ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মুজিববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা

জুবায়ের আহমেদ
🕐 ৮:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২০

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতী ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ তার শততম জন্মদিন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনকের শততম জন্মবার্ষিকীকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। নানা আয়োজনে এই মহামানবের শততম জন্ম সালটিকে স্মরণীয় করে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পেছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অসামান্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। বাংলাদেশে রাজনীতির দ্বন্দ্ব থাকলেও সবসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রাপ্য সম্মান জানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তনয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যখনই সরকার গঠন করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তখনই জন্মদাতা পিতার চেয়েও বেশি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির জনকের প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব অঙ্গসংগঠন ও সমর্থকদের উদ্বুদ্ধ করছেন জাতির জনকের মতোই দেশের জন্য কাজ করার বিষয়ে।

২০০৮ সাল থেকে বর্তমান অবধি টানা ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকরা অনেকেই জানেন না যে, শেখ মুজিবুর রহমান বাস্তবিক পক্ষে দেশের জন্য, দশের জন্য সারাজীবন কতখানি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, পরিশ্রম ও সংগ্রাম করে গেছেন। বিগত এক দশকে মুজিব আদর্শ লালন করে জীবনযাপন করছেন এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন, এমন নেতাকর্মী কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খুব বেশি দেখা যায়নি বাংলাদেশে। যদি দেখা যেত তাহলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত অঙ্গসংগঠনগুলোর বিভিন্ন গর্হিত কর্মকাণ্ড প্রকাশ পেত না। মুজিব আদর্শের খই ফোটানো ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের কর্মকাণ্ডে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ এবং তিনি বিভিন্নভাবে পদক্ষেপও নিয়েছেন সেসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুকাল থেকেই ছিলেন জনদরদী। তিনি দরিদ্র ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য নিজ পরিবারসহ পাড়া প্রতিবেশী থেকে চাল সংগ্রহ করে অনেক ছাত্রের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। ছাত্র জীবন থেকে দেশ স্বাধীন পর্যন্ত অনেকবার কারাবরণ করা শেখ মুজিব নিজ আদর্শ এবং দেশের মানুষের কল্যাণের কাজ থেকে সরে যাননি। তিনি এই বাংলার মানুষের জন্য লড়াই করেছেন, অধিকাংশ সময় অভাব অনটনে জীবন যাপন করেছেন। পাকিস্তানিরা মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করলেও তিনি সুকৌশলে এগিয়েছেন কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার দিকে।

ভারত, আমেরিকা, কানাডাসহ বহু দেশ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর আক্রমণ হতে পারে, সে বার্তা দিলেও বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করেছিলেন তার অফিসারদের, তিনি বলেছিলেন সবাই তার সন্তান, তারা এমন কাজ করতেই পারে না। তিনি আরও বলেছিলেন প্রাণের ভয়ে তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেবেন না। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর কথা জেনেও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নামে রাজনীতি করা ব্যক্তিরা এখন নিরাপত্তা বলয়ে নিজেদের ঢেকে রাখে, রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যাতে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো জীবনকাল ছিল দেশ ও দেশের কল্যাণের জন্য নিবেদিত। যেখানে ছিল না বিলাসিতা, ছিল না অর্থের লোভ, ছিল না হিংসা-বিদ্বেষ, ছিল দেশের জন্য ও সাধারণ মানুষদের ভালোবাসা ও ভালো রাখার প্রচেষ্টায় ভরা বিশাল হৃদয়। তাই মুজিববর্ষে প্রত্যাশা শুধু মুখেই নয়, মুজিব আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হোক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকালের নানা জনকল্যাণমুখী কাজের মতো কর্ম দিয়ে। প্রত্যাশা থাকবে যে, জাতির জনকের আদর্শের রাজনীতির বাহক হবে তার দল আওয়ামী লীগ ও সব অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং দেশের তরুণরা। যারা দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর মতোই নিঃস্বার্থে কাজ করবে, অহংকারমুক্ত থাকবে, ভেদাভেদ না করে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়বে।

জুবায়ের আহমেদ : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)
[email protected]

 
Electronic Paper