ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কেমন হবে আগামী দিনের ডিজিটাল স্কুল

শেখ আনোয়ার
🕐 ৯:০৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২০

শিশুর বেড়ে ওঠার সময়টাকে আমরা সব সময় তুলনা করি নরম কাদামাটির সঙ্গে। নরম কাদামাটিকে যেমন যে কোনো আকৃতি দেওয়া যায়, শিশুর মননও তেমনি। সে চারপাশে যা করতে দেখে, চলতে দেখে সে অনুযায়ীই গড়ে ওঠে। তাই চার-পাঁচ বছর বয়স হওয়ার পরপরই শিশুকে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে বাবা-মায়ের চিন্তা শুরু হয়। কোন স্কুলে পড়াবেন, কীভাবে ভর্তি করাবেন, কেমন করে স্কুলে নেবেন খুঁটিনাটি বিষয় ভেবে তারপর শুরু করান শিশুর স্কুলজীবন।

কখনো কি ভেবেছেন, শিশুকে ঠিক কীসের জন্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন? স্বাভাবিকভাবেই হয়তো বলবেন, পড়াশোনার জন্য। পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য। সন্তান যেন নিজের জীবনটা গুছিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। এই সঙ্গে আপনি কি একবারও ভেবেছেন, আজকে স্কুলে গিয়ে শিশু যা যা পড়ছে বা শিখছে, সেগুলো তার ভবিষ্যৎ জীবনটাকে সুন্দর ও সুনিশ্চিত করে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে কিনা? সেই অনাগত সময়ের জন্য আমরা কি নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করছি? আগামী বিশ্বের যোগ্য মানুষ হয়ে উঠতে হলে ঠিক কোন ধরনের শিক্ষা শিশুদের দেওয়া দরকার? আমরা কি জানি, কীভাবে সেই প্রস্তুতিটা নিতে হবে? আপনার, আমার সন্তান পড়াশোনা শেষ করে বিজ্ঞানী, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসক, শিক্ষক, বিচারক, রাজনীতিবিদ, কী হবে না হবে তা কেউ জানি না। তবে নিশ্চিত করে জানি, সন্তানদের এ ডিজিটাল যুগের উপযোগী, পরিশ্রমী, দক্ষ, বুদ্ধিদীপ্ত মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

জি হ্যাঁ। নতুন প্রজন্মকে তাই বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। আগামী দিন ডিজিটাল দুনিয়ার বিপ্লব ঘটে যাবে। ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে গিয়ে নিজেকে প্রমাণের কোনো ব্যাপার তখন থাকবে না। শিশুর পরিচয় জানিয়ে দেবে তার ডিজিটাল প্রোফাইল। যেটা তৈরি হবে, কী কী গুণাবলি সে সফলভাবে অর্জন করেছে তার ওপর ভিত্তি করে। শুনতে আজগুবি মনে হলেও এ কথাই সত্যি, আগামীর পৃথিবীতে মানুষ কাজের পেছনে ছুটবে না, কাজ ছুটবে মানুষের পেছনে। সবচেয়ে যোগ্য মানুষটাকে খুঁজে নিতে তখন আজকের মতো অত বেগ পেতে হবে না। শিশু কী কী করতে পারবে, সাক্ষ্য দেবে তার অর্জিত শিক্ষা। তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব তথা হাইওয়ে থেকে সুপার হাইওয়েতে তথ্যের যাত্রার এ যুগে আগামী প্রজন্মকেও সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। হাতের কাজ করবে যন্ত্র, কেবল মাথার কাজ করবে মানুষ; পাশাপাশি তাদের মধ্যে সৃজনশীলতার বীজ বপন করতে হবে। শিশু মনে নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিও তৈরি করতে হবে। কিন্তু আপনার শিশু সে জন্য তৈরি হচ্ছে তো?

বর্তমান গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুলগুলোর শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল প্রসেসর মনে করে থাকেন। গৎবাঁধা মুখস্থ পড়াশোনা আর গাদা-গাদা পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই কি শিশুরা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে? শিশুরা যদি একের পর এক প্রশ্ন করতে শেখে, চারপাশটাকে অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে দেখতে শেখে, তাহলে তার চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব তৈরি হবে। গভীরভাবে চিন্তার সক্ষমতাই শিশুকে আগামীর পৃথিবীতে টিকে থাকার রসদ জোগাবে। আমাদের স্কুলগুলো কি শিশুকে একের পর এক ইচ্ছেমতো প্রশ্ন করতে শেখায়? শিশুর সামনে চিন্তার এক অবারিত জগতের দ্বার খুলে দেওয়া হয়? শিশুর চিন্তাশক্তিকে উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে কোনো স্কুলের সিলেবাস রচিত হয় কি?

