পাঠকের মতামত
শিক্ষা-ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম
ফারহানা ইয়াসমিন
🕐 ৮:২১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণত স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বার্ষিক ভ্রমণ বা পিকনিকের আয়োজন করে। লক্ষ্য থাকে ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল জ্ঞান লাভ। ছাত্রজীবন শ্রেষ্ঠ সময়। ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের সামগ্রিক উন্নতি নির্ভর করে ছাত্রদের ওপর। আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের সমাজকর্মী ও দেশনেতা। ভবিষ্যতে তারাই দেশ পরিচালনা করবে।
অবশ্য মানবজীবনের পুরোটাই ছাত্রজীবন। কেননা পাঠ্য বই ছাড়াও মানুষ মানুষের কাছ থেকে, প্রকৃতির কাছ থেকেও প্রাণিজগতের কিছু না কিছু শিক্ষা লাভ করে থাকে সারা জীবন।
ছাত্রজীবন শিক্ষালাভের সময়। তবে এ শিক্ষা লাভ শুধু পাঠ্যপুস্তকের নয়। পুঁথিগত বিদ্যাই সবকিছু নয়। কবির ভাষায় বলা হয়েছে- গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন/ নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।
এ জন্য ছাত্রজীবনে শিক্ষামূলক ভ্রমণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের ধরাবাঁধা একঘেয়ে জীবনকে নতুনমাত্রা দান করে। শিক্ষামূলক ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান অথবা কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান অবলোকনের সুযোগ পাই। এসব স্থান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্ব জানতে পারি। এ ভ্রমণ জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে।
শিক্ষাসফরকে সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীরা পিকনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা কোনো পার্ক, কোনো ঐতিহাসিক স্থান বা কোনো পিকনিক স্পট নির্ধারণ করে থাকে। নির্ধারিত গণ্ডির বাইরে গিয়ে আমরা যদি তাদের পরবর্তী উচ্চশিক্ষার সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়ে যেতে পারি তাহলে হয়তো এটা তাদের উৎসাহিত করবে। অনুপ্রেরণা জোগাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া ও পড়ার ক্ষেত্রে।
বিগত তিন বছর ধরে কয়েকজন ভর্তি পরীক্ষার্থী আমার বিশ্ববদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় আমার কাছে ছিল। দুর্ভাগ্যবশত এ তিন বছরের মধ্যে আমার কাছে ছিল এমন কোনো পরীক্ষার্থী সুযোগ পায়নি। তাদের দেখে মনে হলো, এদের যদি আগে থেকে উৎসাহিত করা যেত তাহলে আরও ভালো কিছু হতো তাদের জন্য। এ জন্যই মনে হলো, কাউকে কোনো জিনিসের পাওয়ানোর দরকার হলে আগে তাকে সেই জিনিস দেখাতে হবে এবং জিনিসটির প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।
একইভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য আগে তাদের দেখানো উচিত, বিশ্ববিদ্যালয় কী, এটা দেখতে কেমন? এখানে কারা পড়ে? কেন পড়ে? এসব বিষয় বোঝাতে হবে ও বোঝানো উচিত। ভর্তি পরীক্ষার সময় সাধারণত এ বিষয়গুলো তারা অটোমেটিক্যালি জানতে পারে। তবে আগে থেকে দেখানোর ব্যবস্থা করলে আশা করি তারা আরও বেশি আগ্রহী হবে। এগুলো দেখে তারা যা জানতে পারবে সেগুলো বইয়ের পাতায় কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা প্র্যাকটিকাল জ্ঞানের স্থায়িত্ব বেশি।
সাধারণত অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের দূরে পিকনিকে পাঠাতে চান না। সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা জেলাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়ে যেতে পারেন। এখন বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যেটা আসলে সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে অর্থাৎ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার উদ্যোগে।
এখন যাতায়াত ব্যবস্থাও অনেক সহজ হয়েছে। উন্নত হয়েছে রাস্তা-ঘাট। ফলে খুব সহজে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া যায়।
সর্বোপরি বলতে চাই, বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখার বিষয়ে উদাসীন। তারা পড়াশোনার থেকে বিনোদন বেশি পছন্দ করে। সে জন্যই শিক্ষকদেরও কৌশলী হতে হবে। কীভাবে তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ ও জাতির উন্নয়ন করা যায় তার ব্যবস্থা করা।
ফারহানা ইয়াসমিন : শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়