ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ধর্ষণের প্রতিকার কী

ইকবাল হাসান
🕐 ৯:২১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২০

ধর্ষক এ নাট্যমঞ্চের জঘন্যতম চরিত্র। প্রতিটা মানুষের কাছে ঘৃণিত একজন ধর্ষক। একজনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সঙ্গে শারীরিক সঙ্গম করা নিকৃষ্টতম কাজ। প্রতিবছর, প্রতিদিন ধর্ষণের নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এই রেকর্ড দেশের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনছে তা বলা দুরূহ।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিলো ৭৩২ জন। অর্থাৎ, আগের বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইনের কঠোর থেকে কঠোর আইন হচ্ছে কিন্তু ধর্ষণ থেমে নেই। ধর্ষণের ঘটনায় ১৬ বছরে সরকারের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ৪ হাজার ৫৪১টি মামলা করেছে। এর মধ্যে ৬০টি ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি হয়েছে। ঘটনার শিকার অধিকাংশ নারী বিচার পাচ্ছেন না।

সরকার ২০০১ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায় ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) চালু করে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই সেন্টারগুলো থেকে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুদের পক্ষে ৪ হাজার ৫৪১টি মামলা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ২২৯টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।

নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে ৬০টিতে দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পেয়েছে। অন্যদিকে ৩ হাজার ৩১২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। নিষ্পত্তি না হওয়া মামলা ৭৩ শতাংশ। এত এত ধর্ষণের অভিযোগ কিন্তু বিচার পাওয়া লোকের সংখ্যা খুবই সামান্য। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আইন থাকলেও আইনের বিচার উধাও হয়ে যাওয়া।

এছাড়াও, ধর্ষক তৈরিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে সমাজের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা। এ অবস্থায় অসুস্থ চিন্তাধারার মানুষ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের মধ্যে থাকতে থাকতে যেরকমভাবে মানুষ অসুস্থ হয়ে পরে ঠিক তেমনি ধর্ষকও এভাবেই সৃষ্টি হয়।

আমাদের মস্তিষ্ক ভর্তি অসৎ চিন্তা। খারাপ চিন্তা নিয়ে সমাজের বুকে বুক ফুলিয়ে হেঁটে যাই আপন মনে। যখন নতুন একটা ধর্ষণের খবর আসে, কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাতামাতি হয়। তারপর ফুলে ওঠা রুটির মতো চুপসে যায়। সবাই ধর্ষকের বিচার চায়, তাহলে ধর্ষণটা করে কে?
একজন নারী শালীন পোশাক পরার পরও ধর্ষিতা হতে পারে। কারণ যে ধর্ষণ করবে সে অসুস্থ। সে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত, টেলিভিশনে নগ্নতা দেখে অভ্যস্ত। এখন শালীন কাপড় পরা নারী দেখলেও তার চিন্তায় দাঁড় করাবে একজন নগ্ন নারীকেই। ঠিক এ কারণেই বোরকা পরিধান করা নারী ধর্ষণের শিকার হয় আবার বাচ্চা মেয়েটাও ধর্ষণের শিকার হয়।

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। প্রত্যেকের ধর্মে বলা হয়েছে নারীকে সম্মানের কথা। গণতন্ত্রের চর্চার পাশাপাশি আমাদের ধর্মেরও চর্চা করা উচিত। আমরা কিছু হলেই এ সমাজের ওপর দোষ চাপিয়ে দিই। কিন্তু মনে রাখা উচিত, সমাজ অর্থাৎ এই পদ্ধতি আমাদের সমষ্টিগত রূপ।

যদি সমাজে ধর্ষণ বৃদ্ধি পেতেই থাকে তাহলে বুঝতে হবে সমাজের একটা বিরাট অংশ নীতি ও নৈতিকতাহীন। নীতি নৈতিকতার ব্যাপারে প্রত্যেক ধর্মেই বলা হয়েছে। আমরা আমাদের সমাজের অংশ হিসেবে গণ্য করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে নিজের কাজটুকু করলে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়া যাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।

সমাজে নগ্নতা, অশ্লীলতা এ সকল কিছু ছড়ায় মূলত বাইরের সংস্কৃতির মাধ্যমে। অচিরেই যদি বাইরের এরকম সংস্কৃতি যা আমাদের সঙ্গে যায় না তা নিষিদ্ধ করা যায় তাহলে বিকৃত মস্তিষ্কসম্পন্ন মানুষ উৎপন্ন হওয়া থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। ধর্ষণকে প্রতিরোধ করতে বাইরের দেশের সংস্কৃতি আগে প্রতিরোধ করতে হবে, পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে, স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধ থাকা বুঝতে হবে এছাড়াও অন্যের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

ধর্ষণ প্রতিরোধে পারিবারিক শিক্ষাও একটি বড় বিষয়। পারিবারিক শিক্ষাই বড় শিক্ষা। প্রত্যেকটি পরিবার থেকে নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার প্রথা উঠে যাচ্ছে। তাই ধর্ষণের মতো অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে।

ধর্ষণ একটা মেয়ের জীবনে জঘন্যতম অধ্যায়। এ অধ্যায়ের জন্য তাকে তৈরি করে সমাজ, রাষ্ট্র।

সমাজ তার দায়িত্ব পালন করে না, সে চেয়ে থাকে রাষ্ট্রের দিকে আবার রাষ্ট্র চেয়ে থাকে সমাজের দিকে। এরকম নিজেদের দায়িত্ব অবহেলার ফলে ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করে। যদি প্রশ্ন করা হয়, ধর্ষণের প্রতিকার কী?

তাহলে সমাজ দুই দলে ভাগ হয়ে যাবে। একদল পর্দা বা শালীন পোশাকের পক্ষে আবার অন্যদল নজরের হেফাজতের কথা বলবে। এভাবে একে অপরের প্রতি দোষারোপ করতে থাকলে কোনো ফলই আসবে না। সমাজের বাসিন্দা হিসেবে শুধু ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করলেই হবে না, নিজের জায়গা থেকে তার কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে পালন করা জরুরি।

ইকবাল হাসান : শিক্ষার্থী
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 
Electronic Paper