ওদিকে প্রযুক্তিতে উন্নত দেশের নতুন ধারার ডিজিটাল স্কুলগুলো শিশুদের ইচ্ছেমতো প্রশ্ন করতে শেখায়। তারা শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটাচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। যদিও অনেক স্কুলই এখনো উপলব্ধি করতে পারেনি এ নতুন ধারার ডিজিটাল স্কুলের প্রয়োজনীয়তা। তবুও শিশুর চিন্তাশক্তিকে উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে সঠিক পথে পা বাড়িয়েছে চীন, জাপান, সুইডেন, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের মিডল স্কুল, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন ডিসি স্কুল, মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য। নতুনধারার এসব স্কুলে শিক্ষার্থীরা তাদের অ্যান্ড্রয়েড গেজেটকে- পেন্সিল, বই-খাতার মতো সমানতালে ব্যবহার শুরু করেছে। কারণ নতুন ধারাটা হলো ‘অডিও ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন’ (এভিপি) নির্ভর শিক্ষাদান। যাকে বলে অনলাইন মাল্টিমিডিয়া, ইন্টারঅ্যাকটিভ হোয়াইট বোর্ডের মাধ্যমে সরাসরি শিশুকে সম্পৃক্ত করে পাঠদানের বিশেষ প্রযুক্তিগত নতুন কৌশল।

এখন স্কুলের প্রতিটা শ্রেণিকক্ষেই ইন্টারঅ্যাকটিভ হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। যা শিক্ষার জন্য অত্যন্ত চমৎকার ও কার্যকর নতুন প্রযুক্তিগত এক হাতিয়ার। তাই লেখাপড়া আজ আর কষ্টকর কাজ নয়। লেখাপড়া হয়ে উঠেছে দারুণ মজার, আনন্দের। শিশু শিক্ষার্থীরা ম্যাজিকের মতো বিজ্ঞান-প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন, কাজ-কর্ম স্বচক্ষে দেখে জাদুর মতো ব্যাপক আকৃষ্ট হচ্ছে।

এ হোয়াইট বোর্ডে বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করা যায়। স্লেটের মতো যখন তখন মুছেও ফেলা যায়। মুছতে বা লিখতে কোনো খরচ লাগে না। রঙ কালি গায়ে মাখার কোনো ভয় নেই। শিশুরা তাই যখন তখন, যেমন তেমন রঙিন স্টিকার বানাতে পারে। শুধু কি তাই? শিক্ষক যখন ব্যাকরণ পড়ান, কিংবা গানের ক্লাস নেন তখনকার ক্লাস রুম আর পরিবেশ বিজ্ঞানের ক্লাসরুমের পরিবেশগত পরিবর্তন ম্যাজিকের মতো অটোমেটিক পরিবর্তন ঘটে যায়। যখন-তখন বিষয়ভিত্তিক আবহ নিয়ে সজ্জিত হয়ে উঠে পরবর্তী নতুন ক্লাসরুম। এ আবহ শিশুদের আনন্দময় শেখার যুৎসই পরিবেশ সৃষ্টি করে থাকে। শিশুরা এতে আরও বেশি সৃজনশীল হতে পারে।

শিক্ষার্থীরা দরকারে নিজেদের অ্যান্ড্রয়েড গেজেটে কপি করে নিয়ে বাসায় আনন্দময় শিক্ষা চর্চার সুযোগ পাচ্ছে। শিশুরা এতে গল্প শিখতে পারছে। তাদের নিজেদের বই প্রিন্ট করতে পারছে এবং গণিত, প্রজেক্ট, আর্ট, স্প্রেডশিট বা এ জাতীয় সকল প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে পারছে। শুধু তাই নয়। যুক্তরাজ্যের কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসরুম নেটওয়ার্কিংয়ের সাহায্যে ইনটারনেট বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হচ্ছে। যা ক্লাসরুমের দেয়ালকে অতিক্রম করে ক্লাসের পরিধিকে দূরবর্তী দেশ পর্যন্ত প্রসারিত করেছে। আমেরিকার কিছু এলাকায় ভয়েস মেইল সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে। যার সাহায্যে অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলের প্রতিদিনের হোমওয়ার্ক বা অন্যান্য ঘোষণা জেনে নিতে পারছেন। এমনকি শিশুরা বিছানায় শুয়েও ক্লাসে অংশ নিতে পারছে। ছাত্রছাত্রীরা বাড়ির কাজের জন্য বা ব্যক্তিগত পড়াশোনার জন্যে স্কুলের ইলেকট্রনিক রিসোর্স ব্যবহার করতে পারছে। দারুণ মজার এমন শিক্ষা পদ্ধতি থাকলে আর কী লাগে?

