ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পাঠকের মতামত

তরুণরাই দেশের মূল চাবিকাঠি

উম্মে কুলসুমা রিপা
🕐 ৮:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

তরুণরা হচ্ছে যে কোনও জাতির প্রধান স্তম্ভ, জাতির স্নায়ু ও আত্মা। তারা যে কোনও সুপ্ত জাতির জাগরণের প্রতিভূ। সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্নয়নের কারিগর। তারা সকল ক্ষেত্রে নিত্য নতুন রীতি ও ধারা সূচনা করে। তারুণ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম তার সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০০ শিক্ষার্থীর সামনে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, তোমাদের স্বপ্নগুলো হবে বাংলাদেশের স্বপ্ন, ভাবনাগুলো হবে বাংলাদেশের ভাবনা এবং তোমাদের কাজগুলো হবে বাংলাদেশের কাজ। দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে এ দেশের তরুণরাই সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। অতীতের অর্জনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আমাদের জাতিগত যতটুকু অর্জন তার মূলে রয়েছে তারুণ্যের অদম্য ও ঐক্যবদ্ধ শক্তি।

বাংলাদেশে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ তরুণ। সর্বশেষ জাতিসংঘের জনসংখ্যা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বর্তমান জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ তরুণ। তথ্য মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ তরুণদের সংখ্যা ১০ থেকে ১৯ শতাংশে আসবে। তাই আজকের এ বিশাল কর্মক্ষম ও উদ্যমী তরুণ প্রজন্মের সামনে বিরাট সম্ভাবনা ও সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্ভাবনাময় তরুণ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার এখনই উপযুক্ত সময়। দেশের উন্নয়নের অভিযাত্রায় এরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের এ জয়যাত্রার যুগে ইন্টারনেটে যে অবাধ তথ্য প্রবাহের সুবর্ণদ্বার উন্মোচিত হচ্ছে, এর পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করছে এবং করবে বর্তমান তরুণ সমাজ। তারা তাদের জ্ঞানকে শাণিত করে মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তির স্ফুরণ ঘটিয়ে নতুন নতুন আবিষ্কারের দ্বারা দেশ ও মানবতার কল্যাণ সাধন করবে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণের সুযোগকে অবারিত করতে হবে। যাতে তারা যে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করতে পারে।

বর্তমান সময়ে তরুণদের মধ্যে প্রচারবিমুখতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক তরুণের প্রতিভা ও মেধাশক্তি থাকলেও তা প্রকাশের ক্ষেত্রে এক ধরনের আত্মকেন্দ্রিকতা তৈরি হয়েছে। তবে ঢালাওভাবে বিষয়টি সত্য নয়। তারপরও, নিজেকে প্রকাশে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ থাকলেও তরুণরা নিজেকে প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত হচ্ছে না- কারণ, তাদের সামাজিক, বৈজ্ঞানিক, মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও গবেষণা দরকার। যেমন- সাম্প্রতিককালের একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে তা হলো যন্ত্রমানব সোফিয়াকে আনার মাধ্যমে একটা ইতিবাচক ঘটনা ঘটে গেছে, তা হয়ত অনেকের অগোচরে থেকে গেছে। কিন্তু সেটার প্রচার দরকার আছে। সোফিয়াকে আনার পর আমরা জানতে পেরেছি আমাদের মেধাবী তরুণরা ডিজিটাল বাংলাদেশ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে অনেক আগেই এ ধরনের রোবট তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। যেসব তরুণরা রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে তাদের আমরা সেভাবে সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিতে পারছি কি না সেটাও ভেবে দেখার দরকার। কারণ একটা কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, আমাদের দেশে গুণীদের কদর নেই, কথাটা সত্য না মিথ্যে তা মূল বিষয় নয়। এখানে প্রধান বিষয় হচ্ছে যে দেশে গুণীদের কদর হয় না সে দেশে গুণীরা জন্ম নেয় না। এই ধারণা যাতে তরুণদের মধ্যে তৈরি না হয় সে ব্যাপারে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে।

আমাদের দেশের তরুণরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তেমনি এর মাধ্যমে দেশমাতৃকার সেবা করে চলেছে। বিষয়টি আগ্রহ সৃষ্টি করেছে এমন একটি সময়ে যখন বিশ্বে অনলাইনে শ্রমদাতা (আউটসোর্সিং) দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণা ও পাঠদান বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (ওআইআই) এর একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারত অন্যসব দেশের চেয়ে এগিয়ে প্রথম স্থানে, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র। অনলাইনে শ্রমদান বা অনলাইনে কাজের ক্ষেত্রে ভারত ২৪ শতাংশ অধিকার করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৬ ও যুক্তরাষ্ট্র ১২ শতাংশ অধিকার করেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মান, রাশিয়া, ইতালি ও স্পেন বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান করছে। এটি তরুণদের অর্জন আর আমাদের গর্বের বিষয়। তরুণরাই বাংলাদেশের শক্তি। তরুণই জাতির মেরুদণ্ড। এ মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কাজে অভিভাবক-সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক পরিচর্যা পেলে একদিন তরুণরাই তাদের মহৎ স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে।

উম্মে কুলসুমা রিপা, শিক্ষার্থী, মহিপাল সরকারি কলেজ, ফেনী

 
Electronic Paper