ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পরিবেশের হুমকি ই-বর্জ্য

আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা
🕐 ৯:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২০

প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির আশীর্বাদে আমাদের জীবন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। তথ্য আদান-প্রদান আর বিনোদনের এক অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল পণ্য। দৈনিন্দন জীবনে এসব পণ্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। চাইলেও আমরা এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারব না। খাবার প্রস্তুত করা, কাপড় ধোয়া, খাবার সংরক্ষণ করা, বিভিন্ন দ্রব্য পরিষ্কার করা, ব্যায়াম করাÑ এমন কাজগুলো খুব সহজে আর দ্রুত করার জন্য মানুষ ব্যবহার করছে নতুন নতুন ইলেকট্রিকাল পণ্য। তাই বোঝাই যাচ্ছে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে কীভাবে বাড়ছে এ ইলেকট্রিকাল পণ্যের ব্যবহার।

ইলেকট্রিক্যাল পণ্যগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে তাকে আমরা বলি ই-বর্জ্য। আমাদের দেশের প্রতিটি পরিবারেই কিছু না কিছু ই-বর্জ্য তৈরি হয়। পুরনো টেলিভিশন, ফ্রিজ, রেডিও, রাইস কুকার, মোবাইল, কম্পিউটার, কি বোর্ড, রিমোট, সিডি এগুলো সবই ই-বর্জ্যরে অন্তর্ভুক্ত। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এ বর্জ্যগুলো কী করি, কোথায় ফেলি কিংবা পরিবেশের ওপর এরা কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে কিনা? 

শহরের বেশিরভাগ ডাস্টবিনেই পুরনো ভাঙা মোবাইল, কি বোর্ড, বিভিন্ন ধরনের তার, রিমোট ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখা যায়। ইউএসডিও-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের ৭৭ শতাংশ মানুষই ই-বর্জ্য শহরের ডাস্টবিনে ফেলে। যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এ বর্জ্যে থাকে সিসা, মার্কারি, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, বেরেলিয়ামসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান যা গৃহস্থালি বর্জ্যে থাকে না। তাই এগুলোর পচন বা অন্য কোনো উপায় বিনাশও ঘটে না।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের দেওয়া তথ্যানুসারে দেশে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১০.১০ মিলিয়ন টন মতো ই-বর্জ্য তৈরি হয়েছে। আর প্রতিদিন তৈরি হয় প্রায় ৫০০ টন। তাই চলতি বছরে এর পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ইলেকট্রিকাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, আমাদের দেশে প্রতি বছর ৩২ কোটি টন ইলেকট্রনিক পণ্য ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি দেশে প্রতি বছর ৫০ হাজারের মতো কম্পিউটার আমদানি করা হয়। ফলে এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে এ কয়েক কোটি টন পণ্য থেকে কী পরিমাণ ই-বর্জ্য তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং করা ছাড়া এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলোতে ইলেকট্রিক্যাল সামগ্রীর পুনরুৎপাদন আর পুনর্ব্যবহার করা হলেও এ সংক্রান্ত কোনো উন্নত ব্যবস্থা নেই।

পরিবেশের যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ই-বর্জ্য। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত যেখানে সেখানে এগুলো না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা এবং অপরকে এ ব্যপারে সচেতন করা। পাশাপাশি সরকারও কঠোর কিছু নিয়ম নীতি প্রণয়ন করে ই-বর্জ্যরে সঠিক পুনরুৎপাদন ও পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করবে বলে আমরা আশাবাদী। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিতে উন্নত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। এককথায় একমাত্র সবার মিলিত প্রচেষ্টাই পারে ই-বর্জ্যমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে।

আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা : শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 
Electronic Paper