ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জীবনযুদ্ধ জয়ের স্বপ্নে উজ্জীবিত হোন

ফারহানা নওশীন তিতলী
🕐 ৮:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯

ব্যস্ত পৃথিবীতে যার যার মতো ব্যস্ত আমরা সবাই। কেউ ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, কেউ ক্লাসে প্রথম হওয়ার জন্য, কেউ একবেলা একমুঠো ভাতের জন্য। দিন এভাবেই পার হয়ে যাচ্ছে আপন গতিতে। নিত্যদিনের একটি চাহিদা পূরণ হলে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি চাহিদা ঘারে চেপে বসছে। কেউ দিন পার করছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিন্তায়।

এমনও মানুষ আছে যারা জীবনকে তুচ্ছ ভেবে জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো অন্ধকারে কাটিয়ে দিচ্ছে। হ্যাঁ, আমি তাদের কথা বলছি যারা সুন্দর পৃথিবী, ভালোবাসার পরিবার, পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে এক ধাপও পিছপা হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম একটি আতঙ্কের নাম আত্মহনন। বর্তমানে দুই ধরনের বয়সের মানুষকে বেশি আত্মহনন করতে দেখা যায়। প্রথমত, কিশোর-কিশোরী; দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। কিশোর-কিশোরীদের বেশির ভাগের আত্মহননের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, সাধারণত ঝোঁকগ্রস্ত হয়ে বা সমান্য কোনো অপ্রাপ্তির কারণে তারা এই ভয়ঙ্কর পন্থাটি অবলম্বন করে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এরমধ্যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিনজন আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ১৩ জন।

এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সবুজ মিত্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাসেল হোসাইন ও রবিউল আলম। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জারমিন আক্তার জুঁই, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বকুল দাশ ও তাইফুর রহমান প্রতীক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড বয় ফিরোজ কবির ও প্রিয়াঙ্কা সাহা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সঞ্জু দেব। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুভ্র জ্যোতি টিকাদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমান। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রায়হান উদ্দিন সজিব।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ছাত্র হংস প্রসাদ হিমু, তাসকিয়া নুহাশ ও সাকিব ভুঁইয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী মনিজা আক্তার মিতু ও ইডেন কলেজের সায়মা কালাম মেঘা।

২০১৮ সালে পাঁচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৯ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আত্মঘাতী হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী আত্মহনন করে।

প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় আট লাখ লোক আত্মঘাতী হয়। বলা যায় প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ আত্মহনন। ৭৯ শতাংশ আত্মহননের ঘটনা ঘটে আমাদের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রাপ্ত বয়স্ক বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে আত্মহনন করে নিঃসঙ্গতা ও হতাশার কারণে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃতপক্ষে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে নিজের জায়গা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। আর একজন সন্তান যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন বাবা মা ভেবেই নেন যে, তার ছেলে অথবা মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক। নিজেদের জীবন নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো যথেষ্ট সুবিবেচক তারা নিজেই। এ ভরসার জায়গা থেকে এজন্য এ সময় বাবা-মা হয়তো ছোটবেলার মতো সব খোঁজখবর রাখেন না।

মাঝ বয়সে যখন মা-বাবা আপনার ওপর একটু ভরসা করতে শুরু করেছে, তখন নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আত্মহনন করা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ? নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতো এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মা-বাবার স্বপ্নগুলোর কথা একটু ভাবা উচিত নয় কী? একজন মা দশ মাস দশ দিন গর্ভধারণের পর সন্তান জন্ম দেন। গর্ভধারণের এই দীর্ঘ সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে অতিশয় কষ্টে। আর প্রসব যন্ত্রণার কষ্টের কথা না হয় নাই বললাম। একজন সন্তানের জন্য মা-বাবার ত্যাগ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। সন্তান জন্ম হওয়ার পর সে সন্তানকে গড়ে তোলার জন্য বাবা মায়ের এ লড়াই চলতেই থাকে।

যাদের বাবা মা আছে তারা একটু গভীরভাবে ভাবলে বুঝতে পারবেন বাবা মায়ের প্রতিটি সকাল শুরু হয় কাকে কেন্দ্র করে। আমার বাবা মার কথা ভাবলে তো আমি নিশ্চিত বলতে পারি, আমার বাবা মার প্রতিটা সকাল শুরু হয় আমাকে কেন্দ্র করে না হয় আমার অন্য ভাইবোনকে কেন্দ্র করে। বাবা মার সারা দিনের পরিশ্রম শুধু তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎকে কেন্দ্র করে। কারণ, তারা চায় সন্তানের যেন কোনো কষ্ট না হয়।

ব্যক্তিগতভাবে আমার ক্ষেত্রে কোনো কঠিন মুহূর্তে চোখ বন্ধ করলে কেবল আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন ভরা মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমার সফলতায় যেদিন তাদের মুখে রক্তিম হাসি ফুটেছিল সেই দিনটির কথা মনে আসে। জীবনকে একটু কাছ থেকে ভেবে দেখুন জীবন আসলেই অসাধারণ।

যে জীবন সৃষ্টিকর্তার মহিমায় আমরা পেয়ছি সে জীবনকে ধ্বংস করে দেওয়ার অধিকার আপনার বা আমার কারোর কি আছে?
আমাদের দেশে এখনো পাঁচটি মৌলিক নাগরিক অধিকার পূর্ণতা পায়নি, এখনো হাজার হাজার শিশু খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছে। নিশ্চয়ই সুদিন আসবে। তাহলে কিসের হতাশা! তাই এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার নিজের পরিবার ও নিজের সুন্দর জীবন নিয়ে একবার ভাবুন।

এমনও তো হতে পারে আজ আপনার দিন খারাপ যাচ্ছে কিন্তু পরবর্তী সকাল আপনার জন্য নিয়ে আসছে ভালো থাকার সম্ভাবনা। নিজেকে এবং নিজের পরিবার ও কাছের মানুষগুলোকে না ঠকিয়ে তাদের নিয়ে সুস্থ-সুন্দর জীবন গড়ার প্রয়াস নিয়ে জীবনযুদ্ধ জয়ের স্বপ্নে উজ্জীবিত হোন।

ফারহানা নওশীন তিতলী
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 
Electronic Paper