ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশেষ কলাম

হাঁপানি চিকিৎসায় হোমিও পরামর্শ

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
🕐 ৮:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০

হাঁপানি একটি দুরারোগ্য ব্যাধি, অ্যাজমা হচ্ছে ক্রনিক এবং জীবনসংশয়ী মারাত্মক ফুসফুসের রোগ। দেশে হাঁপানি রোগ হিসেবে পরিচিত। এ রোগে সাধারণত কাশির সঙ্গে বুকে ঘড়ঘড় শব্দ এবং শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। পাক-ভারত উপমহাদেশে এটি প্রাচীন রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রোগটি সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায়।

বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে পর্যাপ্ত গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ও অ্যালোপ্যাথিতে হাঁপানির কোনো স্থায়ী চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। রোগটিকে শুধু চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। কিন্তু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে সেটিকে পূর্ণ আরোগ্য করা যায়।

আমাদের দেশের হাঁপানির সঠিক পরিসংখ্যান জানা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ অ্যাজমায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে ১০ মিলিয়নই (এর মধ্যে তিন মিলিয়ন শিশুও আছে) ভুগছেন অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমায়। তাই বলা যায় আমাদের দেশেও অ্যাজমার প্রকোপ কম নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক ও নিয়মিত চিকিৎসা ও পরিকল্পিত জীবনযাপনের মাধ্যমে এ রোগীরা অ্যাজমার তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

আবার পৃথিবীর মধ্যে কিছু দ্বীপে এ রোগের প্রকোপ খুব বেশি। হাঁপানি এমন একটি দুরারোগ্য ব্যাধি যাতে একবার আক্রান্ত হলে দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে রোগীকে সারা জীবন কাটাতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি কখনো সামাজিক বা পারিবারিক আনন্দ উল্লাসে যোগদান করতে পারে না। পারে না কোনো পরিশ্রমের কাজে অংশ নিতে। তাকে অনেক সময় গৃহবন্দি অবস্থা দিন কাটাতে হয়।

অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই ঠাণ্ডা আবহাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। বর্ষার ঠাণ্ডায়, শীতের ঠাণ্ডায় রোগ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ব্রংকিয়াল হাঁপানি শীতকালে বাড়ে। শীতের ঠাণ্ডা রোগীর অসহ্য। শীতকালে নাকে একটুখানি ঠাণ্ডা বাতাস বা কুয়াশা প্রবেশ করলেই প্রথমে হাঁচি ও পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বর্ষাকালে দু-এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লে, খোলা জানালার পাশে রাতে ঘুমালে, ভেজা বাতাসে ভ্রমণ করলে রোগের লক্ষণ বৃদ্ধি পায়।

অ্যাজমা দুই ধরনের। একিউট অ্যাজমা ও ক্রনিক অ্যাজমা। অ্যালার্জিক অ্যাজমা সাধারণত কোনো এলার্জেন বা এন্টিজেন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢুকলে আমাদের ইমিউন সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যেমন- ফুলের রেণু, বিভিন্ন প্রাণীর লোম, মাইট ও ধুলাবালি ইত্যাদি। ফলশ্রুতিতে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয় ও হাঁপানি দেখা দেয়। একে এটোপিক অ্যাজমা বা এলার্জিক অ্যাজমাও বলা হয়।

নন-এলার্জিক অ্যাজমা এ ধরনের অ্যাজমা এলার্জিঘটিত নয় বরং ধূমপান, রাসায়নিক দ্রব্য, জীবাণুর সংক্রমণ, মানসিক চাপ, অট্টহাসি, অধিক ব্যায়াম, এস্পিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন, খাদ্য সংরক্ষণকারী উপাদান, পারফিউম, অত্যধিক ঠাণ্ডা, গরম, আর্দ্র ও শুষ্ক বাতাসের কারণে দেখা দেয়।

মিশ্র অ্যাজমার ক্ষেত্রে রোগী পূর্বোক্ত এলার্জিক ও নন-এলার্জিক দুই ধরনের অ্যাজমাতেই ভোগেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকোপ বেড়ে যায়।

রাত্রিকালীন অ্যাজমায় হাঁপানি, বিশেষত রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে আক্রমণ করে। রোগীর শারীরিক দুর্বলতার জন্য রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। এমনকি দিনের বেলায় স্বল্পকালীন নিদ্রা যায়। রাত্রিকালীন অ্যাজমা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত কারণ এ ক্ষেত্রে রেসপিরেটরি এরেস্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে।

ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা মূলত এক ধরনের এলার্জিক রিঅ্যাকশন যাতে শ্বাসকষ্ট ও বুকে সাঁই সাঁই শব্দ হয়। শ্বাসনালির চারপাশের পেশী ও মিউকাস মেমব্রেনসমূহের সংকোচন দেখা দেয়। শ্বাসনালির সংক্রমণ, বায়ুবাহিত এলার্জেন, খাদ্যের এলার্জেন ও অত্যধিক মানসিক চাপ এর প্রধান কারণ।

হোমিওপ্যাথির মতে তিনটি রোগ-বীজ হলো সব রকম অসুস্থতার কারণ। সোরা সাইকোসি, সিফিলিস, সোরা সাইকোসিস বা সোরা সাইকোসিস সিফিলিস মিশ্রভাবে অ্যাজমার জন্য দায়ী। বর্তমান যুগের এ মিশ্র রোগ-বীজকে অনেকে টিউবারকুলার মায়াজম নামে নামকরণ করে থাকে।

এ জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কে ডা. হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে সঠিক রোগী লিপিকরণের মাধ্যমে যদি চিকিৎসা করা যায় তাহলে অ্যাজমাসহ যে কোনো জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যভিত্তিক লক্ষণ সমষ্টিনির্ভর ও ধাতুগতভাবে চিকিৎসা দিলে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। চিকিৎসাবিজ্ঞানে চিরন্তন সত্য বলে কিছুই নেই।

কেননা এক সময় আমরা শুনতাম যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই, বর্তমানে শুনতে পাই যক্ষ্মা ভালো হয়। এ সবকিছু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ফসল। অ্যাজমা চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। সামগ্রিক উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়। এটিই একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগীর কষ্টের সমস্ত চিহ্ন এবং উপসর্গগুলো দূর করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।

ডা. মাহতাব হোসাইন মাজেদ : কো-চেয়ারম্যান হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
[email protected]

 
Electronic Paper