ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশেষ কলাম

মজুদদারের বিরুদ্ধে সজাগ হই

শাহীন চৌধুরী ডলি
🕐 ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯

গুজব অত্যন্ত দ্রুত ছড়ায় আর মূল্যবৃদ্ধির গুজব কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দেশবিরোধী খাদ্য মজুদদারদের কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সাধারণ মানুষ। বাজারজুড়ে খাদ্য সংকট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ আস্থাহীনতা। যেমন সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া পেঁয়াজকাণ্ডে যা হলো, তারপর লবণের গুজবে আস্থা রেখে মানুষ চুপচাপ বসে থাকতে পারেনি। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়!

ক্রেতার ভয়কেও অমূলক বলা যায় না। আমেরিকার মনোবিজ্ঞানী রবার্ট এইচ ন্যাপ গুজব সম্পর্কে গবেষণা করে ‘অ্যা সাইকোলজি অব হিউমার’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘গুজব মানুষের ভাবাবেগকে ব্যবহার করে। সমাজের ভাবাবেগকে প্রকাশ ও তুষ্ট করার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে গুজবের’। সুযোগকে অসৎভাবে কাজে লাগানোর জন্য অসাধু চক্র বা সিন্ডিকেট ওঁত পেতে থাকে। এ অসাধুরা জনগণের পকেট কেটে কম সময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠে। গত দুই মাসে পেঁয়াজের দাম দফায় দফায় বেড়ে আড়াইশ’ টাকায় পৌঁছেছে।

একশ্রেণির ব্যবসায়ী পেঁয়াজের মজুদ থাকা সত্ত্বেও বাজারে সরবরাহ বন্ধ রেখে মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্ত করেছে। এটা বোঝা গেছে যখন চট্টগ্রামে আড়তের কাছাকাছি খালে-নদীতে পচা পেঁয়াজের বস্তা ফেলে দেওয়া হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর সংকটের অজুহাতে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ছোটখাটো ছুতোয় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী প্রায়ই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রথম থেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করে আসছে।

পৃথিবীজুড়ে ‘বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’ বলতে একটা ব্যবস্থা চালু আছে। এটা কাজে লাগিয়ে দেশের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা ঠিকই খবর রাখেন কোথায় কোন ফসল মার খেয়েছে, কোথায় দাম বেড়েছে বা কোথায় দাম কমেছে। মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য মজুদ করে। এর ফলে পণ্যের মূল্য বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

খাদ্যসামগ্রী মজুদে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় নয়। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধীদের শাস্তি এবং জরিমানার বিধান আছে, যা কঠিনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্ম ও মানবিকতা কোনো দিক দিয়েই মজুদদাররা সমর্থনযোগ্য নয়। তাই এ ধরনের হীন কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তৎপরতা এবং জনসাধারণের সচেতনতাই পারে মুনাফাখোর ও মজুদদারদের অপতৎপরতা রোধ করে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে। মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে তাদের অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করা উচিত।

শাহীন চৌধুরী ডলি : কলামিস্ট
[email protected]

 

 
Electronic Paper