট মনে করে। মনে হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কিছুই না। এর দায়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিতে হবে। কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এমন কোনো কার্যক্রম করেনি যা দেশের মানুষের কাছে আমাদের তুলে ধরতে সহায়ক হয়েছে। আর আমাদের পাঠদান সম্পর্কে সকলের মুখস্থ ধারণা আছে। সবাই জানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মানে কী, কেমন। আর তাই যারা ক্লাস করতে চায় না তাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি সাজেস্ট করে অনেকে। মানে পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া আর কাজ নেই। এটাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

শুধু এসব সমস্যাতেই শেষ নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অন্যতম দাবি হচ্ছে সমাবর্তন। যা অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ বছরে একটি মাত্র সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাও ২৫ বছর পর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ সালে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব আবদুল হামিদ খানের উপস্থিতিতে সমাবর্তনটি হয়েছিল। এরপর আবারও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ। তিন বছর সমাপ্ত হয়ে গেল এখনও ২য় সমাবর্তনের দেখা পেল না শিক্ষার্থীগণ। এ দায় কার, শিক্ষার্থীদের না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের? প্রশ্নগুলোর উত্তর পাব না জানি। তবুও রেখে গেলাম।

নিয়মিত ক্লাস, এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে পাঠদান, নিয়মিত এসাইনম্যন্ট, প্র্র্যাকটিক্যালসহ ক্লাসের উপস্থিতির মাধ্যমে ইনকোর্স নম্বর প্রধান করতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্লাসে উপস্থিত থাকার চাইতে প্রাইভেটে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। এতেই মিলে যায় ইনকোর্স নম্বর। এসব সমস্যার সমাধান যতদিন হবে না, ততদিন এমন পরিবেশ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়টির।

বলতে চাই, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবহেলা শব্দটি মুছে যাক। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম। সেই সাথে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সকল আশা যেন পূরণ হয়।

আজহার মাহমুদ : শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম
[email protected]

 
Electronic Paper