আমাদের দেশের স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের সাধারণত এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে হেঁটে যেতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষকদের এখন আগের মতো এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে হেঁটে গিয়ে ক্লাস নিয়ে আসতে হয় না। এসব নিয়ম পুরনো হয়ে গেছে। ওখানে শিক্ষার্থীরাই এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে ঘুরে-ফিরে বিষয়ভিত্তিক পাঠ নিতে শিক্ষকের কক্ষে যায়। প্রাচীন নিয়ম ‘গুরুর কাছে শিষ্যের শিখতে যাওয়া’র মতো এমন নিয়মের কারণ কী? এ ব্যাপারে স্কুলের জনৈক অধ্যক্ষ জানান, ‘সব সিস্টেমেই ভালো মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। তবে শিক্ষকদের কর্মক্ষেত্রে তাদের একটা নিজস্ব জগৎ থাকা দরকার। তাই তাদের আলাদা রুম দেওয়া হয়। তাদের রুমটা এখন একটু বড়সড় করতে হয়েছে। আলাদা থিয়েটার রুমের মতো নিজস্ব রুম তৈরি করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষকরা নিজেরা স্বচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। পাশাপাশি তাদের ক্লাসের জন্য যাবতীয় জিনিস এ হোয়াইট বোর্ডে সজ্জিত করে রেখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। শুধু কি তাই? শিক্ষকরা কোন দিন, কোন ক্লাসে, কী পড়াবেন?
গতানুগতিক নিয়মে সাধারণত ক্লাসে যাওয়ার পূর্বে শিক্ষকরা আগে থেকে এসব পরিকল্পনা করে রাখেন। সিনিয়র শিক্ষকদেরও এ পরিকল্পনা সাজাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। এ কাজে লম্বা সময় ব্যয় হয়ে যায়। অথচ এসবে মিছেমিছি সময় ব্যয় করার টাইম এখন কারও নেই। কারণ? এ হোয়াইট বোর্ড সব অটোমেটিক করে দিচ্ছে। এ বোর্ডে আইডিয়া উপস্থাপন করা খুবই সহজ হচ্ছে। শিক্ষকরা দরকার মতো শিক্ষার্থীদের কাজ, প্রজেক্ট, পোস্টার, হোমওয়ার্ক, রেজাল্ট শিট, খাতা নম্বর সব কিছু আপডেট রাখতে পারছেন।

বর্তমান পৃথিবীতে আধুনিক প্রযুক্তির দুরন্ত অগ্রযাত্রা চলছে। আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে কম্পিউটার অনুপ্রবেশ করেছে বহুবিধ সফটওয়্যারসহ। অথচ আমাদের সামাজিক অবকাঠামোর মূল ভিত্তি স্কুলগুলোতে তা অবহেলিতই রয়ে গেছে। এক্ষত্রে যেসব প্রচেষ্টা সাধিত হয়েছে, তা কেবল কম্পিউটার ল্যাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর তা তরুণ ছাত্রদের সত্যিকার শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা থেকেই পৃথক করে রেখেছে।

বিষয়টা খুব অল্পই অনুভূত হয়েছে, স্কুলে কম্পিউটারের প্রকৃত সুফল পেতে হলে কম্পিউটারকে ল্যাংগুয়েজ ল্যাবের হেডফোন বা টেপরেকর্ডার কিংবা ফিজিক্স ল্যাবের অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টেলিস্কোপের ন্যায় সহকারী যন্ত্র হিসেবে তুলনা করলে হবে না। সুতরাং আগামী দিনের নাগরিকদের জীবনের প্রারম্ভিক মুহূর্তে কম্পিউটারের নির্বুদ্ধিতামূলক ব্যবহারের কারণ কী? এটা কি এক্সপার্টদের অভাবে হচ্ছে? বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে টাকার অভাবে বা শিক্ষকদের অপ্রতুল প্রশিক্ষণের কারণে বা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অমনোযোগিতা এক্ষেত্রে বড় বাধা। সম্ভবত দুটো কারণেই হচ্ছে।

