নবীনদের স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায়
সাইফুল ইসলাম হাফিজ
🕐 ৯:১০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২০
দেশের সেরা সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলা ভর্তি যুদ্ধ শেষ হয়েছে। প্রায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়ে ক্লাসও শুরু হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত হওয়া ভর্তি যুদ্ধে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা যোদ্ধা রূপে অবতীর্ণ হয়ে নিজের মেধা আর যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছে এই শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দু’চোখ ভরা স্বপ্ন আর বুকভরা আশা নিয়ে পদচারণা শুরু করেছে স্বপ্নের রঙিন ক্যাম্পাসে।
স্বপ্নের ক্যম্পাসে স্থান পেয়ে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস নবীনদের হৃদয়ে। নতুনের আগমনে ক্যাম্পাস মুখরিত। ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থানে মেধা আর প্রতিভার সঞ্চার ঘটাতে চঞ্চল নবীনদের হৃদয়। একই সময় তাদের স্বপ্ন আর আশা হতাশায়ও রূপ নেয়। অনেক নবীন তাদের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতেও হিমশিম খেয়ে যায়। কেউ কেউ নিজেকে বদলে ফেলে পিছনের জীবন থেকে; ক্যাম্পাসে আসলে ওঠা বসা শুরু হয় বড় ভাই-আপুদের সঙ্গে।
যেহেতু অচেনা অঙ্গনে নতুন করে পথচলা শুরু হয় তাই এখানের নিয়ম-কানুন না জানাটা স্বাভাবিক। বড় ভাই-আপুরা এই স্বপ্নীল ক্যাম্পসের অভিভাবকও বটে। তারা নবীনদেরকে নানান নিয়ম-কানুন, ভদ্রতা শিখিয়ে থাকেন। আশা হতাশায় রূপ নেওয়া আর স্বপ্ন ভাঙ্গার উপক্রম এখানেই। কেউ ভদ্র শেখাতে গিয়ে খুব রূঢ় আচরণ করে ফেলেন, খুব উত্তেজিত হয়ে কখনও স্ল্যাং ওয়ার্ডস ব্যবহার করেন। বিভিন্ন রকমের শারীরিক অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করাতে বাধ্য করেন।
আবার কেউ নিছক মজা নেওয়ার জন্য বা অন্য কোন কারণে নবীনদেরকে র্যাগ দিয়ে থাকেন। এটি একজন শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করে তোলে। র্যাগিং উচ্চশিক্ষা অর্জনে একটি সমস্যা। এই র্যাগিং নামক সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে অনেক লেখালেখি, আন্দোলন, মানববন্ধন, মিছিল ইত্যাদি হয়েছে। এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
ফলে এর ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে শিক্ষাঙ্গনগুলো মুক্ত হতে শুরু করেছে। কিন্তু এটি এখনও পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। শিক্ষার্থীরা সচেতন থাকলে এবং প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলে পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব। ভদ্রতা শেখানোর নামে গেস্ট রুমে নিয়ে কিংবা গণরুমে বৃত্তাকারে বসিয়ে রেখে দীর্ঘসময় ধরে দেওয়া হয় নানান আদেশ-উপদেশের ফুলঝুরি। কারও কাছ থেকে নেওয়া হয় দিনচলার কৈফিয়ত। ওঠতে বসতে সিনিয়রদের সালাম দিতে হয়। কখনও সালাম না দিলে সেই কৈফিয়ত থেকে রেহাই পাওয়ার অবকাশ নাই।
যাকে একধরনের মেন্টাল ট্রমা (মানসিক আঘাত) বলা চলে। যাতে দেখা যায় নবীনরা তাদের সম্মুখে ইতিবাচক সাড়া প্রদান করলেও খুবই বিরক্তিকর মনোভাব ফুটে ওঠে তাদের পরবর্তী আচরণে। হ্যাঁ, জুনিয়রদের দিকনির্দেশনা দেওয়া, নতুন জায়গা সম্পর্কে ভালো-মন্দ বোঝানোর দায়িত্ব সিনিয়রদের ওপরেই বর্তায়। কিন্তু এটা যদি ইতিবাচকতার বিপরীত হয় তবে নবীনদের খুশির মাঝে বিষন্নতা বাসা বাঁধবে। একজন উচ্চ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দেশের মানুষ সর্বোত্তম ব্যবহার আশা করে।
নবীনরাও বড়দের কাছ থেকে ভালো আচরণ আশা করে। কখনই নিষ্ঠুর কিংবা রূঢ় আচরণ কামনা করে না। নবীনদের চলার পথে বাঁধা হয়ে না দাঁড়িয়ে সিনিয়ররা হবে নবীনদের গাইড আর দুঃসময়ের আশ্রয়স্থল। তাদের স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায় সেই দিকে সিনিয়রদের খেয়াল থাকবে অবিরাম।
তাদের স্বপ্নকে আরও নিপুণভাবে সাজিয়ে দিবে সিনিয়র ভাই-আপুরা। নবীন হৃদয়গুলো ঠিক এমনটাই আশা করে। আর নবীনদেরও নতুন ক্যাম্পাসে এসে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে। সিনিয়রদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। ইন্টারমিডিয়েটে কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’ প্রবন্ধ পড়ে এসে মনে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজেকে নিজের কর্ণধার মনে করে চললে পরিবেশের দৃষ্টিকটু হবেই।
নিজের মেধা আর যোগ্যতায় যেমন চান্স পেয়ে এসেছেন তেমনই নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলে নিজের মেধার পরিচয় দিতে হবে। সিনিয়ররা নবীনদের সুন্দর পথের দিকনির্দেশনা দিয়ে, মন ভোলানো আচরণ উপহার দিয়ে তাদেরকে জড়িয়ে নিবে মায়া-মমতার চাদরে। তাদের মন জয় করতে হবে মিষ্টভাষা আর সর্বোত্তম ব্যবহার দিয়ে। যাতে করে নবীনরা তাদের মনে রাখে শুধু ক্যাম্পাসের বড় ভাই-আপু হিসেবেই নয় জীবনের একজন অভিভাবক হিসেবেও।
সাইফুল ইসলাম হাফিজ : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]