আগামী দিনে আমাদের দেশে বর্তমান ক্ষুদে নাগরিকরা যেন মেধা, মনন যুক্ত করে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কাজে লাগাতে পারে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে এ প্রজন্মের আগামী নাগরিকরা যেন বদলে দিতে পারে একটা সমাজ, সেই প্রত্যাশা ও প্রচেষ্টায় সুন্দর জনবান্ধব আগামী প্রজন্ম তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সদাশয় সরকার। বড়ই আশার কথা! অচিরেই কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাংগুয়েজ ক্লাব তৈরি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক স্কুলে। থাকবে ইংরেজি ভাষাচর্চার সুযোগ। এ লক্ষ্যে সারা দেশের ৫০৯টি উপজেলায় কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাংগুয়েজ ক্লাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিয়োগ করা হচ্ছে ‘কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর’।

পড়ালেখার পাশাপাশি এখন থেকে উন্নত দেশের মতো ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে একদিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইংরেজি ভাষাচর্চার সুযোগ পাবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে কম্পিউটার শেখার সুযোগ মিলবে। প্রাথমিক শিক্ষার বয়সেই নানাবিধ উদ্ভাবিত বিজ্ঞান প্রকল্প তৈরির মধ্য দিয়ে হয়তো ধীরে ধীরে বদলে যাবে অনেকের আগামী ভাগ্য। সচেতনতা বাড়বে। জনদুর্ভোগ দূর হবে। ডিজিটাল কর্মচঞ্চলতায় মুখরিত হবে আগামীর উন্নত বাংলাদেশের চারপাশ।

তবে হ্যাঁ, অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার মতো শিক্ষা প্রযুক্তির ব্যাপারেও কিছু ত্রুটি রয়েছে। স্কুলে সফটওয়্যারের এমন ব্যবহারের মাধ্যমে সুযোগপ্রাপ্ত ও বঞ্চিত দুটো ধারার সৃষ্টি হবে। যাদের মধ্যে থাকবে ব্যাপক তথ্য গ্যাপ। একদিকে থাকবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ স্কুল। অন্যদিকে থাকবে দূর শহরের বঞ্চিত স্কুলগুলো। এসব ত্রুটি সম্বন্ধে সচেতন শিক্ষা প্রযুক্তিবিদরা আগামী দিনের ক্লাসরুম নিয়ে আরও ব্যাপক স্বপ্ন দেখেন। এদেরই একজন এমআইটির মিডিয়া ল্যাবের শিক্ষা গবেষণার ফেলো, প্রফেসর এস প্যাপার্ট এমন দিনের স্বপ্ন দেখেন, যখন শিশু বা অন্যরা জ্ঞান মেশিন ব্যবহার করতে পারবে।

এ মেশিন ব্যবহারকারীদের তাদের পছন্দমাফিক বিষয় নাড়াচাড়া করার সুযোগ দেবে আর এখানে শিশুদের স্কুল পাঠাগারের সীমিত পরিসরের কোনো বাধা থাকবে না। তিনি মনে করেন, সিডি রম প্রোগ্রাম বা ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিডিও হলো এ জ্ঞান মেশিনের প্রাথমিক ধাপ। মূল বিষয়টা হলো ইন্টারঅ্যাকটিভিটি। ব্যবহারকারীরা একটা অদ্বিতীয় উপায়ে তথ্য নাড়াচাড়া করতে পারে। কোনো শব্দ বা শব্দ সমষ্টি মাউসের সাহায্যে ক্লিক করে। এমন ধরনের ভিডিও অডিও, স্পর্শ বা গন্ধও শিক্ষা প্রক্রিয়ার বিপ্লব ঘটাবে। কেননা তখন শুধু পড়াশোনাই কেবল তথ্য আহরণের একমাত্র উপায় হবে না।

এসব স্বপ্নের মাঝে শিক্ষকদের মনে একটা প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, তারা কি বেকার হয়ে পড়বেন? এর পরিষ্কার উত্তর নেই। কম্পিউটারেও শিক্ষকের প্রয়োজন। সুতরাং এমন দিন দূরে নয়, যখন স্কুলে কম্পিউটার হবে ছাত্রদের জন্য তথ্য আহরণের গেটওয়ে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের প্রত্যক্ষদর্শী আর প্রাইভেট পড়ানোর মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিশ্রমকারী শিক্ষকদের প্রিয় বন্ধু।

শেখ আনোয়ার : বিজ্ঞান লেখক
[email protected]

 
Electronic Paper